ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সম্পর্ক

ড. মো. আইনুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সম্পর্ক

ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত ব্যাপক

ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত ব্যাপক, বিস্তৃত ও বহুমাত্রিক, যা গত দুই দশকে দুই দেশের শাসকশ্রেণির নিপীড়নমূলক ও কর্তৃত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং একে অপরের সহযোগী ভূমিকার কারণে ক্রমশই নাগরিক বিচ্ছিন্নতায় রূপ নিয়েছে, যা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মাধ্যমে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে।

ভারতের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশী জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করে চরম কর্তৃত্ববাদী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা করার ভুল নীতির কারণে এখন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য অসম, মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরার সঙ্গে যোগাযোগ ও বাণিজ্য উন্নত রাখতে প্রবেশাধিকার এবং বঙ্গোপসাগরের পথ ব্যবহারের সুযোগ গুরুতর প্রশ্নের মুখে পড়বে; যা ভারতের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।

সম্পর্কের এই টানাপোড়েনের অর্থ বাংলাদেশের স্থলপথ এবং চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনে বিলম্ব এবং একই সঙ্গে ২০২৩ সালের নভেম্বরে চালু হওয়া আগরতলা-আখাউড়া আন্তঃসীমান্ত রেলসংযোগে সমস্যা তৈরি হওয়া। ভারতের ব্যবসায়ী মহলও বলছে, বাংলাদেশের পতিত সরকারকে অন্ধ সমর্থন দিয়ে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক এবং ভারতের অর্থ ও বাণিজ্য সম্ভাবনাকে গুরুতর ঝুঁকির মুখে ফেলা হয়েছে। 
আন্তর্জাতিক সম্পর্র্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত হওয়া বাংলাদেশের পতিত সরকারই ছিল এই অঞ্চলে ভারতের সর্বশেষ, একমাত্র ও ঘনিষ্ঠতম মিত্র। যে কারণে এই দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক, বিশেষত অর্থিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিবেশী অনেক দেশসহ বিশ্বব্যাপী আলোচনার সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হওয়ায় অনেক দেশ তার ভূরাজনৈতিক কৌশল ব্যবস্থাকে নতুন ধাঁচ দেওয়ার চেষ্টা করছে।

অপরদিকে সমাজ-অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, ঘনিষ্ঠতম দুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কে বর্তমান গুরুতর সংকটের মূলে একদিকে রয়েছে ২০১৪ সালে ভারতের উগ্র জাতীয়তাবাদ ও সাম্প্রদায়িক চেতনাধারী মোদি সরকারের অধীনে গৃহীত ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’। যেখানে ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ নীতিতে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে মৌর্য সাম্রাজ্য (৩২৬-২৯৮) প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধান পরামর্শদাতা ও আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক চিন্তাবিদ চানক্য সেন বা কৌটিল্যের অনেক দর্শনের মধ্যে একটিকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

এই দর্শনের মূল সুর হলো কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্র কর্তৃক যদি আক্রমণের ভয় থাকে তাহলে তাকে ছলে-বলে-কৌশলে বন্দি ও হত্যা করা। আর এই নীতির কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে আয়তনের দিক দিয়ে বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ দেশ ভারতের (২,৯৭৩,১৯০ বর্গকিলোমিটার) সঙ্গে তার চারপাশের প্রতিবেশী সব রাষ্ট্র যথাÑ বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, চীন, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সম্পর্ক ক্রমশই তিক্ততায় রূপ নিয়েছে। তারা সবাই ভারতকে শত্রু অথবা অনিষ্টকারী দৃষ্টিতে দেখছে। এই অবস্থা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

অপরদিকে, বাংলাদেশ ৫৩ বছর আগে স্বাধীন হওয়ার সময় থেকেই ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়’Ñএর সাংবিধানিক আদেশ অনুসারে একমাত্র ইসরাইল ব্যতীত বিশ্বের আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে সহযোগিতামূলক উদ্যোগকে উৎসাহিত করেছে। যেখানে পারস্পরিক সহযোগিতা ও শ্রদ্ধাবোধ সামগ্রিক উন্নয়নের অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ তার তিন দিক থেকে বেষ্টন করা ভারতের সঙ্গে আর্থিক, বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ সম্পর্কের অংশীদার হয়েছে।

