ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

ডেঙ্গু প্রতিরোধ

প্রকাশিত: ২০:০৩, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ডেঙ্গু প্রতিরোধ

.

দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার একদিনেই মারা গেছেন জন। নিয়ে চলতি মাসের ১৮ দিনে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। আক্রান্ত হয়েছে যা চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। উল্লেখ্য, গত মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল ২৭ জনের। সময় ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতারে ভর্তি হয়েছেন ৮৭২ জন। ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু সংক্রমণের হার বেড়েছে চট্টগ্রাম, বরিশাল অন্যান্য জেলায়।

বিশেষ করে বন্যা আক্রান্ত এলাকায় এবার ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি। চলতি বছর ডেঙ্গু নিয়ে পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০২১৩ জন। মশাবাহিত রোগটিতে মারা গেছে, ১১৯ জন। ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৪ দশমিক শতাংশ নারী শিশু এবং ৪৫ দশমিক শতাংশ পুরুষ। উল্লেখ্য, এবারে অতি বৃষ্টি বন্যা হওয়ার কারণে বেড়েছে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার। বিশেষ করে ১১টি জেলা ভয়াবহ বন্যাকবলিত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ নারী পুরুষ শিশু। ফলে, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও বেড়েছে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার। সে তুলনায় সিটি করপোরেশন পৌরসভাগুলো সরকার পরিবর্তন হওয়ায় প্রায় নিষ্ক্রিয় থেকেছে মশক নিধন কর্মসূচিতে। সময়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ বর্জ্য অপসারণ এবং মশক নিধন স্প্রে করা প্রায় বন্ধ ছিল।

ডেঙ্গু এখন আর শুধু বর্ষাকালীন নয়, বরং সারাবছরের রোগ-ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে করোনা অতিমারির সংক্রমণ। করোনা প্রতিরোধে সরকারের ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান থাকলেও ডেঙ্গু মোকাবিলায় যথাযথ প্রস্তুতি, প্রতিরোধ এমনকি তহবিল বরাদ্দ নেই বললেই চলে। প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে স্বাস্থ্য বিভাগ ডেঙ্গু পরিস্থিতির ওপর নিয়মিত নজরদারি করতে পারছে না।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন গণমাধ্যমে বলেছেন, দেশে ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন দেখা গেলেও কোনটির প্রাদুর্ভাব বেশি, তা জানা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের। অন্যদিকে, মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনসহ বিভিন্নস্থানে মশক নিধনে দুই সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কার্যক্রম প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে, বছর ঢাকাসহ সারাদেশেই ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকাসহ ৪৪ জেলার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। ডেঙ্গু রূপ বদলাচ্ছে বারবার। ২০২২ সালে ৬২ হাজার রোগী শনাক্ত হয় দেশে, যেখানে রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু হয় ২৮১ জন। বেশি মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলেছেন, দেরি করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসায় এমনটি হতে পারে। এজন্য জ্বর হলেই অবহেলা না করে দ্রুত পরীক্ষা করাতে হবে। সংকটময় পরিস্থিতিতে হাসপাতালে শয্যা সংকট দেখা দেয়। তাই ডেঙ্গু শুরু হলে আগেই প্রস্তুতি নিতে হবে, কোনো রোগী যেন অযতেœ শিকার না হয়।

ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অফিসগুলোর ভবন, খোলা জায়গা, মাঠ, ফুলের টব, পানির পাম্প বা যেসব জায়গায় পানি জমে-  রকম পাত্র, ফ্রিজ বা এসির পানি জমার ট্রে, পানির ট্যাপের আশপাশের জায়গা, বাথরুম কমোড, গ্যারেজ, নির্মাণাধীন ভবন, লিফট সিঁড়ি, পরিত্যক্ত বস্তুসহ মশার সম্ভাব্য প্রজননস্থলে যাতে পানি জমতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের আরও সচেতন করতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই।

×