ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন

-

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন

সম্পাদকীয়

ফেনীসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলায় গত আগস্ট মাসের বন্যায় কৃষি, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ সব মিলিয়ে ১৪ হাজার ২৬৯ কোটি ৬৮ লাখ ৩৩ হাজার ৫২২ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সরকারি হিসাবে মারা গেছেন মোট ৭৪ জন। আহত হয়েছেন ৬৪ জন। বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মোট ৯ লাখ ৪২ হাজার ৮২১ জন। ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিলেন ৪৫ লাখ ৫৬ হাজার ১১১ জন।

আগস্টের বন্যার এক মাস পর মোট প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তুলে ধরে এসব তথ্য জানান অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
বন্যায় ২৩ কোটি ৬০ লাখ ২৯ হাজার ৭৪০ টাকার ফসল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭১৮ কোটি ৫৭ লাখ ৫৬ হাজার ৬১০ টাকার ফসল। সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পাকা ঘর, আধা-পাকা ঘর ও কাঁচাবাড়ির সংখ্যা ২৮ হাজার ৩৮৬টি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ৯৭টি ঘর।

বন্যায় ২ হাজার ২৩৩ কিলোমিটার পাকা সড়ক সম্পূর্ণ এবং ৩ হাজার ৯৮৪ কিলোমিটার সড়ক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাকবলিত ১১ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতির পরিমাণ ৩২ কোটি টাকা। বন্যায় কৃষির ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। নতুন করে কৃষি উৎপাদন করতে বীজ ও সার প্রাপ্তি এবং নগদ অর্থের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এখন পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে না হলে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বাধাগ্রস্ত হবে মারাত্মকভাবে। নিম্নবিত্তরা সব হারিয়ে দরিদ্রদের কাতারে এসে দাঁড়াবে। 
বন্যায় ঘরবাড়ি, কৃষি জমি ও মৎস্য খামারসহ অনেক সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা জরুরি। আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলা করার জন্য কৃষি, গবাদিপশু ও মৎস্য খাতকে কৃষি বিমার আওতায় আনা প্রয়োজন। জলাবদ্ধতায় বিভিন্ন মসলা, ফলবাগান, সবজি, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ও টমেটো, পান, আখসহ ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৩৮২ হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে। বন্যায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার।

দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অসময়ে অনেক বৃষ্টি ও বন্যা হয় প্রায়ই। এ সময় অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহযোগিতা করতে হবে কৃষকদের। মৎস্য ও পশু সম্পদের উৎপাদন বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে যথাযথভাবে। ফেনীসহ ১১টি জেলা দীর্ঘদিন পানির নিচে তলিয়ে থাকায় বহু ঘরবাড়ি বসবাসের অনুপযোগী হয়েছে। সেগুলো যত দ্রুত সম্ভব মেরামত করতে হবে।

বন্যাকবলিত জেলা-উপজেলাগুলোতে পুনর্বাসনে সরকারের সুনির্দিষ্ট তহবিল থাকা প্রয়োজন। যেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সাহায্য-সহযোগিতা করার সুযোগ থাকবে। একইভাবে এসব এলাকায় যে সব উন্নয়ন সংগঠন কাজ করে তাদেরও একটি সমন্বিত ফান্ডের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যা থেকে তারা দ্রুত দুর্যোগ এলাকাগুলোতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।

বন্যা, নদী ভাঙন, নদী পরিবেষ্টিত বাংলাদেশে মোটেও নতুন নয়। প্রতিবছরই বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও দুর্যোগ মোকাবিলায় যথাযথ পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া এখন সময়ের দাবি।

×