ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১

নদ-নদীর সুরক্ষা

প্রকাশিত: ২০:২৭, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নদ-নদীর সুরক্ষা

সম্পাদকীয়

মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে নদ-নদীর সম্পর্ক সুপ্রাচীন ও গভীর। নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো ও বৃহৎ সভ্যতাগুলো। বাংলাদেশের বুক চিরেও ছোট বড় অনেক নদ-নদী বয়ে গেছে, যেগুলো এক সময় ছিল যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রা সমুচ্চ রাখাসহ কৃষিকাজের সেচের প্রধান উৎস হিসেবেও কাজ করে আসছে নদীগুলো।

মটির উর্বরতা বৃদ্ধির প্রধান নিয়ামক হিসেবে পলিমাটির জোগান দিয়ে থাকে নদী। বর্তমানে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদী দিন দিন অবহেলা ও ভোগদখলে মৃতপ্রায়। এমতাবস্থায় শনিবার বিশ^ নদী দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের অংশ হিসেবে নদীগুলোকে দূষণমুক্ত ও দখলমুক্ত করতে হবে। এ লক্ষ্যে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হবে। তবে এক্ষেত্রে জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন। 
নদী ভরাট, শিল্পায়ন ও উন্নয়নের নামে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ ও অবৈধ দখলের পাশাপাশি কলকারখানার বর্জ্য, জাহাজের তেল, নগরের আবর্জনা ইত্যাদি নদীতে ফেলে নদীকে দূষিত করছে অনেকেই। ফলে, পরিবেশ দূষণ ঘটছেই। বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘন ঘন আবির্ভাব ঘটছে, যা আগে এত কাছাকাছি সময়ে কখনো ঘটেনি।

নদীর পাড়ে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে নদীপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে, পাল্টে যাচ্ছে কোনো কোনো নদীর গতিপথ। আবার অনেক নদ-নদী যৌবন হারিয়ে পরিণত হচ্ছে মরা খালে। নদী গবেষকদের মতে, নদী কখনো একা মরে না। নদীর মৃত্যু হলে পাড়ের জনপদও একটু একটু করে মরতে শুরু করে। মানুষসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর জীবনে নদীদূষণের প্রভাব ভয়াবহ। এর ওপর কঠিন বর্জ্য মিশে নদীকে দূষিত করে জলজ প্রাণী ও মানুষের নানামুখী ক্ষতি সাধন করছে।

নদীতে পলিথিন ও প্লাস্টিক ফেলার কারণে জীববৈচিত্র্যসহ মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সারাদেশেই নদ-নদীর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। নদী ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাও মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে চলেছে।  বিভিন্ন সময় নদ-নদী খননের কাজ হয়। কোথাও কোথাও খনন করা বালি ঠিকমতো অপসারণ করা হয় না। ফলে, খনন করা স্থানেই আবার চর জেগে উঠতে দেখা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও খনন কাজ শেষ হয় না। প্রশ্ন ওঠে কাজের মান নিয়েও।

ব-দ্বীপ অঞ্চলের নদীগুলোর ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক গুরুত্ব রয়েছে। নদী বাঁচলে বাঁচবে দেশÑ কথাটি যেন আমাদের কৃষিপ্রধান দেশের ক্ষেত্রে অধিক প্রযোজ্য। সেজন্য দেশের নদী রক্ষায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও বেশি গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। নদী খননের কাজ যাতে মানসম্মত হয়, তাও নিশ্চিত করা চাই। একই সঙ্গে নদীর ওপর অত্যাচার বন্ধ করা সময়ের দাবি।

দেশে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেজন্য প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সর্বোপরি, দেশের নদ-নদীর সুরক্ষায় দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানো আবশ্যক।

×