ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

বেশি ক্যালরিতে ক্ষতির আশঙ্কা

মো. নজমুল হক

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বেশি ক্যালরিতে ক্ষতির আশঙ্কা

বেশি ক্যালরিতে ক্ষতির আশঙ্কা

ক্যালরি অর্জন এবং ক্যালরি খরচ- এই দুটির মধ্যে ভারসাম্য নির্ণয় করে মানুষটির ওজন কেমন হবে অনুমান করা যায়। যদি কেউ ক্যালরি খরচের তুলনায় বেশি ক্যালরি খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করে, তা হলে তার ওজন বৃদ্ধি পাবে। তখন তার শরীর এই অতিরিক্ত এনার্জি চর্বি হিসেবে সঞ্চয় করে রাখবে। এই অবস্থায় শরীরের অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়ে মেদাধিক্য বা ওবেসিটির সৃষ্টি হয়ে থাকে।

অতিরিক্ত খাওয়া, কম কায়িক শ্রম, বংশগত, হরমোনজনিত এবং কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াকে মুটিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওবেসিটি বা অতিস্থূলতা হলো শরীরের এক বিশেষ অবস্থা। যার ফলে শরীরে নানা রকম ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। বর্তমান সময়ে বিশ্বে স্থূলতাই মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা এখন পশ্চিমা সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। নিত্য ফাস্ট ফুড এবং কোমল পানীয়র প্রতি ঝোঁক বাড়ছে।

বিভিন্ন ধরনের দুধের তৈরি খাবার, চকোলেট, আইসক্রিম, বার্গার, পিৎজা, চিপ্সসহ বিভিন্ন রকম প্রক্রিয়াজাত খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। ফলে, এগুলো খাবার অল্প পরিমাণে খেলেও শরীরে বেশি মাত্রায় ক্যালরি সঞ্চয় হয়ে অতিস্থূলতা বা ওবেসিটির রূপ নিচ্ছে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ এখন অপর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করছে। এর প্রাথমিক কারণ হিসেবে আগের তুলনায় হাঁটাহাঁটি একদমই কমে গেছে। উদাহরণ স্বরূপ আমাদের ঢাকা শহরেই হরহামেশাই চোখে পড়ছে মানুষের খুব অল্প দূরত্ব এমন গন্তব্যে যেতেও একজন সুস্থ সবল কমবয়সী মানুষও রিকশা ডাকছে।

এর প্রভাব গ্রামেও পড়ছে, যেমন- আগে গ্রামের মানুষ মাইলের পর মাইল হেঁটে চলাচল করত। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ গ্রামে এখন পাকা রাস্তায় অনবরত ভ্যান, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল চলাচল করছে। সেই কারণে সেখানেও আগের তুলনায় মানুষের হাঁটাহাঁটির প্রবণতা একদমই কমে গেছে। 
শহরে অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় বসে কাজ করছে। ফলে, শারীরিক পরিশ্রম সেভাবে হচ্ছে না। কাজের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন কারণে বেশি মানসিক চাপ, অপর্যাপ্ত ঘুম, অনেক বাসায়  লিফটের ব্যবস্থা থাকায় সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামাও কমে গেছে। প্রযুক্তির আশীর্বাদে আজকাল হাটেবাজারে যাওয়াও কমে গেছে। শহরে খেলাধুলার মাঠের ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

শিশু-কিশোরদের মাঠে গিয়ে খেলাধুলার সুযোগ একদমই নেই বললেও অত্যুক্তি হবে না। বাধ্য হয়ে শিশু-কিশোরদের কম্পিউটার বা মোবাইল গেমস্ তাদের সম্বল হয়ে উঠেছে। শহরের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন বিল্ডিংসর্বস্ব। সেখানে নেই কোনো খেলার মাঠ। ফলে, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সঙ্গে শরীরচর্চার কোনো সুযোগ থাকছে না সেখানে। এমনিভাবে নিজেদের অজান্তে আমরা প্রবলভাবে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যান্ত্রিক জীবনে।
শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে ওবেসিটি বা অতিস্থূলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের গ্রাফ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। অতিস্থূলতা বা ওবেসিটিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা উচ্চরক্তচাপ, নানা ধরনের হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, মস্তিষ্কে স্ট্রোক, অস্থির প্রদাহ, শ্বাসকষ্ট, ঘুমের ব্যাঘাত, বন্ধ্যত্ব, ফ্যাটি লিভার, কিডনি  ফেইলিউর, কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড বৃদ্ধি, মানসিক অবসাদ ও ক্যান্সারসহ নানাবিধ রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিভিন্ন পরীক্ষায় নিরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, তুলনামূলক ওবেসিটি বা অতিস্থূলকারীদের আয়ুষ্কাল অন্যদের তুলনায় কম। ওবেসিটি বা অতিস্থূলতা থেকে বাঁচার প্রধান পথ হলো খাওয়া নিয়ন্ত্রণ, সুষম খাদ্যগ্রহণ, পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম। অনেক সময় দেখা যায়, নিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়া করে হয়তো ওজন কমল, তবে তা সাময়িক। একে ধরে রাখতে গেলে নিয়মিতভাবে শারীরিক পরিশ্রমের বিকল্প নেই। তবে এ সব করেও কোনো ফল না পেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মত ঔষধ সেবনের দরকার হতে পারে।

লেখক : (অব.) সরকারি কর্মকর্তা 

huqmd.naymul @ gmail. com

×