ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

অনিরাপদ খাদ্য

প্রকাশিত: ২০:০৪, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অনিরাপদ খাদ্য

.

বিশ্বে প্রতিবছর অনিরাপদ খাদ্য খেয়ে ৬০ কোটি লোক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। বুধবার রাজধানীতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) আয়োজিত গবেষণার প্রাক-অবহিতকরণ সেমিনারে এমন বক্তব্য উঠে আসে, যা উদ্বেগজনক। বলাবাহুল্য অল্পবয়সীরাই অনিরাপদ খাদ্যের বড় ভুক্তভোগী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুডের দোকান বেশি। শিক্ষার্থীদের ২৫ শতাংশ ফাস্টফুড খায়। তার মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধরনের খাবার বেশি খায়। এসব তৈলাক্ত খাবারে জিহ্বায় আলাদা স্বাদ জমে। ফলে, এসব খাবারের প্রতি তারা বেশি আকর্ষিত হয়। এরপর অন্য খাবার আর ভালো লাগে না। এই খাদ্য নির্ভরতা তরুণদের অসুস্থ করছে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ একবার রাজধানীর খাবারের মান পরীক্ষার জন্য একটি সমীক্ষা চালান। প্রাথমিকভাবে রাজধানীর ২শহোটেল-রেস্তোরাঁ বেছে নেওয়া হয় পরীক্ষার জন্য। মাত্র ৫৭টির খাবার স্বাস্থ্যসম্মত বলে বিবেচিত হয়েছে। এর বাইরের অন্য সব রেস্তোরাঁর খাবার ফুড গ্রেডের অনেক নিচে। সম্প্রতি হাইকোর্ট এক আদেশে বলেছেন, খাদ্যে ভেজাল মেশানো একটি বড় দুর্নীতি। জমিতে উৎপাদিত খাদ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে আমাদের প্লেটে পরিবেশন পর্যন্ত যে কোনো স্তরে রাসায়নিক দ্রব্য এবং জীবাণুর মাধ্যমে বিষাক্ত বা দূষিত হতে পারে খাদ্য।

শিল্পোন্নত দেশে খাদ্যবাহিত রোগের সংখ্যা প্রতিবছর শতকরা ৩০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুন্নত দেশসমূহে সংক্রান্ত তথ্যপ্রাপ্তির দুর্বলতা থাকে। তবে কথা অনস্বীকার্য যে, সব দেশেই দূষিত খাদ্যজনিত রোগের প্রকোপ ব্যাপকতা তুলনামূলক বেশি। অনিরাপদ খাদ্য শুধু স্বাস্থ্যের ঝুঁকিরই কারণ না, বরং দেহে রোগের বাসা বাঁধারও অন্যতম কারণ। ডায়রিয়া থেকে শুরু করে ক্যান্সারÑ এমন দুই শতাধিক রোগের জন্য দায়ী অনিরাপদ খাদ্য। দেশে উৎপাদিত এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন খাদ্যে জীবাণু মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়।

নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে রুটিনমাফিক আলোচনা হয়। ভালো ভালো কথা শোনা যায়। কিন্তু কাজের কাজ তেমন হতে দেখা যায় না। এমনটাই চলে আসছে। নিরাপদ খাদ্য দিবসের আলোচনায় আমাদের খাদ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কথা উচ্চারিত হয়ে থাকে। এবং বলা হয় খাদ্যমান বজায় না রাখার কারণে অনেক দেশে আমাদের সার্টিফিকেট গৃহীত হয় না। ফলে, আমরা বিশ্ববাজারে রপ্তানিতে পিছিয়ে থাকছি। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো দেশ আমাদের পণ্য ফিরিয়েও দিয়েছে। এতে কোনো ভুল নেই যে, যারা খাদ্যে ভেজাল দেয়, তারা সাইলেন্ট কিলার। এই কাজটা যারা করছে, সবাই মিলে তাদের বিরদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা চাই। সবার জন্য নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা দেওয়া সহজ কাজ নয়। ভেজাল অন্যান্য দূষণের ফলে আমাদের খাদ্য অনিরাপদ হয়ে ওঠে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়াও নানা কারণে খাদ্য দূষিত হতে পারে। তাই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য সার্বিক বহুমুখী উদ্যোগ চাই।

×