ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

মাজারে হামলা ও ভাঙচুর

-

প্রকাশিত: ২০:৩০, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মাজারে হামলা ও ভাঙচুর

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে মাজার সংস্কৃতির ইতিহাস বেশ পুরনো। দেশের   বিভিন্ন স্থানে অনেক ছোট-বড় সুফি দরগাহ এবং পীর-দরবেশদের মাজার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মাজারের ভক্তরা সাধারণত  বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর ব্যক্তি হয়ে থাকেন এবং মাজারগুলোতে তাদের আগমনও ঘটে বিভিন্ন স্থান থেকে। কিছু সাধারণ আচার-অনুষ্ঠান যেমন- আগরবাতি, মোমবাতি জ্বালানো, গোলাপ পানি ছড়িয়ে দেওয়া, সিন্নি বা মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য দান করা ইত্যাদি সব প্রায় মাজারেই পালন করা হয়ে থাকে।

মাজারগুলোতে প্রতিবছর নিয়ম করে জাঁকজমক বার্ষিক ওরস পালিত হয়ে থাকে। সেখানে ভক্তদের সমাগমে মারফতি গান-বাজনাও হয়। তবে দিন দিন মাজারের আশেকানদের আনন্দের সেই সব আয়োজন কমে এসেছে। বলা যায়, বদলে গেছে মাজার সংস্কৃতির চেহারা। 
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মাজারে দুর্বত্তদের হামলার ঘটনা ঘটছে এবং ক্রমেই তা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। মাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছোট বড় মিলিয়ে ৫০টির বেশি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। মাজারের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন মন্দিরেও হামলা চালাতে দেখা যাচ্ছে দুর্বৃত্তদের। ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এই বিষয়ে সারাদেশের থানাগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। তারপরও একের পর এক মাজারে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা থামানো যাচ্ছে না।

সারাদেশে তিন হাজারের বেশি মাজার আছে। সব মাজারের ভক্তরাই এখন উদ্বিগ্ন। মাজার ভক্তদের মতে, চিন্তার ভিন্নতা থাকতেই পারে। ওহাবি ভাবধারার আমরা অনুসারী না। আমরা সুফিবাদে বিশ্বাসী। তাই বলে আমাদের ওপর হামলা কেন? এরকম পরিস্থিতি আগে কখনো হয়নি। তিনি আরও বলেন, হামলার পর পুলিশ এলে কী হবে? আমরা হামলার আগেই নিরাপত্তা চাই।

নারায়ণগঞ্জের দেওয়াবাগ দরবার শরিফ, সিলেটের হজরত শাহ পরাণ (র.) মাজার, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের ইয়াজোড়া দরবার শরিফসহ বিভিন্ন মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার গাজীপুরে একটি মাজার বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো মাজারে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গান-বাজনাও। একটি স্বার্থান্বেষী মহল ব্যবহার করেছে দুর্বৃত্তদের। মাজারগুলোতে ভক্তদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায়ও নেমেছেন।
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং সকল ধর্ম-বিশ্বাসী মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দেশ। মসজিদ, মন্দির এবং মাজারে হামলা গর্হিত কাজ। ধর্মীয় উপাসনালয়ে যারা হামলা চালায়, তারা মানবতার শত্রু। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সুফি দরগাহ ও মাজারে হামলাকারী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সেই লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধর্মীয় উপাসনালয় এবং সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলো রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হামলায় জড়িত অশুভ চক্রকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতি বিঘ্নিত করার যে কোনো অপচেষ্টা দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করা আবশ্যক।

×