
.
দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিবছরই। দেশের জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ যুবক। তাদের উৎপাদনশীল খাতে কাজে লাগাতে পারলে উন্নয়নের গতি হবে ত্বরান্বিত। এ জন্য নতুন সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো দেশব্যাপী উদ্যোক্তা তৈরি করা। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে প্রায় ৫০ হাজার কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি করবে কৃষি মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিকভাবে সাড়ে সাত হাজার উদ্যোক্তার প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে তৈরি করা হবে এসব উদ্যোক্তা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। টিস্যুকালচার ল্যাবরেটরি ও হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন এবং উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণে উত্তম কৃষি চর্চা, মূল্য সংযোজন, সাপ্লাই চেইন, মৌসমি ফসল উৎপাদন কৌশল, রপ্তানিনির্ভর কৃষি উৎপাদন ও বাজার তৈরি, যোগাযোগ ও নেতৃত্ব দক্ষতা তৈরি এবং অনলাইন মার্কেটিং ইত্যাদি বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। এ ছাড়াও উদ্যোক্তারা দীর্ঘমেয়াদি একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত হবেন। ‘কৃষি বায়োস্কোপ’ নামের সে প্ল্যাটফর্মের সদস্য প্রায় সাড়ে ৬ লাখ। মোট ৩৫৫টি ভিডিও ৯ কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে। এতে উদ্যোক্তারা আগ্রহী হচ্ছেন বাণিজ্যিক কৃষিতেও।
সম্ভাবনাময় কৃষি ক্ষেত্রে তরুণদের আগ্রহ বাড়াতে হবে। গ্রামীণ কৃষি ক্ষেত্রে শিক্ষিত উদ্যোক্তা এরই মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে পণ্য সরবরাহ, আর্থিক লেনদেন, হাঁস-মুরগির খামার, গবাদিপশুর খামার, নার্সারি, ফুলের চাষ, মাশরুম চাষ, শুঁটকি, গরু মোটাতাজাকরণ ইত্যাদি। তবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিমাণ দেশের সামগ্রিক বাজার চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট অপ্রতুল।
কৃষি স্টার্টআপ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। এসব স্টার্টআপ উৎপাদক ও ভোক্তা পর্যায়ে সংযোগ, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সমস্যা সমাধান, কৃষকদের আর্থিক সহায়তা, প্রশিক্ষণ, পণ্য সরবরাহ, বাজার সৃষ্টি, গবাদিপশু সম্পদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এসব কার্যক্রম করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে। এতে ২১ থেকে ৪৫ বছরের উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকার ঋণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর্থিক প্রাতিষ্ঠানিক আয়ের ১ শতাংশ এসব খাতে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার নির্দেশনাও রয়েছে।
এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। আমরা জানি, উচ্চ ফলনশীল ফসল বা প্রাণিসম্পদ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রেখে চলেছে। মূলত অধিক ফলন সম্ভাবনাসম্পন্ন বীজ, প্রাকৃতিক সম্পদ উন্নয়ন এবং সার সেচ ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে সম্ভব হয়েছে এ উন্নয়ন। বাংলাদেশ এখনো কৃষিনির্ভর। কৃষি খাতে দক্ষ উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে কৃষিকে আধুনিক ও সম্মানজনক পেশায় পরিণত করা আবশ্যক। শিক্ষিত যুবকরা যাতে নির্দ্বিধায় এ পেশায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।