ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

কমলা-ট্রাম্প বিতর্ক

ড. মো. মোরশেদুল আলম

প্রকাশিত: ২০:৫২, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কমলা-ট্রাম্প বিতর্ক

কমলা ও ট্রাম্প বিতর্ক

করোনা অতিমারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজায় ইসরাইলি হামলা প্রভৃতি কারণে বিশ^জুড়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যুদ্ধ ও সংঘাত ছাড়াও বৈশি^ক উষ্ণতা নতুন এক সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশ^জুড়ে গণতন্ত্র এক কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে। তাই আমেরিকার এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কেবল দেশটির নাগরিকদের নিকট নয়, বিশে^র অন্য দেশগুলোর জন্যও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছে রয়টার্স, গার্ডিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো।

অনেকের মতে রাজনীতিতে নতুন ধারার পথ দেখাচ্ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কিন্তু ট্রাম্প এক অজনপ্রিয় ব্যক্তি। সম্প্রতি পেনসিলভানিয়ায় এক জনসভায় আকস্মিক হামলার শিকার হওয়ায় দেশে তার জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন ডেমোক্র্যাট দলের এশীয়-আমেরিকান কমলা হ্যারিস। দলের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন কুড়িয়েছেন তিনি।
আগামী নভেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবিসি টিভি চ্যানেলের প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে যোগ দিয়েছিলেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রায় ৯০ মিনিট ধরে চলা এই বিতর্কে হ্যারিসের আক্রমণাত্মক বক্তব্যের বিপরীতে ট্রাম্পকে রক্ষণাত্মক অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

কমলা হ্যারিস রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ট্রাম্পকে মুখোমুখি বিতর্কে গর্ভপাতের আইন, প্রেসিডেন্ট অফিসের জন্য তার ফিটনেস এবং তার অগণিত আইনি লড়াইয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে প্রচ- চাপে রেখেছিলেন। অভিবাসন, পররাষ্ট্রনীতি এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো বিষয় নিয়ে এই দুই প্রার্থীর মধ্যে বিতর্ক হয়েছে। তবে সেখানে সুনির্দিষ্ট নীতিগত বিবরণ ছিল খুব কম।

ট্রাম্পের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কর্মীদের প্রধান মার্ক শর্ট বলেন, ‘অর্থনীতি ও সীমান্ত নিয়ে বাইডেন-কমলার বিরুদ্ধে মামলার বিচারের বিষয়ে জোর দেওয়ার একটি সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন ট্রাম্প। তার পরিবর্তে তিনি কমলার ফাঁদে পা দিয়ে অভিবাসীরা আমাদের পোষা প্রাণী খাচ্ছে এমন অবান্তর দাবি করেছেন।’ দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বিতর্ক সরাসরি দেখেছেন ৬ কোটি ৭০ লাখ মানুষ।

রয়টার্সের সমীক্ষা অনুসারে ৫৩ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তারা মনে করেন বিতর্কে কমলা হ্যারিস জিতেছেন, ২৪ শতাংশ মনে করেন ট্রাম্প জিতেছেন। এই বিতর্কে কমলা ট্রাম্পকে চাপে রাখতে পেরেছেন, নিজের সমর্থকদের উচ্ছ্বসিত রাখতে পেরেছেন। তবে কিছু রিপাবলিকান এটা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ট্রাম্পকে এই বিতর্কে বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছে।

ট্রাম্প দাবি করেন তিনি জয়ী হয়েছেন। তাই আর কোনো বিতর্কে তিনি অংশ নিতে রাজি নন তিনি। কমলার সমাবেশগুলোতে সমর্থকদের ভিড় দেখে বরাবরই হতাশ ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে বড় সমাবেশ করেছি, যা রাজনৈতিক ইতিহাসে অবিশ^াস্য।’
যুক্তরাষ্ট্রের হফসট্রা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর টোমেকা এম রবিনসন বলেন, কমলা বিতর্কে জিতেছেন এবং এমনি এমনি যে জিতে গেছেন এমনটা নয়। ট্রাম্প সম্পর্কে রবিনসনের মন্তব্য হলো, রিপাবলিকান এ নেতা বিভিন্ন বিষয়ে নিজের অবস্থানে অটল থাকতে পারেননি। তিনি মনে করেন, অবৈধ অভিবাসী এবং গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে একই ধরনের আক্রমণাত্মক বক্তব্য না দিয়ে ট্রাম্পের উচিত ছিল প্রেসিডেন্ট হলে তার নীতিমালা কী হবে তা নিয়ে বলা।

