ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১

নিষ্ঠুর অমানবিক

প্রকাশিত: ২০:৩২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নিষ্ঠুর অমানবিক

সম্পাদকীয়

প্রায় দেড় মাস আগে চট্টগ্রামের এক নির্জন সড়কে গান গেয়ে উল্লাস করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল শাহাদাত হোসেন নামের এক যুবককে। দুর্বৃত্তরা নির্দয়ভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে তাকে হত্যা করে চট্টগ্রাম নগরীর বদনা শাহ মাজারের সামনে ফেলে রেখে যায়। তখন অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে মামলা করেছিল নিহত যুবকের পরিবার। সরকার পতনের পর মাঝরাতে জনশূন্য সড়কে এ ঘটনা কারা ঘটিয়েছে, তা তখন জানা সম্ভব হয়নি।

রহস্যের কূলকিনারা করতে পারছিল না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। সেই ঘটনার একটি ভিডিও গত শনিবার ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে দেখা যায়, কয়েক যুবক মিলে এক তরুণকে চট্টগ্রামের নির্জন এক রাস্তার গোল চত্বরের দুটি স্টিলের পোলের সঙ্গে বেঁধে বেধরক পেটাচ্ছে। তাদের কয়েকজনের হাতে ছিল লাঠি। উল্লাস করে গান গাইতে গাইতে যুবকরা ভিডিও করছিল, কয়েকজন যুবকের মাথা হাতে তুলে দিচ্ছিল। কিন্ত তখন মারধরের শিকার ওই যুবক মাথা তুলতে পারছিলেন না। এমনকি তাকাতেও পারছিলেন না।

এই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তারের খবরও আছে। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে একই দিনে দেশের দুই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজনকে এবং বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে গরুচোর সন্দেহে। মানুষকে এভাবে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা কখনও কাম্য হতে পারে না। বিষয়গুলো শুধু মর্মান্তিকই নয়, রীতিমতো উদ্বেগজনক।
বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- অতীতেও অনেক ঘটেছে। সেই সঙ্গে অনেকের নিখোঁজ বা গুম হওয়ার ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ ধরনের অপসংস্কৃতি এখনো বন্ধ হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনিতে মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটার প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা বলেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণ করা হবে না। এ ধরনের হত্যাকা-ের জন্য উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকেও কাউকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। 
বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা অবশ্যই ফৌজদারি অপরাধ। গণপিটুনির ঘটনা সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করে। সাধারণত দৃষ্কৃতকারীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশের প্রচলিত আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে এসব ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটি ব্যক্তি নির্দোষ বলে প্রতীয়মান হওয়ার অধিকার রাখেন। তাছাড়াও প্রতিটি মানুষের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার সংবিধানে স্পষ্টভাবে স্বীকৃত।

তারপরও বিভিন্ন সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ না করে হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- পৃথিবীর কোনো দেশেই সংবিধানসমর্থিত নয়। বাংলাদেশের আদালতও এ ধরনের কর্মকা-ের ঘোর বিরোধী। সেই প্রেক্ষাপটে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- অবিলম্বে বন্ধ হবে বলেই প্রত্যাশা।

×