ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

মারুফ রায়হান

প্রকাশিত: ২০:৩২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঢাকার দিনরাত

সুদূর পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত হলে ঢাকায় পাহাড়িরা পথে নামেন

সুদূর পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত হলে ঢাকায় পাহাড়িরা পথে নামেন। সমতলের মানুষ বাঙালিদেরও মন খারাপ হয়। যারা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, যারা সম্প্রীতিতে বিশ^াসী, তারা কখনোই বাঙালি-পাহাড়ির সংঘাত চান না।  দীঘিনালায় পাহাড়িদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র জনতা। শুক্রবার ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র জনতা’ ব্যানারে শতাধিক মানুষ শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এর আগে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে তারা সমাবেশ করেন

যারা সুযোগসন্ধানী তাদের জন্যে দুঃসংবাদ। ঢাকার সড়কে ট্রাফিক আইন অমান্যের জন্য অভিযান শুরু হয়েছে। শুক্রবার দিনভর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ৩০৩টি মামলা ও ১২ লাখ ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া অভিযানকালে ৩২টি গাড়ি ডাম্পিং ও ২০টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।

হাঁসফাঁস সেপ্টেম্বর
সেপ্টেম্বরের শেষ মানে আশি^নের শুরু। এ সময়ে অন্তত হাঁসফাঁস গরম পড়ে না। কখনো কখনো প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এবারের সেপ্টেম্বরের শেষটা ব্যতিক্রম। গত কয়েকদিন ভ্যাপসা গরমে নাকাল ছিল জনজীবন। ছিল তাপপ্রবাহের ভোগান্তি। অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টির দেখা মিলেছে শনিবার।  সারা দেশ যেন খাঁ খাঁ রোদে পুড়ছে। সকাল থেকে শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত প্রচণ্ড গরমের অনুভূতি থাকছে। গত মে মাসের পর সারাদেশে একযোগে এত গরম পড়েনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, রবিবারও দেশজুড়ে মাঝারি মাত্রার এই তাপপ্রবাহ চলতে পারে। আগামী সোমবার নাগাদ বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। বর্ষার শেষ সময়ের এই প্রচণ্ড গরমকে আবহাওয়ার ব্যতিক্রমী আচরণ বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। আর সপ্তাহ দুয়েক পরে সারাদেশ থেকে মৌসুমি বায়ু বিদায় নেওয়ার কথা।

এ সময়ে মৌসুমি বায়ু শক্তিশালী হয়ে আকাশে মেঘ বেড়ে যায়। তাপমাত্রাও কমে আসে। সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের বেশিরভাগ এলাকার গড় তাপমাত্রা থাকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস; কিন্তু আজকাল দেশের বেশির ভাগ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকছে। প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে প্রচুর ঘাম ঝরছে। এ ধরনের আবহাওয়ায় প্রচুর পানি পান করা চাই। বেশি সমস্যা হলে ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে। ঢাকায় ১২০ টাকার নিচে ডাবের দেখা পাওয়া মুশকিল।

রাজধানীর পাহাড়ি
সুদূর পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত হলে ঢাকায় পাহাড়িরা পথে নামেন। সমতলের মানুষ বাঙালিদেরও মন খারাপ হয়। যারা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, যারা সম্প্রীতিতে বিশ^াসী, তারা কখনোই বাঙালি-পাহাড়ির সংঘাত চান না। 
দীঘিনালায় পাহাড়িদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র জনতা। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র জনতা’ ব্যানারে শতাধিক মানুষ শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এর আগে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে তারা সমাবেশ করেন। এ সময় তারা পাহাড়িদের বাড়ি-ঘর, দোকান-পাটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান। পরে তারা মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ের দিকে যান। প্রায় ২০ মিনিট তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন।
পাপড়ি চাকমা বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে হামলার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। সমাবেশ থেকে হামলায় জড়িতদের বিচার ও পাহাড়ে সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি আমরা।’ নিপ্পন চাকমা বলেন, ‘আমরা যখন আমাদের অধিকার আদায়ে কথা বলি, তখন আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলা হয়। আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী নই। আমাদের ওপর আঘাত এলে অস্তিত্ব রক্ষায় আমরা বসে থাকব না।’
খবরে প্রকাশ, বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে মামুন নামের এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল বের করে দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে লারমা স্কয়ারে আগুন দেওয়া হয়। এতে পুড়ে যায় অন্তত ৬০টি দোকান।

