ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

শ্রেণিকক্ষে প্রত্যাবর্তন

-

প্রকাশিত: ২০:৩২, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শ্রেণিকক্ষে প্রত্যাবর্তন

সম্পাদকীয়

শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানার্জন। বিদ্যাপীঠে শিক্ষার্জনে যেসব শিক্ষার্থী আসে, তাদের একমাত্র কাজ কি শ্রেণিকক্ষে অবস্থান ও শিক্ষকের পাঠদান অনুসরণ? সেটি যে নয়, এ কথা সর্বজনবিদিত। সমাজ ও দেশের প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরাই এগিয়ে আসে সবার আগে। কেননা, তারাই তরুণ শক্তি, তারুণ্যের বল।

সমাজ ও রাষ্ট্র নানা সংকট ও ক্রান্তিকালে তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করে ইতিবাচক ভূমিকা। সে কারণেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পুরোভাগে থাকে ছাত্ররা, রক্ত দেয় তারা। একাত্তরের রণযোদ্ধা হওয়ার ডাক তারা উপেক্ষা করতে পারে না। সাম্প্রতিক কোটাবিরোধী আন্দোলন যখন শাসককে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিগণিত করল, তখন ছাত্ররাই এসে দাঁড়াল বন্দুকের নলের সামনে। দেশের ডাকে ছাত্ররা সাড়া দেবে, আবার প্রয়োজন পূরণ হলে ছাত্ররাই আবার ফিরে যাবে শ্রেণিকক্ষে। এটাই যথার্থ বিবেচনা।

বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান সুন্দরভাবে ব্যক্ত করেছেন এবং শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘তোমাদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই এখন সময় পড়াশোনায় ফেরার। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে। তোমাদের ক্লাস ও ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। কেননা, বিপ্লবের সুফল ঘরে তুলতে আমাদের একটি সুশিক্ষিত ও দক্ষ প্রজন্মের দরকার।’
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এক বার্তায় এমন আহ্বান জানানোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের তরুণ বিপ্লবীরা দেশের মানুষের মনে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়েছে, তা পূরণে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শহীদদের আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করতে চাই। এক নতুন যুগের সূচনা করতে চাই।’

শিক্ষাঙ্গনকে দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রাখার প্রসঙ্গটি নানা সময়ে উচ্চারিত হয়ে আসছে। দেশের প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা অবশ্যই স্ব স্ব ভূমিকা পালন করবে, কিন্তু দলীয় অন্ধ লেজুড়বৃত্তি তাদের আসল কাজ থেকে বিরত রাখে। বলা নিষ্প্রয়োজন, এই কাজটি হলো অধ্যয়ন বা শিক্ষাগ্রহণ। শিক্ষাসমাপ্তির পরই শিক্ষার্থীরা কর্মজীবনে প্রবেশ করবে। তাই নিজেদের সুযোগ্য করে তোলায় অগ্রাধিকার দিতে হবে শিক্ষার্জনের ওপরেই।

পক্ষান্তরে শিক্ষকদের বেলায়ও একই নিয়ম অনুসরণীয় হওয়া প্রত্যাশিত। সম্মানিত শিক্ষকগণ পরোক্ষভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করলে কিংবা আনুগত্য প্রদর্শন করলে সেটি শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশকে প্রভাবিত করবে, এটাই স্বাভাবিক। দেশের উচ্চবিদ্যাপীঠগুলোর শিক্ষকদের ভেতর যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিদ্যমান দেখা গেছে, সেটি হলো স্পষ্টতই প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের অনুসারী হওয়া। এটি কি কাক্সিক্ষত ছিল?

আন্দোলনকালে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন ঘুমহীন রাত কাটিয়েছে শিক্ষার্থীরা। অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের পর দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাদের উপাসনালয় পাহারা দিয়েছে শিক্ষার্থীরাই। শুধু তাই নয়, সারাদেশে ট্রাফিক পরিচালনা করার দায়িত্বও নিয়েছিল তারা। এসব কাজে যে তাদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

তাই এখন সময় অবশ্যই পড়াশোনায় ফিরে যাওয়া। শিক্ষক অভিভাবকরাও অনুধাবন করছেন যে, পাঠ্যক্রম সুসম্পন্ন করার জন্য শিক্ষার্থীদের অনেক সময় ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে। শিক্ষাবর্ষের সময়পরিধির বাধ্যবাধকতা বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব পড়ালেখায় শিক্ষার্থীরা পূর্ণ মনোনিবেশ করবে- এটাই প্রত্যাশা।

×