ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব

ড. মো. মোরশেদুল আলম

প্রকাশিত: ২১:০৬, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব

.

গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ইসরাইল হামাসের মধ্যে জিম্মি মুক্তিবিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষর করানোর জন্য প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরাইল গিয়েছিলেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নিয়ে ৯ম বারের মতো ব্লিঙ্কেন ওই অঞ্চলে সফরে গিয়েছেন। অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে নাটকীয়তা যেন কোনোভাবেই থামছে না। মধ্যপ্রাচ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সহায়তায় একাধিকবার বৈঠক হলেও বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো স্থায়ী সুরাহা হয়নি। গত বছর অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলের আগ্রাসনে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত বার যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলেছে।

কাতার, তুরস্ক, মিসরসহ যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধবিরতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইসরাইলের কঠিন শর্ত নানা টালবাহানায় সেসব প্রস্তাব বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করেনি। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে একাধিকবার প্রস্তাব উঠেছে। গাজায় প্রথম যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু হয় ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর। সে সময় চারদিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ওঠে। ১৫০ জন বন্দি ফিলিস্তিনির বদলে ৫০ জন ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তাও দেওয়ার কথা বলা হয়। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সাময়িকভাবে মেনে নিলেও যুদ্ধ বন্ধে তিনি অস্বীকৃতি জানান। চারদিন পর দখলদার ইসরাইল আবার পূর্ণমাত্রায় গাজায় আক্রমণ শুরু করলে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর যুদ্ধবিরতির ২য় আলোচনা হয়।

গাজার সশস্ত্র রাজনৈতিক বাহিনী হামাস জানায়, যুদ্ধবিরতি নিয়ে পরবর্তী আলোচনা ভেস্তে যাচ্ছে। কেননা, হামাস চাইছিল ইসরাইলের আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ হোক এবং সকল ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হোক। কিন্তু এতেও ইসরাইল অস্বীকৃতি জানায়।

ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের কারণে ৩য় যুদ্ধবিরতির আলোচনা কার্যকর হয়নি। কারণ, ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাবে ওয়াশিংটন ভেটো দেয়। এরপর মিসর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ধাপে হামাস যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়। সেখানে স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধ, ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তি, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশসহ আরও কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখ ৪র্থ বারের মতো যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলে। সময়ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে যুক্তরাষ্ট্র নাকচ করে দেয়। নেতানিয়াহুও যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে স্বাগত জানায়। মার্চ মাসের ২৬ তারিখ ৫ম বারের মতো যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। আবার ইসরাইলকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তারা সমর্থনও জানায়। এরপর মে মাসের তারিখ মিসর কাতারের মধ্যস্থতায় আবারও একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব আসে। সেই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ধীরে ধীরে গাজা থেকে সৈন্য ইসরাইল প্রত্যাহার করবে।

পাশাপাশি গাজা পুনর্গঠনেও সাহায্য করবে। কিন্তু ইসরাইল কখনোই পুরোপুরি যুদ্ধবিরতি চায়নি। প্রস্তাবের পরই রাফাহ আক্রমণ শুরু করে ইসরাইল। ৩১ জুলাই ইরানে হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুতে থমকে গিয়েছিল যুদ্ধবিরতির ৭ম বারের আলোচনা। এরপর ৮ম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত না করতে ৫টি কঠিন শর্ত প্রদান করেন। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো : হামাসের সীমান্ত অতিক্রম প্রতিরোধ, রাফাহ সীমান্তের ওপর ইসরাইলি নিয়ন্ত্রণ, ইসরাইলি বন্দিদের তথ্য ফাঁস এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের নির্বাসন। ইসরাইল প্রদত্ত এসব শর্ত যুদ্ধবিরতির অন্তরায় ছিল। হামাস এক বিবৃতিতে গাজার যুদ্ধপরবর্তী যে কোনো সম্ভাব্য পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি জনগণের ইচ্ছার বিরোধী যে কোনো পদক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সেই সঙ্গে বলেছে যে, গাজার পরিচালনা বিষয়ে আরোপিত কোনো নেতৃত্ব বা অভিভাবকত্ব ফিলিস্তিনি জনগণ মেনে নেবে না। কারণ, ধরনের কোনো কিছু আরোপ করা হবে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা নিজ ভাগ্য নির্ধারণের অধিকারের লঙ্ঘন। 

