ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

চলন্ত বাসে গণধর্ষণ

-

প্রকাশিত: ২০:২৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চলন্ত বাসে গণধর্ষণ

সম্পাদকীয়

চলন্ত বাসে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে আবারও। এবারে ঘটনাস্থল কর্ণফুলী থানার মুইজ্জারটেক এলাকা। নগর পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) শাকিলা সুলতানার ভাষ্যে জানা যায়, গত ৬ সেপ্টেম্বর পটিয়ায় এক আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি পটিয়া মনসা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাকলিয়া তুলাতুলি এলাকায় স্বামীর বাসায় ফেরার জন্য একটি বাসে ওঠেন।

বাসটি কর্ণফুলী থানার চরপাথরঘাটা শাহ আমানত সেতু টোল প্লাজার কাছে পৌঁছালে চালক ও তার সহকারী তাকে ধর্ষণ করে। তখন বাসে ঐ নারী ছাড়া আর কোনো যাত্রী ছিলেন না। ঘটনার সময় বাসটিকে চালক ও তার সহকারী বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে রাত সাড়ে ১১টায় পটিয়ার শান্তিরহাট এলাকায় নামিয়ে দেয়। ধর্ষণের ঘটনায় ৩ দিন পর ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে মামলা করেন কর্ণফুলী থানায়। এতে বাসের চালক ও তার সহকারীকে আসামি করা হয়।

এরই প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরের বাকলিয়া থানায় নতুন ব্রিজ বাসস্ট্যান্ড থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত দুজন আদালতে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ মাত্র ২ মাস আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। তার স্বামী একজন পোশাক শ্রমিক। 
গণপরিবহনে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এর আগেও। কয়েক বছর আগে স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাস যেটি রাজধানীর মহাখালী থেকে যাচ্ছিল কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী হয়ে বাজিতপুরের পিরিজপুর। বাসচালক ও সহযোগী কর্তৃক ধর্ষিত ও নিহত নার্স শাহিনুর আক্তার চাকরি করতেন ইবনে সিনা হাসপাতালের কল্যাণপুর শাখায়।

বাসচালক, সহকারীসহ ৫জন প্রথমে ধর্ষণ ও হত্যার কথা অস্বীকার করলেও প্রাথমিক তদন্তে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। ময়নাতদন্তের পর বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে। গণপরিবহন রীতিমতো বিপজ্জনক ও অনিরাপদ হয়ে উঠেছে বিশেষ করে নারী ও শিশুর জন্য। 
কেন এসব হচ্ছে তা নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট মহলে। এর আপাত কারণ হতে পারে দুর্বল চার্জশিট, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, সর্বোপরি বিচারহীনতার সংস্কৃতি। নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার ধর্ষিতারা অসহায় ও দরিদ্র বিধায় অপরাধীরা ক্ষমতাবান হলে মামলার গতি মুখ থুবড়ে পড়ে। যে কারণে আজ পর্যন্ত প্রায় কোনো ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি।

নারী নির্যাতন-ধর্ষণ ইত্যাদি প্রতিরোধে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্নসহ দেশে যথেষ্ট ভালো আইন রয়েছে। ধর্ষকদের ফাঁসি অথবা ক্রসফায়ারে দেওয়ার দাবিও উঠেছে। তবে দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করতে হয় যে, বিস্তৃত পরিসরে এর প্রয়োগ প্রায় নেই বললেই চলে। বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর অভিগম্যতা সীমিত। সরকার ও আদালত সে ক্ষেত্রে নারীর ন্যায়বিচার দ্রুত নিশ্চিতকরণে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে আন্তরিক ও সচেষ্ট হবে বলেই প্রত্যাশা।

×