ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

স্বপ্নপূরণের ব্রত

-

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্বপ্নপূরণের ব্রত

সম্পাদকীয়

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের অব্যবহিত আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তরুণ সমাজ প্রসঙ্গে কিছু কথা বলেছিলেন। তরুণ সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে যে পটপরিবর্তন হয়েছে, সেখানে তরুণদের করণীয় রয়েছে অনেক। এ বিষয়ে ড. ইউনূস অবগত ও সচেতন। সে কারণেই তিনি সেদিন বলেছিলেন দেশে ১৭ কোটি মানুষ আছে, যাদের অধিকাংশই তরুণ, যারা কখনো ভোট দেয়নি।

আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা সুখী, আইন মান্যকারী নাগরিক এবং তারা জানে একটি গণতন্ত্র আছে। এই তরুণরা তাদের জীবনে কখনো ভোট দেয়নি। তারা কখনোই ভোট কেন্দ্রে যায়নি, কারণ নির্বাচন কখনোই হয়নি। আমাদের তরুণদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সরকার পরিচালনার এক মাস পূর্তিতে সেই তরুণ সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন ড. ইউনূস।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষার যে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে, তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তোমরা এর থেকে বেরিয়ে যেও না। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাবে। চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখবে না।’

রবিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ছাত্র সংগঠক এবং বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘যতবার দেখি, যতবার শুনি আবার নতুন করে প্রতিজ্ঞা করতে হয় যে, স্বপ্নের জন্য তারা প্রাণ দিয়েছে, সেই স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়ন করব। এটা থেকে আমাদের বেরিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। আমাদের যোগ্যতা না থাকতে পারে, ক্ষমতা না থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের প্রতিজ্ঞা রইল, আমরা এটা করব।’
পনেরো বছর সুদীর্ঘ এক সময়। ওই পনেরো বছরের শাসকগোষ্ঠীকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অপসারণের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন আশায় নতুন স্বপ্নে বুক বেঁধেছে মানুষ। যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতা  স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল, সেই স্বপ্নপূরণে প্রধান উপদেষ্টা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার বিষয়টি দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন।

কেমন দেশ গড়ার আকাক্সক্ষা পোষণ করে বর্তমান সরকার, সেটিও স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন তিনি। তিনি ইতোপূর্বে ব্যক্ত করেছেন, আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার থাকবে পুরোপুরি সুরক্ষিত। আমাদের লক্ষ্য একটাইÑ উদার, গণতান্ত্রিক,  বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। আমরা এক পরিবার। আমাদের এক লক্ষ্য। কোনো ভেদাভেদ যেন আমাদের স্বপ্নকে ব্যাহত করতে না পারে, সে জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

এমন বক্তব্য দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ ও উজ্জীবিত করার মতো। দেশের মানুষ সদিচ্ছা, শুভকামনা ও আশা নিয়ে বর্তমান সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকবে, এমনটা বললে অত্যুক্তি হবে না। স্বপ্নপূরণের কাজ অত্যন্ত কঠিন। এই ব্রত অঙ্গীকার, সাধনা ও শ্রমনিষ্ঠা দাবি করে। দেশবাসীর প্রত্যাশা, স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের শক্তি ও সমর্থন নিয়ে নতুন সরকার বহুদূর এগিয়ে যাবে।

×