ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

দুই কলেজের রেষারেষি

-

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দুই কলেজের রেষারেষি

সম্পাদকীয়

সম্প্রতি রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত অন্তত ১৮ জন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ঢাকা কলেজে ১০ সেপ্টেম্বর একাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে আইডিয়াল কলেজের কয়েক শিক্ষার্থীও এসেছিলেন।

এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বাগবিত-া হয়। বিষয়টি ঘটনাস্থলেই মীমাংসা করা হলেও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা সেটি মেনে নেননি। পরে তারা সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় এলাকায় এসে জড়ো হয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এ ছাড়াও ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে সিটি কলেজ এবং টিচার্স ট্রেনিং কলেজের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। ছোটখাটো তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই বিবাদবিসংবাদ খুবই দুঃখজনক। এর ফলে প্রচ- যানজট সৃষ্টিসহ জনদুর্ভোগ চরমে ওঠে, যা কাম্য নয়।
শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ৫ আগস্ট পতন হয় সাবেক সরকারের। শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের মাধ্যমে পূরণ হয় তাদের এক দফা দাবি। শিক্ষার্থীরা ক্রমেই নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে পুনরায় পড়াশোনায় মনোযোগী হবেÑ এটাই প্রত্যাশা। কিন্তু এর পর থেকে দেশের সর্বত্র বিভিন্ন দাবি-দাওয়া লেগেই আছে। এসব প্রতিহত করতে বারবার ছাত্রদেরই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা প্রত্যাশিত নয়।

বর্তমান প্রজন্মকে সবাই জেন-জি হিসেবেই আখ্যায়িত করেছেন। তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং দূরদৃষ্টি প্রশংসা পেয়েছে। ভবিষ্যতেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। কেননা তাদের সততাকে পুঁজি করে ওঁৎ পেতে থাকা সুবিধাবাদীরা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সদা তৎপর। সুযোগ সন্ধানীরা তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে পারলে প্রশ্নবিদ্ধ হবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।  
গত বছরের শুরু থেকেই শিক্ষা ব্যবস্থায় চলছে নানা রকম অপ্রীতিকর ঘটনা। কখনো বইয়ের পরিবর্তন, কখনো পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন; যা নিয়ে রয়েছে তীব্র সমালোচনা। চলতি বছরের শুরুতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবং প্রচ- দাবদাহের কারণেও অনেকদিন বন্ধ ছিল দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যখন সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে স্কুল-কলেজে শিক্ষার পরিবেশ আসা শুরু করে তখনই শুরু হলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

প্রায় দুই মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে নেওয়া এখন সময়ের দাবি। সেশনজটে শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হোক, এটা কারও কাম্য নয়। দেশের যে কোনো প্রেক্ষাপটে শিক্ষা ব্যবস্থাকে রাখতে হবে স্থিতিশীল। যেসব দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত সেসব দেশ রয়েছে উন্নতির শিখরে। শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে হবে।

শিক্ষা খাতের বরাদ্দ যথার্থভাবে বিনিয়োগ করতে হবে। তৈরি করতে হবে উন্নত গবেষণাগার। কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে সহজ করতে হবে উদ্যোক্তা তৈরির পথ। তাহলেই শিক্ষা খাতে আসবে কাক্সিক্ষত সাফল্য। কলেজে-কলেজে দ্বন্দ্ব নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে। দুই গ্রুপের রেষারেষির জন্য জনদুর্ভোগ অগ্রহণযোগ্য।

×