‘বুক পেতেছি, গুলি কর’

ঢাকার পান্থপথে অবস্থিত দৃক ভবনে ‘বুক পেতেছি গুলি কর’ শিরোনামের আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখতে গিয়েছিলাম বৃহস্পতিবার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আলোকচিত্রীদের ক্যামেরায় ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের স্থিরচিত্র নিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রদর্শনী। সেখানে লাশ, পতাকা, পুলিশের নির্যাতন, বিক্ষোভ থেকে শুরু করে পোষা প্রাণীর আতঙ্কিত হওয়ার দৃশ্যও উঠে এসেছে। দৃকের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম বলেন, ‘একটি বই প্রকাশের পাশাপাশি ছবি নিয়ে একটি ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’

জুমায় মসজিদে সংঘর্ষ
মসজিদকে আমরা বলে থাকি আল্লাহর ঘর, যেখানে সৃষ্টিকর্তার নির্দেশে নামাজ পড়া হয়। মানুষের মসজিদে প্রবেশের কথা নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো ফটকের বাইরে রেখে এসে। এখানে থাকবে ¯্রষ্টার প্রতি সমর্পণ, নিভৃত প্রার্থনা। অথচ আমরা কী দেখলাম? দুই দল মুসল্লির মধ্যে হানাহানি!
বায়তুল মোকাররম বাংলাদেশের মুসলিমদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এখানে দূর-দূরান্ত থেকেও মুসলিমরা জুমার নামাজ আদায় করতে আসেন। শুক্রবারও মানুষ এসেছিলেন নামাজ আদায় করতে। কিন্তু প্রায় দুই মাস পর মসজিদের আগের খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমীন জুমার নামাজ পড়াতে এলে তার অনুসারীদের সঙ্গে মুসল্লিদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় মুসল্লিসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। মসজিদের কয়েকটি দরজা ভাঙচুর করা হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

শুক্রবারেও মেট্রোরেল 
মেট্রোরেল চালুর পর কে ভেবেছিল যে ছুটির দিন শুক্রবারেও চলবে মেট্রেরেল! নগরবাসীর জন্য আনন্দের কথা যে এখন থেকে শুক্রবারেও চলছে উত্তরা টু মতিঝিল দ্রুতগতির পরিবেশবান্ধব যান মেট্রোরেল। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও শুক্রবার মেট্রোরেলে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। শুক্রবার মেট্রোরেল চালু করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন যাত্রীরা।

এদিকে ৬৪ দিন বন্ধ থাকার পর শুক্রবার থেকে মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশনও চালু করা হয়েছে। এখন থেকে সপ্তাহের সাত দিনই চলবে রাজধানীর জনপ্রিয় গণপরিবহন মেট্রোরেল। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মেট্রোরেল চলবে বেলা ৩টা ৩০ মিনিট থেকে (উত্তরা উত্তর স্টেশন) রাত ৯টা ৪০ মিনিট (মতিঝিল স্টেশন) পর্যন্ত। শুক্রবার মেট্রোরেল চলায় সপরিবারে বেড়ানোর সুযোগ বাড়ল। 

১২২ দিন পর
দীর্ঘ ১১২ দিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে নির্যাতন-নিপীড়নের মতো কোনো ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেই প্রত্যাশার কথাও বলেছেন তাঁরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের মধ্যে ৫টি বিভাগ ছাড়া সব বিভাগে ক্লাস হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানান প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, সকাল আটটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ক্লাস শুরু হয়। বেশির ভাগ বিভাগে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। অবশ্য প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস এখনো শুরু হয়নি। উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে হামলা সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে বিশ^বিদ্যালয় বন্ধ ছিল।

মাজারে হামলার ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ
দেশব্যাপী মাজারে মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে ভাববৈঠকির আয়োজনে রবিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয় বাংলার আশেকানি ও ভাবের ধারার গান। পরিবেশন করেন দেশবরেণ্য শিল্পী ও পালাকারগণ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিলেন আলেয়া বেগম, সুনীল কর্মকার, ফকির আবুল সরকার, ছোট আবুল সরকার, শাহ আলম সরকার, মুক্তা সরকার, ইমন তালুকদার, রুমা সরকার, আশরাফ উদাস, রাজ্জাক পরবাসী, খাদিজা ভান্ডারি, জনি বাউল, ওমর আলী, কোহিনূর আক্তার গোলাপি, আরিফ বাউল, সুধাম আনন্দ, বাউল শফি মণ্ডল, মানিক দেওয়ানসহ আরো অনেকে। এ ধরনের আসরের মধ্য দিয়ে আমাদের গণ-সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা ও বোঝাপড়া যে পরিষ্কার হয়, সেটি বলাই বাহুল্য।
কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে মাজার ভাঙার মতো ফৌজদারী অপরাধ করে দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে দেশবিরোধী কার্যকলাপ নস্যাৎ করে দেয়ার আহ্বান জানানোই এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য। বিপুল সংখ্যক মানুষ অনুষ্ঠানটি দেখেন। একটি পত্রিকা ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচার করে। এছাড়াও অনেকে ফেসবুকে লাইভ দেয়ায় বহুসংখ্যক মানুষ অনুষ্ঠানটি দেখার সুযোগ পান। 

