ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

বাসযোগ্য ঢাকার মহাপরিকল্পনা

-

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাসযোগ্য ঢাকার মহাপরিকল্পনা

সম্পাদকীয়

বিশ্বের যেসব মহানগরীর জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, সে সবের অন্যতম একটি হলো ঢাকা। দেশের বেশিরভাগ সেবা রাজধানীকেন্দ্রিক হওয়ায় মানুষ ঢাকায় ভিড় জমাচ্ছেন প্রতিদিন। ফলে, শহরটি যেন দিন দিন বসবাসের প্রায় অযোগ্য হয়ে উঠেছে। ঢাকার বেশিরভাগ এলাকা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠায় নাগরিক সুবিধাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

বৈশ্বিক মানদ- অনুযায়ী মহানগরটির জনঘনত্ব যত হওয়ার কথা, তার চেয়ে তিন-চারগুণ বেশি। তাই নাগরিক সুবিধা ও মোট জনসংখ্যার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে গত ৬৫ বছরে অনেক মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমন্বয়হীনতা ও যথাযথ গুরুত্বের অভাবে একটি পরিকল্পনা নেওয়ার পর আবার সংশোধন হয়।

ফলে, অধিকাংশই পুরোপুরি কার্যকর করা সম্ভব হয় না। যে কোনো পরিকল্পিত নগরায়ণে দুটি বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হয়। একটি হলো ভূমি ব্যবহার এবং অপরটি হলো পরিবহন ব্যবস্থা। উন্নত বিশে^ এ দুটি বিষয় সামনে রেখে পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে ভূমি ও পরিবহন ব্যবস্থা সবচেয়ে বিশৃঙ্খল। তাই কোনো মহাপরিকল্পনাই কার্যকর হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
সর্বশেষ, ঢাকাকে বাসযোগ্য মহানগরী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রণয়ন করা হয়েছে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা। ২০২২ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল ও স্থগিতের দাবি জানানো হয়েছে। এমতাবস্থায় স্বার্থান্বেষী মহলের কথায় ড্যাপ বাতিল বা স্থগিত করা হলে তা ঢাকা শহরের জন্য আত্মঘাতী হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

ঢাকার অনেক খাল দখল করে আবাসন ভবন গড়ে উঠেছে। গত ৫৩ বছরেও এগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিক্রান্ত হলেও নগর উন্নয়ন আইন নেই, যা খুবই জরুরি। নগর সরকার ও প্রধান সমন্বয় কর্তৃপক্ষ না থাকার কারণে এক একটি সংস্থা নিজেদের মনমতো পরিকল্পনা তৈরি করছে। আর পরিকল্পনা কমিশন কোনো যাচাই-বাছাই না করে তা পাস করছে। ফলে, বিভিন্ন মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়নও হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। 
ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে শুধু বড় প্রকল্প নয়, চাই নগর সুশাসন ও সমন্বিত উদ্যোগ। সেই সঙ্গে রাজধানীতে প্রচুর গাছ লাগানো দরকার। বিল্ডিং নির্মাণ করা উচিত রাজউকের নকশা অনুযায়ী। ড্যাপের বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো পরিমার্জন করা যেতে পারে। এ ছাড়াও নগরের একটি মাদার কর্তৃপক্ষ বা প্রধান সমন্বয় কর্তৃপক্ষ থাকতে হয়। যাদের নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠু প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।

কিন্তু আমাদের এখানে রাজউকের মহাপরিকল্পনা প্রায় কেউ মানে না। এতে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা তৈরি হচ্ছে। তাই বাসযোগ্য ঢাকার জন্য বিভিন্ন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ আবশ্যক।

×