ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১

জাতীয় নির্বাচন

প্রকাশিত: ২০:২৯, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জাতীয় নির্বাচন

সম্পাদকীয়

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের ২১ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদের শপথ গ্রহণের পর দেশে স্বভাবতই একটি রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। এ সময় থানা-পুলিশের কার্যক্রম ছিল প্রায় স্থবির এবং সারাদেশে পুলিশ    বাহিনীর উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। দেশে সার্বিক পরিস্থিতি তথা শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় এ সময় এগিয়ে আসে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী।

এর পাশাপাশি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অংশগ্রহণ করে ছাত্র-জনতাও। আন্দোলনের কেন্দ্রে থাকা রাজধানীতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসতে শুরু করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকলাপও ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। তবে প্রশাসনের কিছু অংশ এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার সদস্যের পুলিশ বাহিনী এখনও রয়েছে এলোমেলো অবস্থায়। এই অবস্থায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে এগিয়ে এসেছে, যা ইতিবাচক অবশ্যই। 
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছিল। বাস্তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে সার্বিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কারের ওপর। এও সত্য যে, একটি রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ে দেশ চলে যায় সামরিক শাসনের অধীনে। ১৯৯০ সালে সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হলে গণতন্ত্র পুনর্প্রতির্ষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে নির্বাচনের মাধ্যমে।

২০০৭ সালে সামরিক বাহিনী আবার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করে। সমর্থন জানায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে। পরে ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার সরকার। এরপর গত ১৬ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে পাথরের মতো চেপে বসে স্বেচ্ছাচার তন্ত্র তথা একদলীয় শাসন। পর্যায়ক্রমে পরিকল্পিতভাবে একে একে ধ্বংস করা হয় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাবেক সরকারের পতন হলে স্বভাবতই ড. মুহাম্মদ ইউনূস অগ্রাধিকার দেন সর্বত্র সংস্কার কর্মসূচির ওপর। এর জন্য গঠন করা হয় ছয়টি কমিশন। যেমনÑ জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধান সংস্কার, পুলিশ প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কার ইত্যাদি। 
স্বীকার করতে হবে যে, সংস্কার কর্মসূচি একটি দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। যেগুলো দৃশ্যমান হতে সময় লাগবে। সে অবস্থায় কখন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা ছিল রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপও রয়েছে। এ বিষয়টি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

সেনাপ্রধান বলেছেন, আগামী ১৮ মাসে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে, সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়েছে সেনাবাহিনী। তাঁর মতে, এই সময়ের মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত। এও বলেছেন, সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয় বলে মনে করেন তিনি। এর জন্য সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করার জন্য একটি রূপরেখাও তুলে ধরেন। সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য অত্যন্ত ইতিবাচক এবং দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াসহ সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশের পথ উন্মুক্ত করবে বলেই প্রত্যাশা।

×