ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

তিন প্রকল্পে অর্থ সাশ্রয়

-

প্রকাশিত: ২০:৪০, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তিন প্রকল্পে অর্থ সাশ্রয়

সম্পাদকীয়

দেশে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিচার-বিবেচনা না করে এবং বারবার সংশোধনের নামে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা বাড়িয়ে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ ব্যয় বিগত সরকারের আমলে ছিল ওপেন সিক্রেট। তৎকালে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের একাধিক নজিরও  মেলে। এসবই করা হয়েছে নিছক রাজনৈতিক বিবেচনায়। মূলত প্রকল্প পরিচালনাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে অর্থ ভাগাভাগির স্বার্থে।

এখানে কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির বালাই ছিল না বললেই চলে। ফলে, তৎকালে প্রায় প্রতিটি প্রকল্পে হয়েছে দুর্নীতি-অনিয়ম এবং বেড়েছে প্রকল্প ব্যয়। অন্যদিকে, কাজও মানসম্মত হয়নি। 
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি হিসেবে প্রকল্প ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে এবং প্রয়োজনে কাটছাঁটও করছে। ফলে, অনেক প্রকল্প ব্যয় কমে এসেছে ইতোমধ্যে। এরকম তিনটি প্রকল্প হলো- পদ্মসেতু রেলসংযোগ, দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ এবং যমুনা রেল সেতু নির্মাণ প্রকল্প। এরই অংশ হিসেবে সরকারের তিনটি প্রকল্প থেকে ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। এর মধ্যে গত বছর শেষ হয়েছে দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের কাজ।

বাকি দুটি প্রকল্প চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বিবেচনা ছাড়া এসব প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেছেন, বর্তমান সরকার বারবার তাগিদ দিচ্ছে প্রকল্প ব্যয় কমানোর জন্য। অন্যদিকে, বিগত সরকারের আমলে প্রকল্পের ব্যয় কমানোর বিষয়ে আদৌ কোনো দায়বদ্ধতা ছিল না।

তখন প্রকল্প গ্রহণের সঙ্গে নিজেদের লাভের বিষয়টি থাকত প্রধান বিবেচনায়। পরিকল্পনা কমিশন থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টরে ভাগ-বাটোয়ারা করা হতো বরাদ্দকৃত অর্থ। এ ছাড়াও পদ্মা সেতু রেলসংযোগ এবং দোহাজারি-চট্টগ্রাম রেলসংযোগে ডবল লাইন নির্মাণ না করায় রেলযাত্রীরা প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। উপরন্তু পর্যাপ্ত কোচ ও রেল ইঞ্জিনের ব্যবস্থা না করে শেষ পর্যন্ত এত বিপুল ব্যয়ে রেলপথ নির্মাণ লাভের মুখ দেখবে না তেমন। যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণে অদূরদর্শিতার জন্যই এমনটি হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা, অক্ষমতা ও দুর্বলতার কারণেই এমনটি ঘটেছে,যা কখনো কাম্য হতে পারে না। 
বর্তমান সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালাম সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এবং বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথোরিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। এ সময় তিনি বলেন, কথায় কথায় প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো চলবে না। এখানে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।

দেখেশুনে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে জনকল্যাণের নিমিত্তে। সে জন্য সবার আগে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। প্রকল্প ধরে বসে থাকলে চলবে না। দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে যথাসময়ে। এ সব ভালোভাবে নিয়মিত মনিটরিং ও মূল্যায়ন করতে হবে। অনেক  প্রকল্প পরিচালক  প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডিজও করেন না ঠিকমতো।

ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়মকে প্রশ্রয় না দিয়ে প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে মানসম্পন্নভাবে শেষ করতে হবে। সেটি যেন জনগণের কাজে লাগে। সব নির্ভর করে নিয়মিত মনিটরিং ও মূল্যায়নের ওপর। উল্লেখ্য, বারবার প্রকল্প সংশোধনসহ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সরকার থেকে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এর লাগাম টেনে ধরতে না পারলে সরকারের লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত ও ব্যাহত হতে পারে। এ অবস্থা থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসা জরুরি ও অপরিহার্য।

×