ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

ব্যাটারিচালিত রিক্সা

-

প্রকাশিত: ২০:৩২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ব্যাটারিচালিত রিক্সা

সম্পাদকীয়

যানজট ও যানবাহন আধিক্যের শহর ঢাকার মূল সড়কগুলোয় বিষফোড়া হয়ে উঠেছে ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক। বিশেষ করে সরকার পতনের পর থেকে শিথিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সুযোগে অলিগলি থেকে বেরিয়ে রাজধানীর মূল সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব বাহন। গণপরিবহনকেও ওভারটেক করতে পিছপা হয় না এগুলো। এ বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কথা হলেও কোনোভাবেই এসব বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এসব রিক্সার চালকরা নিজেদের মোটরগাড়ির ড্রাইভার বলে ভাবতে শুরু করেছে এবং সব ধরনের যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলাচলের দুঃসাহস দেখাচ্ছে। ফলে, একদিকে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে সড়কগুলো, অন্যদিকে বাড়ছে যানজট। দেরিতে হলেও এই নৈরাজ্য থেকে মুক্তির জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহানগরীর পুলিশ। মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলবে না, এমন কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে ডিএমপি।

এ বিষয়ে ক্রাইম ও ট্রাফিক বিভাগ সমন্বয় করে কাজ করবে। এখন দেখার অপেক্ষা, পুলিশ কতটুকু সক্রিয়তা প্রদর্শন করে এবং সফল হয়। কেননা, ঢাকা শহরে দুই কোটির বেশি মানুষের জন্য ট্রাফিক পুলিশ সদস্য রয়েছে মাত্র চার হাজার।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ঢাকার বাইরে থেকে অনেক ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করেছে। এসব চালকের কোনো ধরনের লাইসেন্স, নিবন্ধন ও অভিজ্ঞতা নেই। নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলোকে বিআরটিএ ও সিটি করপোরেশন থেকে কোনো ধরনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

অবৈধভাবে চলার কারণে সিগন্যাল ও নিয়মনীতি মানছে না। ট্রাফিক পুলিশের নিয়মকানুনকে পুনরুজ্জীবিত করা খুবই জরুরি। ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা যদি অবাধে মূল সড়কে চলার সুযোগ পেয়ে যায়, তাহলে পরে তাদের নিবৃত্ত করা কষ্ট হয়ে যাবে।
প্রচলিত রিক্সার চেয়ে দ্রুতগতিতে চলায় ব্যাটারিচালিত রিক্সা এখন নগরবাসীর আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্রেক ততটা শক্তিশালী না হওয়া ও চালকদের অনেকেই অনভিজ্ঞ হওয়ায় বেড়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে রিক্সার জন্য পৃথক লেন থাকার পরও নিয়ম অমান্য করে প্রধান সড়কে চলছে রিকশা।

পেছন ফিরে তাকালে আমরা দেখতে পাব, বিগত সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ঢাকা মহানগরীতে ব্যাটারিচালিত রিক্সা বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরে সেসব যানের চালকরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেছিল। কিছুটা সহিংসও হয়ে উঠেছিল সে আন্দোলন। রাস্তা বন্ধ করে দাবি জানানোর কারণে একদিকে যানজট এবং অন্যদিকে যান-স্থবিরতার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছিল মানুষ।

সচেতন ঢাকাবাসীর মনে থাকার কথা, চার বছর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রও অনুরূপ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি ব্যাটারিচালিত রিক্সা ঢাকার সড়কে চলতে দেবেন না বলে স্পষ্টত জানিয়ে দিয়েছিলেন। তখন ওই ঘোষণা নগরবাসীর সাধুবাদ পায়। 
আমরা আশা করব, সড়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঢাকার মূল সড়কগুলোতে যেন কিছুতেই ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর ভূমিকা নেবে।

×