ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৭ ভাদ্র ১৪৩১

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্য

-

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ১৩ আগস্ট ২০২৪

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্য

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস এক দৃশ্যমান বাস্তবতা। চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ জেলার পাহাড়ি এলাকায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে সর্বশেষ অপভ্রংশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে। ৯ আগস্ট ছিল আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বৈভবে তাদের জীবনাচরণে পার্থক্য দেখা গেলেও এক অভিন্ন বোধ আর সম্মিলিত লক্ষ্যে নিজেদের চালিত করাও বিশেষ এক পর্যায়।

সমতল ভূমি থেকে কিছুটা দূরে তাদের যে নিজস্ব আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পারিবারিক বলয়, সেখানে অঞ্চলগত আর হরেক সংস্কৃতির আচারনিষ্ঠাও বিদ্যমান। বাংলাদেশের পাহাড়ের পাদদেশে এমন সব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব বৈচিত্র্যিক সম্ভারে এক ভিন্নমাত্রার যাপিত জীবনে অভ্যস্ত। ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে’ সংগতকারণে বৈশ্বিক পরিম-লে উদ্যাপিত এমন অনন্য দিনটি বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্যও ছিল উৎসবমুখর সময় যাপন।
নানামাত্রিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সভ্য মানুষের তুলনায় অনেকটা পশ্চাদবর্তী বলে ধারণা করা হয়। সংস্কৃতির বেড়াজালে আবিষ্ট নিবিষ্ট এই গোষ্ঠী শান্তিপ্রিয়, নিরীহ এবং জোটবদ্ধ এক জাতিসত্তা। দেশের বিভিন্ন জেলার ভাষা, সংস্কৃতি এবং জীবনবোধের যে সূক্ষ্ম পার্থক্য দৃশ্যমান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অঞ্চল ভেদে তেমন তারতম্যে নিজেদের বসতি থেকে শুরু করে চারপাশের প্রতিবেশও তৈরি করতে সিদ্ধহস্ত।

উৎসব-আয়োজনের মাত্রায় জাতিগত বৈশিষ্ট্য থাকলেও অঞ্চলগত আর নিজস্ব সাংস্কৃতিক বোধও সমানভাবে ক্রিয়াশীল।  তবে তাদের পারিবারিক যে কাঠামো, সেখানে সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকে যেমনটা ছিল, প্রায় তেমনই আছে। সেটা সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। পারিবারিক গঠন প্রক্রিয়ায় তারা কিন্তু মাতৃতান্ত্রিক পরিবার। পৃথিবীতে প্রথম যে পরিবার সংগঠিত হয়, তাও ছিল মাতৃতান্ত্রিক। পাশ্চাত্য  নৃ-বিজ্ঞানী লুইস হেনরি মর্গান তাঁর ‘আদিম সমাজ’ বইটিতে এমন গবেষণালব্ধ তথ্য উপস্থাপন করেন।

তাঁর মতে, অবাধ স্বেচ্ছাচার ও দলগত বিবাহে পিতার পরিচয় ছিল অজানা। মায়ের গর্ভ থেকে সন্তান আসত বলে ‘মাকে’ চেনা যেত। তাই শুধু পরিবার নয়, বংশপঞ্জি এমনকি সহায় সম্পত্তিও মায়ের দিক থেকেই বিবেচিত হতো। 
সমতল ভূমি থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে পাহাড়ি নৃ-গোষ্ঠীরা নিজেদের মতো করে তাদের সমাজ, সংস্কৃতি, জীবনাচরণ ও সভ্যতা তৈরি করে থাকে। তাদের বঞ্চনার ইতিবৃত্তও এক অনধিগম্য যাত্রাপথ। নানামাত্রিক আর্থ-সামাজিক ও মানবিক আইনকানুন এবং অধিকার থেকে অনেকটাই বঞ্চিত। প্রতি বছর দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে নিজেদের অধিকার নিয়েও সোচ্চার কণ্ঠে প্রতিবাদমুখর তারা।

প্রায় ভূমিহীন, এক   স্থান থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়ানো পাহাড়ি শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা নিয়েও আওয়াজ তোলে। শিক্ষায় ক্রমাগত পশ্চাদবর্তিতা থেকে ছিটকে পড়াÑ এ সবই যেন তাদের পাহাড়ি পরিবেশের চিরায়ত হাহাকার আর বেদনাহত ছাইচাপা আগুন। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার যেন এসব বৈষম্যপীড়িত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সময়োচিত জীবনযাত্রাকে আমলে নিয়ে তাদের প্রতি আন্তরিক দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

×