গাজায় চলমান যুদ্ধের অবসান বন্দি মুক্তির চুক্তি প্রস্তাব সম্ভবত শেষ সুযোগ হতে পারে বলে ইসরাইল হামাসকে সতর্ক করেছেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। গত ১৯ আগস্ট ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি কথা বলেন। এই সফরের কিছুদিন আগেই ইসরাইল হামাসের মধ্যকার বৈরিতা ব্যবধান দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ীভাবে দূর করার লক্ষ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছুটা পরিবর্তিত নমনীয় এক প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন। এর আগে কাতারের রাজধানী দোহায় গাজাযুদ্ধ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছিল। কাতারে আলোচনা থেমে যাওয়ার পর হামাস সন্দেহ প্রকাশ করেছিল যে, কোনো চুক্তি সম্ভব হবে না। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেওয়া নতুন একটি প্রস্তাবের ভিত্তিতে আলোচনার পুনরায় শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। মূলত, এরপর থেকেই যুদ্ধবিরতি বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তির বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে আসছে। ব্লিঙ্কেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাতের আগে বলেন, এই মুহূর্তটি সিদ্ধান্তমূলক।

সম্ভবত বন্দি মুক্তি যুদ্ধবিরতি অর্জনের সবচেয়ে ভালো শেষ সুযোগ এটি। ইসরাইল হামাসের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধের অবসান, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময়ের চুক্তি। ইসরাইল হামাসের সামরিক  রাজনৈতিক শক্তি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছে। অন্যদিকে হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতি শর্তেই চুক্তিতে সম্মত হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। হামাস নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টা নস্যাৎ করার অভিযোগ করেছে।

এদিকে ইসরাইল লেবাননের হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘর্ষের ঝুঁকিতে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা বাড়ছে। ব্লিঙ্কেন সতর্ক করেছেন, যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার মতো কোনো উসকানি যেন না ঘটে। গাজায় যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে নতুন করে আর আলোচনা না করে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন চায় হামাস। অন্যদিকে, ব্রিটেন, ফ্রান্স জার্মানি আর দেরি না করে ইসরাইল হামাসের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের জন্য যৌথ আবেদন জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে হামাস মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানায়। এতে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে গত জুলাই যে যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা হয়েছে, আমরা সেটার বাস্তবায়ন চাই। যদিও যুদ্ধবিরতি বিষয়ে দৃশ্যমান তেমন কোনো অগ্রগতি নেই বলে হামাস জানিয়েছে। সংগঠনটি জোর দিয়ে বলছে যে, গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলি সৈন্যদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে কি-না, সেটি নিয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। সব  মিলিয়ে যুদ্ধবিরতি যে চুক্তির কথা বলা হচ্ছে, সেটি একটিভ্রমবলে হামাস মন্তব্য করেছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি আলোচনার কথা বলে ইসরাইলকে গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সময় দিচ্ছে বলে ১৯ আগস্ট এক বিবৃতিতে অভিযোগ করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস উল্লেখ করে। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ঘোষণা দেন, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন। হামাসকেও ওই চুক্তির প্রস্তাব গ্রহণের তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযোগ করে হামাস এমন মন্তব্য করেছে। ব্লিঙ্কেনের প্রস্তাবটিতে নেতানিয়াহুর ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটেছে উল্লেখ করে হামাস একে সেতুবন্ধের প্রস্তাব বলে অভিহিত করেছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরাইলের নতুন শর্তের বিশদ বিবরণ হামাস প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে গত ৩১ মে জো বাইডেনের প্রস্তাবিত চুক্তি ১১ জুন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সমর্থিত চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে নেতানিয়াহুকে চাপ দেওয়ার জন্য তারা বিশ্বকে আহ্বান জানিয়েছে। ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তি গাজা যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে আলোচনাকেসম্ভবত শেষ সুযোগহিসেবে ব্লিঙ্কেন বর্ণনা করেছিলেন।

যুদ্ধবাজ ইসরাইল অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় আলোচনায় তাদের অবস্থান আগেই জানান দিয়েছে। এবার গাজা উপত্যকায় চলমান আগ্রাসন আরও বৃদ্ধি করার জন্য নেতানিয়াহু প্রশাসন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। গত ১৮ আগস্ট ইসরাইলি সংবাদ মাধ্যমওয়ালাজানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ইসরাইলের অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য দেশটির নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা সম্প্রতি সামরিক বাহিনীকে গাজায় তাদের অভিযান জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটির মতে, পদক্ষেপটি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ইসরাইল সফরের সঙ্গে মিলে যায়।

ইসরাইলের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আশা করেন যে, তিনি হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য তেলআবিবের ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করবেন। বিগত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিসর গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় নিশ্চিত করতে এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরাইল হামাসের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধ বন্ধে হামাসের দাবি পূরণে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা স্থবির হয়ে পড়েছে। এর আগে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাব পাস হয়। সেই প্রস্তাব লঙ্ঘন করে ইসরাইল গাজায় ক্রমাগত তার নৃশংস আক্রমণ গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে।

