ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১

বিশ্ব আলঝেইমার দিবস

-

প্রকাশিত: ২০:২৯, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিশ্ব আলঝেইমার দিবস

সম্পাদকীয়

প্রতিটি পরিবারেই এক বা একাধিক প্রবীণ সদস্য থাকেন। স্বাভাবিক জাগতিক নিয়মে আমরাও প্রত্যেকেই একদিন প্রবীণ হব। এ কথা স্মরণে রাখলে আমরা পরিবারের প্রবীণদের প্রতি বিশেষ যতœশীল থাকব। বয়সের কারণেই নানা রোগব্যাধিতে ভুগে থাকেন পরিবারে অনেকটা একা হয়ে পড়া প্রবীণ ব্যক্তি। কিছু রোগ আছে যা প্রবীণ ব্যক্তিকে আরও বেশি বিপন্ন করে তোলে। এ সব রোগের ভেতর বিস্মৃতির রোগ অন্যতম।

মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত নিঃশব্দ ঘাতক রোগ আলঝেইমার। সাধারণত বয়স্করা এ রোগের শিকার হন। এতে আক্রান্তরা সব ভুলে যেতে থাকেন। রোগটির তীব্রতা বেড়ে গেলে একজন মানুষের স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। দেশে আনুমানিক ১২ লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগে আক্রান্তের ৮০ শতাংশই জানেন না, তারা আলঝেইমারে ভুগছেন। ফলে, ভুলে যাওয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর অধিকাংশই চিকিৎসার বাইরে থেকে যান। অথচ শুরুতে চিকিৎসা নেওয়া হলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
গত শনিবার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে বিশ্ব আলঝেইমার দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য– ‘ডিমেনশিয়া নিয়ে কাজ করার এখনই সময়।’ স্নায়ুতন্ত্রের বিশেষজ্ঞদের মতে, আলঝেইমারে আক্রান্তদের মধ্যে ছোটখাটো নানা জিনিস ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কোনো কোনো সময় পরিচিত মানুষ বা নিজের সন্তানের নামও ভুলে যান। কিন্তু তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় বোঝা যায় না যে, ব্যক্তিটি আলঝেইমারে আক্রান্ত।

তাদের দ্রুত স্নায়ুতন্ত্রের বিশেষজ্ঞের কাছে নিতে হবে। অনেক দেশেই এই রোগের উন্নত চিকিৎসা রয়েছে। যদিও এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে। বিশ্ব আলঝেইমারস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, সারা পৃথিবীতে সাড়ে পাঁচ কোটির বেশি মানুষ আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত। ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ১৫ কোটিতে পৌঁছবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতি সেকেন্ডে নতুন করে ৬৮ জন আক্রান্ত হচ্ছে এতে।

আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১২ লাখ মানুষ স্মৃতিভ্রংশ রোগে ভুগছেন। ২০৫০ সালের মধ্যে যা ২২ লাখ ছাড়াবে।
আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র এবং পরিবারের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রবীণরা আজও চরম বৈষম্যের শিকার। যে কারণে এই রোগে আক্রান্তের অধিকাংশ শনাক্তের বাইরে। আলঝেইমার নিয়ন্ত্রণে প্রবীণদের প্রতি যতœবান হওয়া জরুরি। তাদের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সবাইকে নজর দিতে হবে।

আর্থসামাজিক কাঠামো শক্তিশালী করার মাধ্যমে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত প্রবীণদের সার্বিক সহায়তা ও পরিচর্যা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারকে উদ্ভাবনী উপায় খুঁজে বের করতে হবে। আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সেক্রেটারি জেনারেল আজিজুল হক প্রবীণদের ভুলে যাওয়া রোগের ঝুঁকি কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, বুদ্ধির চর্চা, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা চাই। দুঃখজনক হলো, পরিবারের প্রবীণ ব্যক্তি আলঝেইমার বা পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হলে যেন পরিবারের বোঝা হয়ে ওঠেন। তাদের সুচিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা রাখা আবশ্যক। বিশ^ আলঝেইমার দিবস আমাদের আরও দায়িত্বসচেতন হওয়ার বার্তা দেয়।

×