ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

বিমানের নারিতা ফ্লাইট

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিমানের নারিতা ফ্লাইট

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশ বিমান বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু করেছিল ঢাকার সঙ্গে জাপানের সরাসরি যোগাযোগের জন্য নারিতা ফ্লাইট। উল্লেখ্য, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর চালু করা হয় নারিতা ফ্লাইটটি। এরপর প্রথম ৮ মাসেই বাংলাদেশ বিমান এই রুটে লোকসান দিয়েছে ১৬৬ কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ, গড়ে প্রতিমাসে ২০ কোটি টাকার বেশি লোকসান দিতে হচ্ছে বিমানকে। সম্প্রতি প্রথম ৮ মাসের যাত্রী পরিবহন, রাজস্ব আয় ও পরিচালনা ব্যয় নিয়ে একটি পর্যালোচনা করে বিমানের সংশ্লিষ্ট শাখা।

তাতেই বিমানের এই ভয়াবহ লোকসানের বিষয়টি উঠে এসেছে। উল্লেখ্য, টানা লোকসানের মুখে ২০০৬ সালে ঢাকা-নারিতা ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ। এর ১৭ বছর পর কোনো রকম বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই পুনরায় চালু করা হয় ঢাকা-নারিতা ফ্লাইট। এর পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছিলেন বিমানের তৎকালীন সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন)।

দুঃখজনক হলো, এটিকে আবার তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের কৃতিত্ব হিসেবে প্রচার করা হয়। এ বিষয়ে তৎকালে সংশ্লিষ্ট দুজনের কাছে জানতে চাইলে দুজনেই এড়িয়ে যান প্রশ্নোত্তর। 
লোকসানের কারণে ২০১৫ সালে বিমানের রোম ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। চলতি বছরের মার্চ মাসে রোম ফ্লাইট নতুন করে চালু করার পর এই গন্তেব্যেও প্রতিমাসে প্রায় ১৫ কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে বলে জানায় বিমানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নিয়মিত এত বিপুল লোকসানের অন্যতম কারণ, প্রায় অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে ফ্লাইট পরিচালনা।

দ্বিতীয়ত, অন্যান্য বিমান সংস্থার তুলনায় প্রায় আড়াইগুণ কম ভাড়া নির্ধারণ। বিমান কর্তৃপক্ষের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির এহেন দুর্গতি। এ সম্পর্কে বিমানের একজন সাবেক জ্যেষ্ঠ বৈমানিক ও বাংলাদেশ এয়ারলাইনস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি বলেন, কাউকে জবাবদিহি বা শাস্তির আওতায় না আনার জন্য দিনের পর দিন এমনটাই চলে এসেছে বিমানে।

ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ বিমান। এখন সরকার পরিবর্তন হয়েছে। নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মো. সাফিকুর রহমানকে। সময় এসেছে দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা। বাংলাদেশ বিমানের টপ-টু বটম সর্বত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা আবশ্যক। 
অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাদ দিয়ে যোগ্য, কর্মঠ ও সৎ কর্মীদের বাছাই করে যথাযোগ্য পদে নিয়োগ দিতে হবে। উল্লেখ্য, অযোগ্যতা ও দুর্নীতির অভিযোগে এর আগে অপসারণ করা হয়েছে বিমানের এক এমডিকে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বিমানকে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে লাভজনক করে তোলার মতো দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বসহ ব্যবস্থাপনা বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানে প্রায় নেই।

টিকিট বিক্রির টাকা লোপাট থেকে শুরু করে সেবার মান, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, পাইলটের অদক্ষতা ও নিয়োগ দুর্নীতি প্রায় সবই ওপেন সিক্রেট। সে অবস্থায় খোল নলচে পাল্টে ফেলতে হবে বিমানের। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানে উড়োজাহাজের সংখ্যা ২১টি। এর মধ্যে তিনটি লিজকৃত। বিমানের লাভ-লোকসান নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। এর অবসান হওয়া দরকার। এর পাশাপাশি চোরাচালান বন্ধসহ বিমান এবং বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরি ও অত্যাবশ্যক।

×