.
প্রকৃতির অপার অবারিত সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ বাংলাদেশ। ষড়ঋতুর নৈসর্গিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ আবহমান বাংলা শুধু সৃজন ব্যক্তিত্বের আধার ছিল না, তার চেয়েও বেশি বিদেশী পর্যটক, ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠী এবং ভিন দেশের রাজা-মহারাজাদের আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে ছিল প্রসিদ্ধ। সমুদ্র, পাহাড়, নদী পরিবেষ্টিত ক্ষুদ্র এই সৌন্দর্যের তীর্থভূমি আজও বিশ্ব পর্যটকদের মুগ্ধ করার জন্য এক অপার বিস্ময়।
সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোর প্রকৃতির অপার মাধুর্য যেমন সারাবিশ্বকে আনন্দ আর ভ্রমণের খোরাক জোগায়, সে মাত্রায় বাংলাদেশও তার নৈসর্গিক ডালি সাজিয়ে ভ্রমণবিলাসী মানুষদের মনোরঞ্জন করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করে না। প্রকৃতিই তার সমস্ত সৌন্দর্য আর মাধুরী অবারিত করে শ্যামল-সবুজ বাংলাকে বিশ্ব দরবারে দর্শনীয় স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
তবে শুধু প্রকৃতির দানে ভরপুর হওয়ার চাইতেও প্রাসঙ্গিক সব সুযোগ-সুবিধাও পর্যটকদের জন্য থাকা অত্যন্ত জরুরি। পর্যটন অর্থনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলো বড় দৃষ্টান্ত দেখালেও অপার সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ। বিগত সরকার দেশের পর্যটন খাতের পরিকল্পিত বিকাশে যে ট্যুরিজম মাস্টারপ্ল্যান বা মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল, তা বাস্তবায়নে কোনো গতি নেই। এমনকি মহাপরিকল্পনার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে যেসব বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, সেগুলোও থমকে গেছে। এতে পর্যটন অর্থনীতির বড় স্বপ্ন শুরুতেই যেমন ধূসর হয়ে পড়েছে। তেমনি বিদেশী পর্যটক আকর্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের স্বপ্নও অধরাই থেকে গেছে। গত এক-দেড় দশক ধরে দেশের সম্প্রসারিত অর্থনীতিতে পর্যটনের প্রত্যাশিত হিস্যা মিলছে না। পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বছর চারেক আগে পর্যটন খাতে মহাপরিকল্পনার যে রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
উল্টো সেই রূপরেখার অংশ হিসেবে নেওয়া বড় প্রকল্পগুলো আটকে গেছে কম বরাদ্দ, ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা, উদ্যোক্তাদের অনাগ্রহ আর বিগত সরকারের তদারকির ঢিলেমিতে। পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, অপার সম্ভাবনা থাকলেও বিশ্বে পর্যটনশিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে তলানিতে। মুন্ডি ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, পর্যটনশিল্পে বিশ্বের ১৮৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম, আর এশিয়ার ৪৬টি দেশের মধ্যে ৪২তম। তাই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যত দেরি হবে, পর্যটন খাতে ততই বাড়বে অব্যবস্থাপনা।
দেশের অর্থনীতির জন্য পর্যটন একটি বড় সম্ভাবনাময় খাত। পর্যটনের উন্নয়নে ১৯টি মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততা আছে। কিন্তু এসব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দীর্ঘদিনের। তবে এই শিল্পের বিকাশ ও মানোন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত অংশগ্রহণ জরুরি। এছাড়াও বৃহত্তর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, শ্রীমঙ্গল থেকে শুরু করে অন্যত্র ইকো ট্যুরিজম প্রয়োজন। বিশেষ করে আন্তঃসংযোগ বাড়ানো চাই। পাশাপাশি রিলিজিয়ন ট্যুরিজমের সম্ভাবনাকেও গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এই খাতে মনোযোগ দিলে দেশের সৌন্দর্য, কর্মসংস্থান এবং জিডিপিতে এর অবদান বাড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।