তবে বোস্টন বিশ^বিদ্যালয়ের গণমাধ্যমবিষয়ক প্রফেসর ট্রামি আর ভিজিল বলেছেন, ট্রাম্পের দুর্বলতাগুলোকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন কমলা। তবে তিনি তার নীতিমালা সংক্রান্ত পরিকল্পনাগুলো সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি। এবারের ডিবেটের পরই ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে আরেকটি ডিবেটে অংশ নিতে চ্যালেঞ্জ জানান। ট্রাম্প প্রথমে বাইডেনের সঙ্গে টিভি বিতর্কে অংশ নেন। তখন বাইডেনই প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী ছিলেন।

সেই বিতর্কে বাইডেনের পারফরম্যান্স শোচনীয় ছিল বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এতে করে তিনি নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়ে কমলা হ্যারিসকে দলের প্রার্থী করেন। অ্যারিজোনায় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে একটি জনসভায় ট্রাম্প বলেন, যদি নভেম্বর মাসের নির্বাচনে তিনি জিততে পারেন তাহলে কর ছাঁটাই করবেন। সেক্ষেত্রে ওভারটাইমের ওপর কর তুলে নেওয়া হবে। এর আগে তিনি বলেছিলেন, টিপসের ওপর কোনো কর বসানো হবে না। সেই প্রতিশ্রুতি এত জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে, কমলাও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 
মে মাসে গার্ডিয়ানের এক জরিপে দেখা যায়, ৫৫ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন মার্কিন অর্থনীতি ছোট হয়ে আসছে। আমেরিকা অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে আছে। এজন্য বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে তারা দায়ী করছেন। ৩ জুলাই বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, দেশটির অর্থনীতি মারাত্মকভাবে গতি হারিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি মার্কিন নির্বাচনে বড় ধনের প্রভাব ফেলতে পারে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা আনতে না পারলেও ট্রাম্পের অতীতের ইতিহাসও ভালো ছিল না।

করোনা মহামারিতে যখন আমেরিকায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছিল তখন দেশটির অর্থনৈতিক মার্কেটেও আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। গ্যালপের এপ্রিল মাসের এক জরিপে দেখা যায়, আমেরিকা অভিবাসন, অর্থনৈতিক ও মূল্যস্ফীতির সমস্যার মধ্যে আছে। ট্রাম্পের আমলে মার্কিন অর্থনীতি এক জটিল সন্ধিক্ষণ পার করেছে। তার রাজস্ব কর্তননীতি প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক অঙ্গীকার পূরণ করতে পারেনি। বাজেট ঘাটতি তার সময় অনেক বেশি ছিল।

রাজস্ব ও বাণিজ্যিক চুক্তিগুলো কারখানায় কর্মসংস্থান ফিরিয়ে আনতে পারেনি। চীনের সঙ্গে যে বাণিজ্যযুদ্ধ ট্রাম্পের আমলে শুরু হয়েছিল বাইডেন প্রশাসনও তা অব্যাহত রেখেছে। বৈদ্যুতিক মান, ব্যাটারি ও সৌরসেলসহ আমেরিকার বিভিন্ন খাতকে রক্ষা করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। চীনা পণ্যে মার্কিন বাজার সয়লাব হওয়ায় আমেরিকার জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণœ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় এলে চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ প্রবল আকার ধারণ করতে পারে।

যদিও বাইডেন প্রশাসন বাণিজ্য যুদ্ধনীতি বজায় রেখে চলেছে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে নতুন অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারেন রিপাবলিকান এই প্রার্থী। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে চীন-মার্কিন বাণিজ্য বৈরিতা আরও জোরালো হবে। দুদেশের মধ্যে ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক সম্পর্কে বিচ্ছিন্নতা তৈরি করবে। আর কমলা হ্যারিস প্রেসডিন্টে নির্বাচিত হলে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যনীতির ক্ষেত্রে বাইডেনের নীতি অনুসরণ করতে পারেন। 
অনেক ইউক্রেনবাসী আশা করছেন যে, আমেরিকার আসন্ন নির্বাচনের ফলাফল ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সহযোগিতা করবে। তবে কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে, রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প মস্কোর প্রতি নমনীয় ভাব পোষণ করবেন।

