ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

রাষ্ট্র সংস্কারে কমিশন

প্রকাশিত: ২০:০৮, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাষ্ট্র সংস্কারে কমিশন

.

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের এক মাস পূর্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা . মুহাম্মদ ইউনূস লক্ষ্য পরিকল্পনার বিষয়টি জাতির সামনে স্পষ্ট করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমাদের তরুণ বিপ্লবীরা দেশের মানুষের মনে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়েছে, তা পূরণে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।শহীদদের আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তনই বর্তমান সরকারের অভীষ্ট। এক নতুন যুগের সূচনা করতে হলে সবার আগে চাই প্রয়োজনীয় সংস্কার। দেশবাসীর প্রত্যাশিত সংস্কারের বিষয়টি সরকারের সংস্কার কমিশন গঠনের ভেতর দিয়ে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পরিগ্রহ করল, এটা বলা যায়। তবে, সূচনা হলো মাত্র। এখন চাই যাত্রা শুরুর সার্বিক প্রস্তুতি এবং সক্রিয় কর্মপ্রবাহ। দেশবাসীর কাছে সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ছয়টি কমিশন গঠনের সুসংবাদ দিয়েছেন প্রধান উপদষ্টা। এসব কমিশনের কাজ পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ছয়টি কমিশনের প্রধানদের নামও ঘোষণা করেন। তাঁরা হলেন- জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান শাহদীন মালিক, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন এবং দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান। এসব কমিশনের অন্য সদস্যদের নাম কমিশন প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্ধারিত হবে। কমিশনগুলোর আলোচনা পরামর্শ সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছাত্র-শ্রমিক-জনতা আন্দোলনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলেও জাতিকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়া সাপেক্ষে কমিশন আগামী মাসের প্রথম দিনটি থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এটি পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলেই তাঁর মত। প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি খোলাসা করেছেন এভাবে : কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ সভার আয়োজন করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্রসমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শ সভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। পরে আরও বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

আশার কথা, জাতীয় ক্ষেত্রে সংস্কার আনার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। তবে ব্যক্তি প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়েও সংস্কার বা পরবির্তনের প্রয়োজন রয়েছে, সেটি বলাই বাহুল্য। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও জরুরি। তাই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত প্রধান উপদেষ্টা ব্যবসায়ী, শ্রমিক, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ সবাইকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সংস্কার আনার যে আহ্বান জানান, সেটি তাৎপর্যপূর্ণ। এই তাৎপর্য অনুধাবনে সব পক্ষ সমর্থ হলেই দেশের মঙ্গল।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, পেশা ধর্মপরিচয়ের ঊর্ধ্বে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করার প্রত্যয় উঠে এসেছে . ইউনূসের বক্তব্যে। তিনি এটিকেই সংস্কারের মূল লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করছেন, যা সাধুবাদযোগ্য। মানুষে মানুষে সাম্যের যে বাণী উচ্চারিত হয়েছে তাঁর কণ্ঠে সেটির সাফল্য দেখতে চাইবেন প্রতিটি বিবেকবান মানুষ। আমাদের প্রত্যাশা, সংস্কারের প্রয়োজনে গঠিত ছয় কমিশন সার্বিক সফলতা বয়ে এনে ইতিবাচকভাবে বদলে দেবে বাংলাদেশ।

×