ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস

প্রকাশিত: ২০:০৬, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস

.

দায়িত্ব গ্রহণের পর নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। বলাবাহুল্য, মাত্র একমাসে একটি সরকারের সাফল্য বা ব্যর্থতার ন্যূনতম  মূল্যায়নের জন্য আদৌ যথেষ্ট নয়। পাঠকদের মনে রাখতে হবে যে, দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সর্বত্র সংস্কারের বিশাল প্রতিশ্রুতি কাঁধে নিয়ে শপথ নিতে হয়েছে শান্তিতে নোবেলজয়ী . মুহাম্মদ ইউনূসের  নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে। বর্তমান সরকার মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফসল- যা শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে। পরে জনআকাক্সক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে এই আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পর্যবসিত হয় রাষ্ট্রের সর্বত্র সংস্কারের অঙ্গীকারের- যা সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজন পরিকল্পিতভাবে দীর্ঘপথ পরিক্রমার।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, গত ১৫ বছর ধরে চলমান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ       হাসিনার সরকারের সময়ে তথাকথিত গণতন্ত্র নির্বাচনের নামে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রহসনের নির্বাচন। ব্যক্তি স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, মানবাধিকার পদদলিত হয়েছে পদে পদে। এর পাশাপাশি বিরোধী মত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের নামে গুম, খুন, অপহরণ, মাসের পর মাস জেলে অন্তরীণ রাখার ঘটনা ঘটেছে। এর পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো যেমন- বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, পিএসসি, দুর্নীতি দমন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোপরি আর্থিক খাত- ব্যাংক-বিমা, শেয়ার মার্কেট প্রায় সর্বত্র একচ্ছত্র দলীয় আধিপত্য বিস্তার কায়েম করা হয়েছে।

যার ফলে, প্রায় সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসপ্রাপ্ত অথবা মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। রাষ্ট্রের প্রায় সর্বত্র এহেন অধঃপতিত অবস্থান থেকে পুনরায় জেগে ওঠা এবং সর্বত্র সংস্কার করা আদৌ সহজসাধ্য নয়। আশার কথা এই যে, অন্তর্বর্তী সরকার আস্তে ধীরে হলেও প্রায় সর্বত্র সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে।

নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে বহুবিধ চ্যালেঞ্জ। এগুলোর মধ্যে অন্যতমআমলাতান্ত্রিক সংস্কার, ব্যাংকিং খাতে আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, বাজার ব্যবস্থা মনিটরিং, পরিবহন ব্যবস্থা সর্বদা সচল রাখা, আমদানি-রপ্তানিতে গতি আনা, জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ইত্যাদি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরও অন্যতম দাবি ছিল সর্বত্র সংস্কার, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ২১ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ এই লক্ষ্য অর্জনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এর জন্য সর্বাগ্রে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রশাসনিক সংস্কারের ওপর। প্রশাসনিক সংস্কারে ইতোমধ্যে সাবেক সরকারের আমলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কিছু সিনিয়র সচিবসহ অনেক সচিবকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে পাঠানো হয়েছে বাধ্যতামূলক অবসরে। পরিবর্তে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কহীন দক্ষ যোগ্য সর্বোপরি পদবঞ্চিতদের পদোন্নতি দিয়ে শূন্যপদে বসানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসবের একটাই উদ্দেশ্যÑ প্রশাসনিক সংস্কার। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক একটি সৎ, দক্ষ, কর্মক্ষম গতিশীল প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলাই এর উদ্দেশ্য।

আর্থিক ব্যাংকিং খাতে গতি সংস্কারের নিমিত্ত অর্থ বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে অত্যন্ত দক্ষ সৎ অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে বসানো হয়েছে। সরকারের এই মুহূর্তের চ্যালেঞ্জ দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা গতি ফিরিয়ে আনা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিং খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করা, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা, খেলাপিঋণ আদায়, শেয়ার বাজারের নয়-ছয় বন্ধ করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি ইত্যাদি। গত এক মাসে প্রায় সর্বত্র সংস্কার কার্যক্রম ক্রমশ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। তবে এসবের সুফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে দেশবাসীকে।

×