ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১

শান্তি ও সম্প্রীতি কাম্য

-

প্রকাশিত: ২০:২৮, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শান্তি ও সম্প্রীতি কাম্য

সম্পাদকীয়

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রাম আবারও অশান্ত ও অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। গত বুধবার খাগড়াছড়ি সদরে কথিত মোটরসাইকেল চুরিকে কেন্দ্র করে মো. মামুন নামের এক বাঙালি যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর পরেই সেখানকার পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে বাড়তে থাকে উত্তেজনা। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, বাড়িঘর-দোকানপাট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি। ক্ষয়ক্ষতি হয় উভয় পক্ষেই।

বৃহস্পতিবার রাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে ঘটে গোলাগুলির ঘটনা। সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় নিহত হন ৩ জন, আহত অন্তত ১৫ জন। এর রেশ ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী জেলা রাঙামাটিতেও। সংঘাত-সংঘর্ষ-সহিংসতায় এই দুই জেলায় চারজন নিহত এবং কমপক্ষে ৮০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য এই দুই জেলায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে চলছে অবরোধ কার্যক্রম।

দুই জেলায় সেনা বিজিবি ও পুলিশ বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী    পাহাড়ি-বাঙালি নির্বিশেষে সবাইকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। তবু উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরাজ করছে উত্তেজনা, আতঙ্ক ও শঙ্কা। পরিস্থিতি এখনো থমথমে। 
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। শনিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিন এই দুই জেলা পরিদর্শন করেছেন। সার্বিক পরিস্থিতি ও সহিংসতার কারণ নির্ণয়ে গঠন করা হয়েছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি।

স্থানীয় পর্যায়েও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনের সঙ্গে মতবিনিময় চলছে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি সম্প্রতি ও  সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার জন্য। আমাদের প্রত্যাশা, সব পক্ষের মধ্যে অচিরেই শুভবুদ্ধি জাগ্রত হবে এবং পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে প্রবাহিত হবে শান্তির সুবাতাস। আশার কথা এই যে, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে সংঘাত-সহিংসতার প্রতিবাদ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, বান্দরবানসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা হয়েছে। এসব সমাবেশ থেকেও উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে অবিলম্বে পাহাড়ি জনপদে সংঘাত বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য।
বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যটনের এখন ভরা মৌসুম। দেশে যে কয়েকটি অন্যতম আকর্ষণীয় এবং অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম তিন পার্বত্য জেলাÑ রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি। উঁচু-নিচু পাহাড়-টিলা, নিবিড় অরণ্যানী, অগণিত ঝরনা ও ছড়া সুশোভিত তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটনের ভরা মৌসুমে এবার দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

জঙ্গি হুমকি ও হামলার কালো অপচ্ছায়া তো আছেই। ফলে তিন পার্বত্য জেলায় যেসব পর্যটনকেন্দ্র ও স্পট রয়েছে সেসব স্থানে ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। স্বভাবতই বিপুল লোকসানের সম্মুখীন হতে হচ্ছে পর্যটনসংশ্লিষ্টদের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে শান্তি প্রতিষ্ঠায়। তবু দেশীয় ট্যুরিস্ট অপারেটর, পর্যটন কেন্দ্রের মালিক ও কর্মচারীরা রয়েছেন চরম এক অনিশ্চিত অবস্থায়। জনজীবনেও বিরাজ করছে শঙ্কা। সে অবস্থায় যত তাড়াতাড়ি সেখানে সংঘাত-সহিংসতা বন্ধ হবে ততই মঙ্গল উভয় সম্প্রদায়ের জন্য। সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় অনতিবিলম্বে সেখানে শান্তি ও সম্প্রীতি ফিরে আসবে বলেই প্রত্যাশা।

×