আবার অন্যরা উদ্বিগ্ন যে, ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিসের নীতি অনুযায়ী ইউক্রেনের প্রতি সহায়তা যতই উল্লেখযোগ্য হোক না কেন, পৌঁছাতে বিলম্ব হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিকোলা ড্যাভিডিউকের মতে সবচেয়ে বড় আশঙ্কাটা হচ্ছে আমেরিকার নতুন প্রশাসন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করবে। ট্রাম্প দ্রুতই এই যুদ্ধের অবসান ঘটানোর কথা উল্লেখ করেছেন।

আমেরিকা যে পরিমাণ ইউক্রেনকে সহায়তা করেছে ট্রাম্প তার কঠোর সমালোচক। তাছাড়া রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে প্রশংসা করার ইতিহাস তার রয়েছে। ট্রাম্পের রানিংমেট জে ডি ভ্যান্স মনে করেন, আমেরিকার সহায়তা পাওয়ার পরও ইউক্রেন যদি তার ভূখ- জিততে না পারে তাহলে তাদের সহায়তা করে যাওয়ার ব্যাপারে মার্কিনিদের কোনো স্বার্থ থাকতে পারে না। তাই অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, তিনি ক্ষমতায় ফিরে এলে ইউক্রেনকে অনেক ছাড় দিতে বাধ্য করা হতে পারে।

ভ্যান্স বলেছেন, ওয়াশিংটনের উচিত রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের চেয়ে চীনকে মনোযোগের কেন্দ্রে রাখা। আমেরিকা সিনেটের একজন সদস্য হিসেবে ভ্যান্স ইউক্রেনকে অর্থায়নের বিরোধিতা করেছিলেন। বাইডেন প্রশাসনের অধীনে আমেরিকা ইউক্রেনের প্রতি অনেক নমনীয় ছিল। বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনের জন্য ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচিত হলে কমলা হ্যারিসের নীতিগুলো সম্ভবত বাইডেনের মতোই হবে এবং এটি অব্যাহত থাকার প্রত্যাশা কিছু লোকের জন্য স্বস্তিদায়ক। আবার অন্যরা এ নিয়ে শঙ্কিত যে, যুদ্ধ হয়তো চলতেই থাকবে।
৫ নভেম্বরের নির্বাচনে মার্কিন ভোটারদের মধ্যে ইউক্রেন ইস্যুটি মূল ভূমিকা পালন করবে না বলে কেউ কেউ মনে করেন। পররাষ্ট্র বিষয়ের মধ্যে মার্কিন ভোটাররা রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের চেয়ে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ, চীন ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বেশি চিন্তিত। সহানুভূতি যে সব সময় সক্রিয় সমর্থনে পরিণত হয় না তার বাস্তব অভিজ্ঞতা অনুভব করছে ইউক্রেন।

ওয়াশিংটনের অনেক পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারকদের নিকট ইউক্রেন যুদ্ধ শীর্ষ উদ্বেগের বিষয় হলেও অনেক মার্কিন ভোটারের তালিকায় বিষয়টি শীর্ষ অগ্রাধিকারে নেই। জুলাই মাসে করা পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে, তিন ভাগের এক ভাগ মার্কিন বিশ^াস করেন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন আমেরিকার স্বার্থের ওপর ব্যাপক হুমকি তৈরি করেছে।

ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান এই দুই পক্ষের ভোটাররা ব্যাপকভাবে ইউক্রেনকে সমর্থন করলেও এই যুদ্ধ আমেরিকার স্বার্থের ওপর কী প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে দুই পক্ষের ভোটারদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৬ জুলাই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। এর আগে জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের সঙ্গেও তার বৈঠক হয়।

