ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১

অতি মুনাফার কবলে ইলিশ

প্রকাশিত: ২০:২১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অতি মুনাফার কবলে ইলিশ

.

মাছে-ভাতে বাঙালি প্রবচনটি একদা খুব জনপ্রিয় হলেও এখন আর তা বলা যায় নামূল্যস্ফীতির প্রবল উপাতে জীবন যখন যায় যায়, দুবেলা ভাত-ডাল-শাক জোটানোও দুঃসাধ্য, তখন গরিব ও নিম্নবিত্তদের পাতে ইলিশ মাছ উঠবে সপ্তাহে বা পক্ষে না হোক, অন্তত প্রতিমাসে একদিন, সেটি কল্পনা করাও রীতিমত বিলাসিতাএর প্রধান কারণ, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার প্রবণতা

সারাদেশে এখন চলছে ইলিশের ভরা মৌসুম।  এ সময়ে অন্তত ইলিশ মাছের দাম কমার কথাবাস্তবে হয়েছে উল্টোঅবশ্য এর প্রধান কারণ জেলেরা নয়, বরং পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরাবাজারে ইলিশ বিক্রেতারা প্রতিকেজি ইলিশে মুনাফা করছেন ৭৫০ টাকা ও ততোধিকরাজধানীর একাধিক বাজারে এর প্রামাণ্য তথ্য পেয়েছেন ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাসরেজমিনে অভিযান চালিয়ে তারা দেখেছেন, খুচরা বিক্রেতারা পাইকারি বাজার থেকে প্রতিকেজি ইলিশ এক হাজার ৪৫০ টাকায় কিনে তা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন দুই হাজার ২০০ টাকায়মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার প্রবণতা ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম ভোক্তার ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখেছেন অতিমুনাফাখোর ব্যবসায়ীরাতদুপরি প্রতিবেশী দেশ ভারতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে মাত্র ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির খবরেই বিক্রেতারা প্রতিকেজি ইলিশের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনশটাকামড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে অচিরেই আসছে ইলিশ ধরার ওপর ২২দিনের নিষেধাজ্ঞাএই যেখানে অবস্থা, সেখানে গরিব ও মধ্যবিত্তদের পাতে ইলিশের টুকরো উঠবে কিভাবে? পাঠকের মনে রাখতে হবে যে, ইলিশ বিক্রির ওপর সরকারের কোনো করারোপ কিংবা ভ্যাট নেই

ইলিশ উপাদনে বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে রোল মডেল, এমনকি মস্য উপাদনেওচতুর্থ স্থান অধিকারী বাংলাদেশ তবু তো সামুদ্রিক মস্য সম্পদ আহরণে অনেক পিছিয়ে আছেসুবিশাল বঙ্গোপসাগরের বিপুল অর্থনৈতিক সীমানা থেকে এখন পর্যন্ত খুব কমই মস্য সম্পদ আহরিত হয়ে থাকেআগামীতে এই অফুরান সম্পদ আহরণ করতে পারলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে মস্য সম্পদেঅবশ্য ইলিশও প্রধানত সামুদ্রিক ও সমুদ্র উপকূলীয় মাছমোহনার মাধ্যমে ইলিশ মিঠা পানির নদ-নদীতে প্রবেশ করে থাকে প্রজনন মৌসুমেআর তখনই ধুম পড়ে যায় জাটকা তথা পোনা ইলিশ আহরণেরযে কোনো মূল্যে এটা বন্ধ করতে পারলে ইলিশের উপাদন বহুগুণ বাড়বে নিঃসন্দেহে

মনে রাখতে হবে, জাতীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ইলিশমোট দেশজ উপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি আসে ইলিশ থেকেআরও একটি শ্লাঘার বিষয় এই যে, ইলিশ উপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যতিরেকে অন্য ১০টি দেশেই কমেছে ইলিশের উপাদনএকমাত্র বাংলাদেশেই প্রতিবছর ইলিশের উপাদন বাড়ছে ৯-১০ শতাংশ হারেবিশ্বের ৬৫ শতাংশ ইলিশ উপাদিত হয় বাংলাদেশেদেশে মোট মস্য উপাদনের প্রায় ১১ ভাগই ইলিশউপকূলীয় মস্যজীবী সম্প্রদায়ের প্রায় পাঁচ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি জড়িতএছাড়াও ২০ থেকে ৯৫ লাখ লোক জড়িত পরিবহন, বিক্রি, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি ইত্যাদির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কাজেবাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম একটি অপরিহার্য উপাদান হলো ইলিশএর প্রযত্ন ও সুরক্ষার দায়িত্ব সকলেরদামও মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা বাঞ্ছনীয়

×