ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৭ ভাদ্র ১৪৩১

সবার অধিকার সমান

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ১৪ আগস্ট ২০২৪

সবার অধিকার সমান

সম্পাদকীয়

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত মঙ্গলবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেন। এদিন তিনি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের নেতাদের সঙ্গেও এক আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মতবিনিময় করেন। এ সময়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে তারা একটি লিখিত আবেদনপত্র পেশ করেন।

এতে সাম্প্রতিক দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক হামলা-সহিংসতা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ, দুর্বৃত্তদের বিচার, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ পুনর্বাসন এবং আহতদের সুচিকিৎসার দাবি জানানো হয়। প্রত্যুত্তরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই দেশে সবার সমান অধিকার। এটা সংবিধানে স্বীকৃত। ন্যায়বিচার হলে সবাই বিচার পাবেন। এ সময়ে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা এমন একটি দেশ গড়তে যাচ্ছি, যেটি হবে একটি পরিবার। যেখানে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। বিভেদ সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাই তার সরকারের লক্ষ্য।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর দেশের   বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে একাধিক স্থানে। হতাহতের খবরও আছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে এর ব্যাপকতা আরও বেড়ে যায়। কিছু স্থানে বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক হিন্দুদের উপাসনালয় পাহারা দেওয়ার উদ্যোগ দেখা গেলেও অধিকাংশ স্থান ছিল অরক্ষিত ও নিরাপত্তাহীন। ফলে স্বভাবতই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে হিন্দু সম্প্রদায়সহ দেশের প্রগতিশীল বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। এর প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন সংগঠন।

‘দেশটা আজও স্বাধীন নয়, আমার মন্দিরে হামলা হয়’, ‘হিন্দুদের নিরাপত্তা চাই’ শীর্ষক ব্যানার-ফেস্টুন ও স্লোগানে উত্তাল লাখো জনতার সমাবেশ থেকে মোট আট দফা দাবি জানানো হয় অন্তর্বর্তী সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের কাছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম- আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব সাম্প্রদায়িক হামলা, সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে সেসব ঘটনার যথাযথ তদন্তসহ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন করতে হবে।

একই সঙ্গে হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের দাবি জানানো হয়। অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন ইত্যাদি। 
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান শান্তিতে নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব এবং প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার ধারক-বাহক। তার কাছে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশ ও বিশ্বের সব মানুষ সমান। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই তিনি বলেছেন, তার সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি সাধন করা।

সে অবস্থায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপস্থাপিত দাবিগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধানে তার সরকার উদ্যোগী হবে বলেই প্রত্যাশা।

×