গাজায় ইসরাইলি হামলায় বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় কমলা হ্যারিস উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এখনই গাজা যুদ্ধ বন্ধের সময় বলে তিনি নেতানিয়াহুকে জানান। ফিলিস্তিনের ভোগান্তি দেখে তিনি নীরব থাকবেন না বলেও জানান। মানবাধিকারকর্মীদের অভিযোগ, ইসরাইলকে নিঃশর্ত সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থনের নীতি থেকে সরে না এসে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে কমলা সেই সকল ভোটারকে টানতে পারবেন না। ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বাহিনীর নৃশংসতার দায় আমেরিকাকে বহন করতে হবে। 
আমেরিকার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেশটির ক্যাথলিক খ্রিস্টান ভোটারদের ভোটদানের আহ্বান জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমালোচনা থাকলেও অপেক্ষাকৃত কম খারাপ প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, অভিবাসীদের স্বাগত জানাতে অস্বীকার করা একটি গুরুতর পাপ এবং গর্ভপাত এক ধরনের হত্যাকা-। যারা অভিবাসীদের তাড়িয়ে দিচ্ছেন বা শিশুদের হত্যা করছেন উভয়েই আমার প্রাণের বিরুদ্ধে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশটিতে প্রায় ৫ কোটি ২০ লাখ ক্যাথলিক খ্রিস্টান রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে বৈশি^ক তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণে বাড়ছে। বিধ্বংসী দাবানল থেকে শুরু করে হারিকেন, বন্যা, দাবদাহ, অনাবৃষ্টিতে বিশ^ আক্রান্ত হচ্ছে। এর ফলে আগামীতে চরম সংকট দেখা দিতে পারে বলে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

আমেরিকায় বসে যখন গুতেরেস এ কথাগুলো বলছিলেন তখন সে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জলবায়ু সংকটকে ব্যাপকভাবে কোণঠাসা করে দেখা হচ্ছে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী নভেম্বরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের মধ্যে যে লড়াই হবে তাতে কেবল আমেরিকারই নয়, বৈশি^ক জলবায়ু নীতিতেও প্রভাব পড়বে।

আমেরিকাভিত্তিক জলবায়ু সংক্রান্ত গোষ্ঠী ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ অ্যাকশনের সরকার ও রাজনৈতিকবিষয়ক পরিচালক অ্যারিয়েল মগের বলেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে আমেরিকা। কাজেই বিভিন্নভাবে আমাদের এই গ্রহের তকদির আমেরিকান ভোটারদের ওপরই নির্ভর করছে। 
আমেরিকা গভীরতর রাজনৈতিক বিভাজন ও প্রশাসন ব্যবস্থা সংক্রান্ত অসন্তোষের সম্মুখীন।

এটি উল্লেখযোগ্যভাবে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক প্রভাবসহ একটি অস্থির নির্বাচনী প্রতিযোগিতার চিত্রকেই উপস্থাপন করে। রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ট্রাম্প আধুনিক প্রেসিডেন্সির রাজনীতিতে তার প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অভিনব আইন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। ইউক্রেনে বিদ্যমান যুদ্ধ, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাসের যুদ্ধ, আফগানিস্তান থেকে ২০২১ সালে সৈন্য প্রত্যাহার এবং চীনের সঙ্গে বৃহৎ শক্তির উত্তেজনা বৃদ্ধির মতো প্রধান বিদেশনীতি সংক্রান্ত বিষয়গুলো ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক মঞ্চে মার্কিন আমেরিকার ভূমিকা এবং তার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির গতিপথের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। বাইডেন প্রশাসন কঠোর সীমান্তনীতি ছাড়াই ইউক্রেনকে সহায়তা, ইসরাইল-গাজা দ্বন্দ্বের প্রতিবাদ এবং অভিবাসন নীতি সংস্কার রিপাবলিকান দলের বাধাসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।

আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যাপারে মধ্যপ্রাচ্যও নিবিড়ভাবে নজর রাখছে। গাজা যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সমালোচকদের সন্দেহ ইচ্ছাকৃতভাবেই এই যুদ্ধকে মার্কিন নির্বাচনের পর পর্যন্ত টেনে নিতে চায় নেতানিয়াহু। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে হ্যারিসের চেয়ে তিনি ইসরাইলের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল হবেন। কিন্তু কমলা ইঙ্গিত করেছেন ইসরাইলের ওপর বাইডেনের চেয়ে সম্ভবত তিনি কঠোর হবেন।

তবে আমেরিকার নাগরিকরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনো নারীকে দেখতে চান না এমন ধারণা প্রচলিত রয়েছে। এর আগে আমেরিকার সাবেক ফার্স্টলেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ডেমোক্র্যাট দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে ২০১৬ সালে নির্বাচন করেছিলেন। জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও এবং বেশি ভোট পেয়েও হিলারি ক্লিনটন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ট্রাম্পের নিকট ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে হেরেছিলেন। এখন বিশ^বাসী দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন কে হচ্ছেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

×