ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

গরিবের আমিষ

প্রকাশিত: ২১:১১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গরিবের আমিষ

সম্পাদকীয়

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমেনি। গরিবের কষ্ট বাড়ছে। শুধু বিত্তহীন বা স্বল্পবিত্তের মানুষের কথাইবা বলি কেন, মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছেও মাস এনে মাস পার করা সংকটজনক হয়ে উঠেছে। গরিবের আমিষ বলা হয় ডিম ও মসুর ডালকে। এ দুটি খাদ্যপণ্যের দামও বেড়েছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে মাত্র কয়েকদিন আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ডিম ও মুরগির দর নির্ধারণ করে দিয়েছে।

কিন্তু উৎপাদনকারী থেকে খুচরা ব্যবসায়ী কেউই মানছেন না বেঁধে দেওয়া দাম। তাতে আমিষজাতীয় খাদ্যপণ্য দুটি আগের বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। দাম বাড়ার ব্যাপারে খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে এক পক্ষ দোষ চাপাচ্ছে আরেক পক্ষের ওপর। এমনটি কি প্রত্যাশিত ছিল? ব্যবসায়ীরা বলছেন, দর নির্ধারণের আগে সরকার স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করেনি।

উৎপাদন না বাড়িয়ে দর নির্ধারণ করলে তা বাস্তবায়ন হবে না। আবার কেউ বলছেন, বর্তমান দামের চেয়ে কম দরে বিক্রি করলে উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাতে খামারিদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপপরিচালক রেজা আহমেদ খানের বক্তব্য উদ্ধৃতিযোগ্য। তিনি বলেন, ‘আমরা খাতসংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ডিম ও মুরগির একটা যৌক্তিক দাম প্রস্তাব করেছি। বাজারে সরবরাহ ও চাহিদার তারতম্যে এ দামে সামান্য কিছু পার্থক্য হতে পারে। তবে এসব পণ্যের উৎপাদন খরচ কমানো গেলে দাম এমনিতেই কমে আসবে।’

মুরগির দাম বাড়ার ব্যাপারে বরাবরই একটি যুক্তি দেওয়া হয়ে থাকে। সেটি হলো মুরগির খাবারের দাম। দেশে ফিড উৎপাদনকারী কারখানা আছে প্রায় সাড়ে ৩০০টি। উৎপাদনকারীরা বলছেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কাঁচামাল আমদানির ব্যয় বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পোল্ট্রি ফিডের দামে। ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতির বক্তব্য, ফিড তৈরির ৯০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়।

এসব কাঁচামাল আমদানিতে সরকার ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর বাবদ কেটে রাখে। কিন্তু বছরের পর বছর চলে গেলেও এসব টাকা উদ্যোক্তারা ফেরত পাচ্ছেন না। এই টাকা ফেরত দিলে ফিডের দাম কিছুটা হলেও কমবে। তাছাড়া ডলারের দর অনেক বেড়েছে। ফলে আমদানি খরচ বেড়েছে, যা ফিডের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।

আমরা মনে করি প্রয়োজনে আবারও সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে ডিম, ডাল ও মুরগির একটা নির্দিষ্ট দাম নির্ধারণ করা হলে ক্রেতারা স্বস্তি পাবেন। সেটি বিক্রেতা বা ব্যবসায়ীরা না মানলে তখন কড়াকড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকবে।

×