কিন্তু বিগত দুই দশকে দুই দেশের শাসকদলের সম্পর্কের গভীরতা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ও শক্তিশালী হয়েছে। যার মূল দর্শন ছিল ভারতের আর্থিক ও বাণিজ্যিক লাভবান হওয়ার বিনিময়ে বাংলাদেশের একনায়কতান্ত্রিক ক্ষমতাকে টিকে রাখা। আর এ কারণেই বাংলাদেশ-ভারত অর্থ ও বাণিজ্য সম্পর্কে এখন গুরুতর টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন সংস্থার সাম্প্রতিক সব হিসাব-নিকাশে। 
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ভারত থেকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পণ্য আমদানি হয়, যা মোট আমদানির ১৮ শতাংশ। চীন থেকে আসে মোট আমদানির ২৫ শতাংশ। ভারত থেকে যত অর্থমূল্যের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ রপ্তানি করে তার ৭ ভাগের মাত্র ১ অংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি বিল পরিশোধের পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে ভারত থেকে ৪৭৪ কোটি (৪.৭৪ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ।

এর পরের ১০ বছরে আমদানি গুণিতক হারে বেড়েই চলেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৬৯ কোটি (১৩.৬৯ বিলিয়ন) ডলারে। তবে ডলার সংকটের কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরায় বাংলাদেশের সার্বিক আমদানি ১৬ শতাংশের মতো কমেছিল।

তারপরও ভারত থেকে আমদানি হয় ১ হাজার ৬৩ কোটি (১০.৬৩ বিলিয়ন) ডলারের। বাংলাদেশের আমদানি করা ভারতীয় পণ্যের তালিকার শীর্ষে আছে তুলা। মোট আমদানি খরচের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই হয় বস্ত্র খাতের এই কাঁচামাল আমদানিতে। 
ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানির এই চিত্রের বিপরীতে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ অনেক কম। তারপরও গত কয়েক বছর ধরেই রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে, ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে, যা বেসরকারি সংস্থাগুলো আংশিক সত্য বলে মত দিয়েছে এবং বলছে, এই দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্যে অতীতের মতো এখনো আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশী পণ্য ও সেবার রপ্তানি গন্তব্যের তালিকায় ভারতের স্থান ছিল দ্বাদশ। ওই বছর ভারতে ৮৭ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি হয়েছিল। পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতের অবস্থান এখন সপ্তম। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৯৯ কোটি ডলারের পণ্য ভারতে রপ্তানি করে বাংলাদেশ। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে ২১৩ কোটি (২.১৩ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই ভারতের বাজারে পণ্য রপ্তানি থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হয়নি। ইপিবির সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ভারতের বাজারে ১২৭ কোটি ৩৯ লাখ (১.২৭ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এই অংক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি থেকে ১৫২ কোটি ৭৪ লাখ (১.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় এসেছিল। 

বাংলাদেশ-ভারত অর্থ ও বাণিজ্য আলোচনায় আরও তিনটি অন্যতম খাত- সেবা, বিনিয়োগ ও রেমিটেন্স। এই তিনটি খাতের ৯৯ শতাংশই ভারতের অনুকূলে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশে ভারতের বিশাল ভোক্তা বাজারে প্রসারের পাশাপাশি কাঁচামাল রপ্তানি, ভারতীয়দের দক্ষ শ্রমবাজার তৈরি এবং ভারতে বাংলাদেশীদের চিকিৎসা ও মেডিক্যাল ট্যুরিজম ইত্যাদি খাত বিগত দুই দশকে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে।

কিন্তু এসব খাতে বাংলাদেশের অবস্থান তৈরি ও উন্নয়নের পথে ভারত নানাভাবে প্রতিবন্ধক দিয়েছে এবং তা করা হয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় আইনের বেড়াজাল তুলে। ফলে সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশ বিশাল প্রতিবেশী দেশ ভারতে বাণিজ্য সম্প্রসারণের সু্িবধা কাজে লাগাতে পারেনি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করেছে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি ও বিশাল বাজারের দেশ জাপান, জার্মানি বা ফ্রান্সেও সে পরিমাণ রপ্তানি করতে পারেনি।

অন্যদিকে বাংলাদেশ যোগ্যতা থাকলেও ভারতে নামমাত্র রপ্তানি করতে পেরেছে। এ কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারতের ইকোনমিক টাইমস, ইন্ডিয়া টুডেসহ অনেক গণমাধ্যমে গত আগস্টের মাঝামাঝি তাদের প্রতিবেদনে আভাস দিয়েছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও জনগণের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে বাংলাদেশে ভারতের অর্থ ও বাণিজ্য অঙ্গনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যার বড় একটি ক্ষেত্র রেমিটেন্স।

