ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৭ ভাদ্র ১৪৩১

স্বপ্ন হোক সত্যি

এ. আর. সালাউদ্দিন ফেরদৌস

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ১৪ আগস্ট ২০২৪

স্বপ্ন হোক সত্যি

ছাত্র-জনতার এক মহান অভ্যুত্থান

ছাত্র-জনতার এক মহান অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এক ঝাঁক মেধাবী বিপ্লবী তরুণের এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাঙালি জাতি ফিরে পায় তাদের বাকস্বাধীনতা। বিপ্লবের ঝড়ে  স্বৈরাচারী শাসন ভেঙে পড়েছে। ছাত্র-জনতার অক্লান্ত সংগ্রামে জন্ম নিয়েছে নতুন একটি বাংলাদেশ। কিন্তু এই বিজয় কেবল একটি শুরু, একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। দীর্ঘ ১৫ বছরের অন্ধকার থেকে বের হয়ে এসে আমরা আজ স্বাধীন শ্বাস নিচ্ছি। কিন্তু এই স্বাধীনতা খুব সহজে আসেনি।

বহু শহীদের রক্তের বিনিময়ে এসেছে এই বিজয়। আবু সাঈদ, মুগ্ধ, বাড়ির ছাদে খেলতে থাকা অবুঝ শিশু ও মায়ের সঙ্গে আতঙ্কিত দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকা বোন কিংবা ঘরের কোণে বসে পড়তে থাকা ভাইসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষ যাদের প্রাণ হারাতে হয়েছে। তাদের অকুতোভয় সংগ্রামের ফলস্বরূপ, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এ বিজয় অর্জন করে। তাই শহীদদের স্বপ্নকে সত্যি করে তুলতে হবে। 
ছাত্র-জনতার অক্লান্ত সংগ্রামে অর্জিত বিজয়ের পর  দেশবাসীর উল্লাস স্বাভাবিক। তবে এই উল্লাস যেন আনন্দে মাতাল হয়ে ভাঙচুর-লুটপাটের পথে না যায়,  সেদিকে সতর্ক থাকা জরুরি। দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমাদের সবারই এই দায়িত্ব নিতে হবে। কোনো ভাঙচুর-লুটপাটকে সমর্থন করা যাবে না।  কেননা ভাঙচুর-লুটপাট দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

জনগণের সম্পত্তি নষ্ট হয়, যার ফলে দেশের উন্নয়ন কাজে বাধা পড়ে। তাছাড়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে এবং সংখ্যালঘুদের দিকে বিশেষ  খেয়াল রাখতে হবে। বিজয়ের মধুরতার স্বাদ পেলেও আমাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ। ইতিহাস সাক্ষী, প্রতিটি বিজয়ের পরপরই কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য উঠে পড়ে লাগে। তাদের কারণে কষ্টার্জিত বিজয় কলুষিত হয়।

এই নতুন বিজয়কেও কলুষিত করার জন্য এমন কিছু স্বার্থান্বেষী মহল রয়েছে। তাই আমাদের সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে, যেন এই বিজয়কে কেউ অপব্যবহার করতে না পারে। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এ বিজয়ে শত্রুরা পরাজিত হয়েছে, কিছু পালিয়ে গেছে, কিন্তু তারা সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয়নি। এই পরাজিত শক্তি আমাদের বিজয়কে বিশ্ব দরবারে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবে।

আমাদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তাদের এই চক্রান্ত  মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠন। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। প্রতিটি নাগরিক যেন তার অধিকার সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করতে পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। আমাদের নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতা থেকে মুক্ত হতে হবে।

প্রতিহিংসার আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া যাবে না। দীর্ঘ ১৫ বছর পর আমরা বাকস্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি, তাই এখন সমালোচনাকে স্বাগত জানাতে হবে। কারও কণ্ঠরোধ করা যাবে না। আমাদের বিজয় তখন পূর্ণতা পাবে যখন আমরা একটি সমৃদ্ধ, সুখী ও সমতার দেশ গড়তে পারব। আসুন, সবাই মিলে কাজ করি, এই নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে

×