ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

লোডশেডিং

-

প্রকাশিত: ২০:৫১, ১৭ আগস্ট ২০২৪

লোডশেডিং

সম্পাদকীয়

সাধারণত শুক্রবার ছুটির দিনে ঢাকায় তেমন বিদ্যুতের সমস্যা থাকে না। অর্থাৎ লোডশেডিং করা হয় না। কিন্তু গত শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় দিনের বেলায়ও কয়েক দফা লোডশেডিং হয়েছে। ভাদ্র মাসের শুরুতেই অসহনীয় গরম পড়ছে ঢাকায়। মাঝেমধ্যে অল্প সময়ের জন্য ছিটাফোঁটা বৃষ্টি হলেও গরম তেমন কমছে না। ফলে, নগরবাসীকে বাধ্য হয়েই এসির ব্যবহার করতে হচ্ছে। লোডশেডিংয়ে তাই মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। 
গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দরকার পড়ে গ্যাসের। কিন্তু গ্যাসের সরবরাহ বাড়ছে না। ফলে, উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। এর মধ্যে কারিগরি ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে কক্সবাজারের মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র। একই কারণে বন্ধ আছে ভারতের ঝাড়খ-ে নির্মিত আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট। এতে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। ফলে, গত কয়েক দিনে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বেড়েছে লোডশেডিং। তবে বেশি হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে, যেখানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। 
দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৭ হাজার মেগাওয়াট। সম্প্রতি দিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা ঘণ্টায় প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট। ঘাটতি হয়েছে দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি। ঢাকার বাইরে কোনো কোনো গ্রামে দিনে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে ভুগছে মানুষ। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানিয়েছে, কয়লাচালিত মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে।

কারিগরি ত্রুটির কারণে ১০ আগস্ট বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন। কয়লাচালিত ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট নিয়ে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র। গড়ে তারা প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল। মঙ্গলবার কারিগরি কারণে একটি ইউনিট থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন দিনে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। দ্রুত সমস্যা সমাধানে কাজ করছে তারা। উৎপাদনে ফিরতে আরও এক মাস লাগতে পারে। ফলে, লোডশেডিংয়ের সমস্যা থাকবে আরও কিছুকাল। 
পিডিবির (বিতরণ) সূত্র অনুযায়ী ঘাটতি থাকায় ঢাকা শহরের আশপাশ এলাকায় ও ঢাকার বাইরে লোডশেডিং হচ্ছে। এলএনজি টার্মিনাল চালু হলে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে। এছাড়াও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে দু’একদিনের মধ্যে উৎপাদন শুরুর কথা রয়েছে।  এতে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। কারিগরি ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্র যে কোনো সময় বন্ধ হতেই পারে।

সেক্ষেত্রে থাকতে হবে বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। এখন প্রয়োজন সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে আধুনিকায়ন জরুরি ও অত্যাবশ্যক। এ খাতে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়মও হয়েছে। স্বয়ংক্রিয় গ্রিড না থাকায় বিপর্যয়ের উৎস খুঁজে পেতেও বিলম্ব ঘটে। দেশব্যাপী অত্যাধুনিক সঞ্চালন লাইন স্থাপনসহ বিভিন্ন বিভাগভিত্তিক জাতীয় গ্রিড ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা না হলে এসবের সুফল পাওয়া যাবে না কিছুতেই। জনস্বার্থে যথাযথ ব্যবস্থাপনাসহ বিদ্যুৎ বিভাগ সেসব দিকে বিশেষভাবে জরুরি দৃষ্টি দেবে বলেই প্রত্যাশা।

×