এতে আন্তর্জাতিক নিন্দার সম্মুখীন হলেও যুদ্ধ বন্ধ করছে না দেশটি। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, বর্বর ইসরাইলি বাহিনীর ক্রমাগত হামলায় গাজায় ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ৪০ হাজার ১৩৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন; যাদের বেশিরভাগই নারী এবং শিশু। এছাড়া প্রায় ৯২ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। ইসরাইলি বাহিনীর আক্রমণে ১০ মাসেরও বেশি সময়ে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের অবরোধের মুখে গাজার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপ হয়ে পড়ে আছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নারী শিশু হত্যাকারী ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। যা তাকে অবিলম্বে রাফাহ শহরে তার সামরিক অভিযান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে (ডিএনসি) গত ১৯ আগস্ট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার প্রদত্ত ভাষণে গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ শেষ করে জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জিম্মিদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে, গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি নিরাপত্তা আনতে কাজ চালিয়ে যাব। আমরা যুদ্ধ শেষ করতে এখন চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করছি। জিম্মিদের পরিবারের নিকট পুনরায় ফিরিয়ে দিতে এবং গাজায় মানবিক স্বাস্থ্য খাদ্য সহায়তা বৃদ্ধি করতে কাজ করছি আমরা। ফিলিস্তিনি জনগণের বেসামরিক দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করছি আমরা।

যার মাধ্যমে এই যুদ্ধের সমাপ্তি হবে।বাইডেনের ভাষণ শুরুর আগে শিকাগোতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারী গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধে মার্কিন সমর্থন বন্ধ করার জন্য শিকাগোতে জড়ো হয়েফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান দিয়ে মিছিল করে। প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রদত্ত ভাষণে বলেন, যে প্রতিবাদকারীরা রাস্তায় বেরিয়েছে, তাদের একটা পয়েন্ট আছে। উভয় পক্ষের অনেক নিরীহ মানুষ নিহত হচ্ছে, কাজেই আমি একটি প্রস্তাব পেশ করেছি যা আমাদের অক্টোবরের পর থেকে এটি করার কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।

ফিলিস্তিন স্বাধীন না হলে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ১৯ আগস্ট জার্মানির উত্তরাঞ্চলীয় শহর ব্রেমেনের টাউন হলে আয়োজিত জনসভায় প্রদত্ত ভাষণে তিনি বলেন, জার্মানি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে অনড় অবস্থানে রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত অস্থিতিশীলতা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় হচ্ছে দ্বিরাষ্ট্র সমাধান। শান্তিপূর্ণভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন এবং ইসরাইলের পাশাপাশি সেই রাষ্ট্রকে চলতে দেওয়ার মধ্যেই মুক্তির উপায় নিহিত রয়েছে। ফিলিস্তিনি জাতি যদি স্বাধীনতার আশা হারিয়ে ফেলে, তাহলে গোটা মধ্যপ্রাচ্য বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। তিনি আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে এটাই ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানির অবস্থান। যে যতই সমালোচনা করুক, জার্মানি এই অবস্থানে অনড় থাকবে। জুলাই মাসে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবির পক্ষে অবস্থান নিয়ে পশ্চিম তীর অঞ্চলে ইসরাইলের বসতি খালি করার নির্দেশ প্রদান করে।

আইসিজে রায় প্রদানের পর জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি জানায়, এখন থেকে ইসরাইলের দখলদারী নীতিকে জার্মানি সমর্থন করবে না। জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ান ওয়াগনার বিষয়ে বলেন, জার্মানি ইসরাইলকে সমর্থন করে, কারণ বার্লিন মনে করে একটি ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলকে সমর্থন করা জার্মানির ঐতিহাসিক দায়িত্ব। তার মানে কিন্তু এই যে, জার্মানি ইসরাইলের দখলদারী নীতিকেও সমর্থন করবে।

গাজার পানি ¦ালানি সম্পদ দখলের জন্যই বর্বর ইসরাইলি বাহিনী সেখানে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে বলে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে। গণমাধ্যমগুলো বলছে, গাজার পানি ¦ালানি সম্পদ দখলের জন্যই ইসরাইল সেখানকার ভবনগুলো অবকাঠামোগুলো ধ্বংস করছে এবং গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে।

এতে করে ফিলিস্তিনিরা গাজা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবে। আর এভাবেই ইসরাইলি পুরো গাজার ওপর দখলদারিত্ব কায়েম করে সেখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করতে চায়। তাই আঞ্চলিক আন্তর্জাতিক সংগঠনসহ বিশ্বে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর উচিত, যে কোনো ভাবেই ইসরাইলি আগ্রাসন গণহত্যা বন্ধ করে ফিলিস্তিনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। একই সঙ্গে দ্বিরাষ্ট্র তত্ত্বের আলোকে ফিলিস্তিনকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করা। তাহলেই কেবল মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।

লেখক : শিক্ষক প্রাবন্ধিক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

×