আলোচনার শীর্ষে গণপিটুনিতে মৃত্যু
মানুষ আর মানুষ নেই, এমন হিং¯্র হয়ে উঠেছে যে মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে পিটিয়ে মারার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের মনে বেশি দাগ কেটেছে প্রধানত এর নৃশংসতার স্বরূপ দেখে। একজন অপ্রকৃতিস্থ, সোজা কথায় মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে মোবাইল চোর সন্দেহে দলবদ্ধভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো! আবার চরম রসিকতা করে তাকে ভাতও খাওয়ানো হলো মারপিটের মধ্যবিরতিতে। উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে যারা লেখাপড়া করতে আসেন, তাদের ভেতর এমন মানসিকতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে কিভাবে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে (এফ এইচ হল) চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকেকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আটজনকে শনাক্ত করেছে হল প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি। তাঁরা সবাই ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
শনাক্ত আটজনের মধ্যে ছয়জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা শুক্রবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত বুধবার রাতে এফ এইচ হলের অতিথিকক্ষে স্টাম্প দিয়ে দফায় দফায় পিটিয়ে হত্যা করা হয় তোফাজ্জল হোসেন নামের ওই যুবককে। ঘটনার পরদিন সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন। সেদিন রাত ১১টায় কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই মামলায় বৃহস্পতিবারই প্রক্টরিয়াল টিমের সহযোগিতায় এফ এইচ হলের ছয় ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সংশ্লিষ্টসূত্রগুলো বলছে, ছয় শিক্ষার্থীর জবানবন্দি অনুযায়ী তোফাজ্জল হোসেন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন ১৫ থেকে ২০ জন। তাঁরা সবার নাম প্রকাশ করেছেন। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, চোর সন্দেহে তিন দফায় তোফাজ্জলকে মারধর করা হয়।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ছয় শিক্ষার্থীর সবাই বলেছেন, ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে ছাত্রদের ছয়টি মুঠোফোন ও মানিব্যাগ চুরি হয়েছিল। তোফাজ্জল সেদিন রাত ৮টার দিকে হলের ফটক দিয়ে মাঠের ভেতরে যান। তখন কয়েকজন শিক্ষার্থী চোর সন্দেহে তাঁকে আটক করে হলের অতিথিকক্ষে নিয়ে যান। পরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাঁকে স্টাম্প দিয়ে মারধর করা হয়। এরপর তাঁকে হলের ক্যানটিনে নিয়ে রাতের খাবার খাওয়ানো হয়। খাওয়া শেষে আবার তাকে হলের অতিথিকক্ষে এনে ব্যাপক মারধর করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
তিন ধাপে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী তোফাজ্জলকে মারধরে জড়িত। জবানবন্দিতে ওই ছয় শিক্ষার্থী তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবার নাম প্রকাশ করেছেন। আসামিরা বলেন, সেদিন অতিথিকক্ষে মারধরের পর রাত ১২টার দিকে হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক তোফাজ্জলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তারা জানতে পারেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তোফাজ্জল মারা গেছেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল ফজলুল হক হল থেকে ছয় শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক সামিনা লুৎফা নিত্রা গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মব ভায়োলেন্স বা গণসহিংসতায় একজন অপরাধী মনে করে, একটা গণপিটুনি চলছে এবং এর মাঝে দুটো পিটুনি দিয়ে গেলে খুব বেশি অপরাধ হবে না এবং ধরা পড়বে না সে। এগুলো নিরসনের একমাত্র উপায় হচ্ছে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা গেছে। তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে পারলে একটা বার্তা  যাবে যে এগুলো করা যাবে না এবং করলে ফল ভোগ করতে হবে।’

২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

[email protected]

×