২০২৩ সালে বাংলাদেশ ভারতের জন্য চতুর্থ বৃহত্তম রেমিটেন্সের উৎস ছিল। ২০১৭ সাল থেকেই ভারত ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাংলাদেশ থেকে রেমিটেন্স আয় করতে শুরু করে, যা পরের বছরগুলোয় দ্রুতহারে বাড়তে থাকে। ধারণা করা হয়, স্পর্শকাতর হওয়ায় ভারতের সরকারি তরফে বাংলাদেশ থেকে প্রকৃত রেমিটেন্স আয়ের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করা না হলেও দেশটির সরকারের তরফে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ সালে ভারতের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ থেকে ২৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আয়।

২০১৭ সাল থেকে ২ বিলিয়ন ডলার করে হার বৃদ্ধির প্রবণতা বিবেচনায় নিলে বলা যায়, ভারত ২০২৩ অর্থবছরে কমপক্ষে ৩০ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আয় করেছে বাংলাদেশ থেকে। মূলত পোশাক শিল্পের মার্চেন্ডাইজিং, ফ্যাশন ডিজাইনিং ও ক্রেতা হ্যান্ডলিং খাত থেকে বেশি রেমিটেন্স নেয় ভারতীয়রা, যার ৮০ শতাংশই কোনো ধরনের কর-ট্যাক্স দেয় না। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসাবে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে বাংলাদেশে ৫ লাখ ভারতীয় নাগরিক অবস্থান করছেন।

আবার কোনো সংস্থার মতে এই সংখ্যা ২৬ লাখ। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের হিসাবে, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয়দের সংখ্যা ১ লাখ ৭ হাজার ১৬৭ জন। এদের মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ ভিসায় রয়েছেন ১০৪৮৫ জন, চাকরি ১৪৩৯৯ জন, স্টাডি ৬৮২৭ জন এবং ট্যুরিস্ট ভিসায় ৭৫ হাজার ৪৫৬ জন। ভারতীয়দের বাংলাদেশে বৈধভাবে চাকরি করার সুযোগ দেওয়া হলেও বাংলাদেশীদের সে দেশে চাকরির কোনো সুযোগ নেই।

কারণ, ভারতীয় আইনে বিদেশীদের সেখানে চাকরি করা নিষিদ্ধ। কাজেই বলা যায়, ভারত থেকে বাংলাদেশের রেমিটেন্স আয় শূন্য। অপরদিকে বাংলাদেশীদের কল্যাণে ভারতের ট্যুরিজম ও চিকিৎসা খাত রমরমা ব্যবসা করছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সরকার জানায়, ভারতীয় দূতাবাস অন্তত ১৭ লাখ বাংলাদেশীকে চিকিৎসা ও ভ্রমণ ভিসা দিয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি হিসাব বলছে, ভারতীয় ট্যুরিজম ও চিকিৎসা খাত বাংলাদেশীদের মাধ্যমে প্রতিবছর অন্তত ২৫ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। অপরদিকে বাংলাদেশের ভারতীয়দের মাধ্যমে এই খাতে আয় ১ মিলিয়ন হয় কি না তা নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে।
উল্লিখিত তথ্যাবলি বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, আন্তঃরাষ্ট্রীয় অর্থ-বাণিজ্যের মূল পাঁচটি খাত অর্থাৎ আমদানি, রপ্তানি, সেবা, বিনিয়োগ ও রেমিটেন্সে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক পুরোপুরি অসম। একটি বৈষম্যনির্ভর ও শোষণকেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থাকে একচেটিয়া ও নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে এবং দ্বিপক্ষীয় নানা ইস্যুতে যেভাবে ভারত সরকার চরম স্বার্থপর আচরণ করেছে তাতে বাংলাদেশ ও ভারতের সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের সম্পর্কে বড় ধরনের দূরত্ব ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে।

তারপরও এই দুই দেশকে সহাবস্থানমূলক চিন্তা-ভাবনাকে প্রাধান্য দিতে হবে। সব পক্ষকেই বুঝতে হবে পারস্পরিক স্বার্থকে শ্রদ্ধা করা এবং মূল্য দেওয়া প্রতিবেশীর স্বচ্ছন্দে জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য। কারণ, এমন তো নয় যে, এই দুই দেশ তার সম্পর্কের অবনতি ঠেকাতে নিজস্ব ভূখ-গত অবস্থান আরেক জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। তবে সম্পর্কে আস্থা আনতে হলে পতিত সরকারের সুবিধাভোগী ভারতকেই আগে উদ্যোগী হতে হবে।

কারণ, জেনারেশন-জেড নামে বাংলাদেশের যে প্রজন্মের মাধ্যমে রাজনীতি ও সমাজে পরিবর্তনের ধারা শুরু হয়েছে, তাদের কাছে ভারতের ভূমিকা তীব্রভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। এই প্রজন্মই ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। 

লেখক : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশে অর্থনীতি সমিতি

×