ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১

স্বাধীন বিচার বিভাগ

-

প্রকাশিত: ২০:২৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্বাধীন বিচার বিভাগ

সম্পাদকীয়

অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের প্রায় সর্বত্র সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্বাধীন ও স্বচ্ছ বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর। এরই প্রতিফলন দেখা গেছে শনিবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সারাদেশের অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে প্রদত্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমদের অভিভাষণে। তিনি বলেছেন, বিগত বছরগুলোয় বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।

ন্যায়বিচারের মূল্যবোধকে বিনষ্ট ও বিকৃত করা হয়েছে। শঠতা, বঞ্চনা, নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বিচার বিভাগকে। এতে বিচার বিভাগের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতসহ বিচারাঙ্গনের প্রায় সর্বত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি ন্যায়বিচারের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তদুপরি টপ টু বটম প্রায় সর্বত্র প্রাধান্য লাভ করেছে অনিয়ম-অব্যবস্থা-দুর্নীতি। বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরে এটি হয়েছে অনেক বেশি। বিচার বিভাগের এহেন সংকট ও দুরবস্থা থেকে অবিলম্বে বেরিয়ে আসার জন্য তিনি একটি সুচিন্তিত রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন। 
প্রধান বিচারপতি বলেন, স্বাধীন বিচার বিভাগের অন্যতম অন্তরায় নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে কার্যকর রূপে পৃথক না করা। এর কুফল গত ১৫ বছর ধরে প্রায় সবাই ভোগ করেছেন। এর জন্য জরুরি বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভা থেকে পৃথক ও স্বাধীন করা। স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক।

মনে রাখা দরকার, শাসকের আইন নয়, বরং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করাই বিচার বিভাগের মূল দায়িত্ব। বর্তমানে বিচার বিভাগ সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে কাজ করবে। ফলে, বিচার বিভাগের সর্বত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে এবং সর্বস্তরের মানুষ ন্যায়বিচার পাবে।

ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে যথাসময়ে যেন দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হয়, তা প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এও বলেন, দেশে যেন আর কোনোদিন ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ ফিরে না আসতে পারে, সেজন্য সর্বদা সচেষ্ট ও সক্রিয় থাকতে হবে বিচার বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের।
উল্লেখ করা আবশ্যক, দেশের অধিকাংশ জুডিসিয়াল কর্মকর্তা এবং আইনজীবীই সৎ ও কর্তব্যনিষ্ঠ। মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক অসৎ-দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারপতি ও আইনজীবীর জন্য মাঝে মধ্যে জুডিসিয়ারি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সবার জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং যথাসময়ে বিচারকার্য সমাপ্ত করা সময়ের অনিবার্য দাবি। দ্রুত মামলা জটের সংখ্যাও কমিয়ে আনা বাঞ্ছনীয়। বর্তমানে প্রায় ৪২ লাখ মামলা রয়েছে  নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

এর জন্য প্রধানত দায়ী বিচারকের স্বল্পতা এবং প্রয়োজনীয় এজলাসের স্বল্পতা। কেননা, বিলম্বিত বিচারে ভুক্তভোগী বঞ্চিত হয়ে থাকেন ন্যায়বিচার প্রাপ্তি থেকে। এর পাশাপাশি সারাদেশের আদালতগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নতুন বিচারপতি নিয়োগেও বর্তমান সরকার আন্তরিক ও সচেষ্ট। আদালত প্রাঙ্গণে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন অঞ্চলের শত শত বিচারপ্রার্থী প্রতিদিন ভিড় করছেন আদালতে।

জমি নিয়ে বিরোধ, নারী নির্যাতন ও মাদকদ্রব্য নিয়ে বেশি মামলা হয়, অথচ সেই হারে বিচারক নেই। ফলে, মামলা জট হচ্ছে। দেশে আইনের শাসন পাকাপোক্ত করার জন্য প্রয়োজন মামলাজট নিরসন এবং বিচারব্যবস্থা ঢেলে সাজানো তথা সংস্কার। বর্তমান প্রধান বিচারপতি পর্যায়ক্রমে তা করতে সক্ষম হবেন বলেই প্রত্যাশা।

×