ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড

-

প্রকাশিত: ২১:১০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড

সম্পাদকীয়

বুধবার দেশের দুই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজনকে পিটিয়ে হত্যার মতো নির্মম ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অতিথি কক্ষে তোফাজ্জল হোসেনকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীনÑ সে কথা তার মামাত বোন ফোনে নির্যাতনকারী ছাত্রদের বারবার জানালেও তা বিশ্বাস না করে আরও বেশি পেটানো হয়।

তোফাজ্জলের ওপর নৃশংস নির্যাতন ও তাকে হত্যার আগে ভাত খাওয়ানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়। অনেকেই বিচারবহির্ভূত এই হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দাসহ বিচার ও দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এই ঘটনায় শাহবাগ থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করার পর ইতোমধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর তাদের দাখিল করা হয়েছে কারাগারে। শনাক্ত করা হয়েছে আটজনকে। একই দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে মোল্লা শামীমকে কয়েক দফা পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায়ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আট ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। সেইদিনই আবার বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে গরুচোর সন্দেহে। 
বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- অতীতেও অনেক ঘটেছে। সেইসঙ্গে অনেকের নিখোঁজ বা গুম হওয়ার ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ ধরনের অপসংস্কৃতি এখনো বন্ধ হয়নি।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনিতে মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটার প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- কোনোভাবেই গ্রহণ করা হবে না। এ ধরনের হত্যাকা-ের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকেও।

পুলিশ সদর দপ্তরের এক বার্তায় বলা হয়েছে, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশ বদ্ধপরিকর। কেউ অন্যায় করলে বা অপরাধী হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার করা হবে। 
বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা অবশ্যই ফৌজদারি অপরাধ। গণপিটুনির ঘটনা সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করে। সাধারণত দৃষ্কৃতকারীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশের প্রচলিত আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে এসব ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটি ব্যক্তি নির্দোষ বলে প্রতীয়মান হওয়ার অধিকার রাখেন।

তাছাড়াও প্রতিটি মানুষের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার সংবিধানে স্পষ্টভাবে স্বীকৃত রয়েছে। তারপরও বিভিন্ন সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ না করে হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- পৃথিবীর কোনো দেশেরই সংবিধান-সমর্থিত নয়। বাংলাদেশের আদালতও এ ধরনের কর্মকা-ের ঘোর বিরোধী। সেই প্রেক্ষাপটে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড অবিলম্বে বন্ধ হবে বলে প্রত্যাশা।

×