ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১

স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে কমিশন

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে কমিশন

সম্পাদকীয়

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন, যিনি নিজে একজন স্বনামধন্য কার্ডিয়াক সার্জন। সেই হিসেবে তিনি দেশের মানুষের চিকিৎসা ব্যয়ের বিষয়টি বিলক্ষণ জানেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর অকপটে তিনি তা স্বীকারও করেছেন গণমাধ্যমে। বলেছেন, রোগীদের আউট অফ পকেট এক্সপেনডিচারের কথা, যেখানে উঠে এসেছে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য শেষ সম্বল ভিটেমাটি বিক্রি করে দেওয়ার প্রসঙ্গ।

সে জন্য তিনি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝতে পেরেছেন বিষয়টি। স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন কিভাবে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ব্যয় কমানো যায়। ‘স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার : নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
২৬টি নাগরিক সংগঠনের মোর্চা এ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস বাংলাদেশ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যেখানে দেশের শীর্ষস্থানীয় জনস্বাস্থ্যবিদ, স্বাস্থ্য গবেষক, জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে বলা হয়, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারের যে সুযোগ এসেছে, তাকে কাজে লাগাতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে আমলাদের খবরদারি ও প্রাধান্য খর্ব করার দাবিও জানানো হয়।

এও বলা হয় যে, অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের জন্য যেসব কমিশন গঠন করেছে, সেখানে স্বাস্থ্যের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চালাতে হবে। উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ স্বাস্থ্য খাতের ৪৮টি সমস্যা তুলে ধরে সমস্যা উত্তরণে করণীয় কি, তা তুলে ধরেন। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার করতে পারে সরকার, রাজনীতিক ও ক্ষমতাসীনরা। নাগরিক সমাজ শুধু পরামর্শ দিতে পারে। সংস্কার করতে পারে না। সে অবস্থায় স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক সংস্কারে দরকার উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিশন।   
সম্প্রতি জনকণ্ঠে রাজধানীর কয়েকটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে সিরিজ সরেজমিন সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে প্রায় সর্বত্রই উঠে এসেছে বিপুল অনিয়ম-অব্যবস্থা, দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, রোগীদের হয়রানি এমনকি দালালের উপদ্রব, অ্যাম্বুলেন্স-ট্রলি পেতে চরম দুর্ভোগ ইত্যাদি প্রসঙ্গ। প্রয়োজনের তুলনায় কম জনবল, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীরা কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

একটি সুস্থ জাতি গড়ে তুলতে, এসডিজির গোলসমূহ শতভাগ অর্জন করতে, সর্বোপরি নির্বিঘেœ প্রত্যেক নাগরিকের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালগুলোতে আদর্শ ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। সে অবস্থায় স্বল্প ব্যয়ে ডাক্তারের পরামর্শসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পেলে প্রভূত উপকৃত হবেন দেশবাসী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক সেই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করবেন বলেই প্রত্যাশা।

×