ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৭ ভাদ্র ১৪৩১

দখল-চাঁদাবাজিতে ব্যবস্থা

-

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ১৩ আগস্ট ২০২৪

দখল-চাঁদাবাজিতে ব্যবস্থা

সম্পাদকীয়

আন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সুযোগে এক শ্রেণির দুর্বৃত্তের দখল ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই বার্তা দেন। এও বলেন, কেউ দখল ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হলে তার ‘পা ভেঙে দিতেও’ বলা হয়েছে।  

এ বিষয়ে তিনি সেনাপ্রধানকেও অবহিত করেছেন। দেশে সরকার আসে, সরকার যায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে। এখানে কারও প্রতি অনুরাগ বা বিরাগ বা বৈরিতা প্রদর্শনের সুযোগ নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে ঘটে ঠিক উল্টো। নির্বাচনের আগে-পরে দেশজুড়ে ব্যাপক সংঘাত-সংঘর্ষ তো ঘটেই, হতাহতের ঘটনাও কম নয়। নির্বাচনোত্তর পরিবেশ-পরিস্থিতি হয় আরও ভয়াবহ ও বিপদসংকুল।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অথবা বিজয়ী প্রার্থী কর্তৃক বিজিত প্রার্থীর বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলে দলবল নিয়ে চালানো হয় সশস্ত্র হামলা। অনেককে এমনকি গ্রাম ছাড়া ও দেশ ছাড়া করা হয়। এই অপসংস্কৃতি চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এ সবের জরুরি অবসান হওয়া বাঞ্ছনীয়। 
এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, দখল, আগুন লাগিয়ে দেওয়াসহ পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। ইতোমধ্যে বিদায়ী সরকারের অনেক ডাকসাইটে নেতাকর্মী, এমপি, মন্ত্রী দেশ ত্যাগ করেছেন। এই সুযোগে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত মেতে উঠেছে দখল ও চাঁদাবাজির মহোৎসবে।

অনেক স্থানে এমনকি হাট-বাজার, খেয়াঘাট দখলের অভিযোগও আছে। এই দুর্বৃত্তরা সুযোগ পেয়ে অনেক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট, চাঁদাবাজি ও অগ্নিসংযোগ করেছে। যে কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে। মূলত তাদের বিরুদ্ধেই কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সেই সঙ্গে এও বলেছেন, ‘আমি পাবলিক নই, রাজনীতিবিদও নই, আমি ফৌজি লোক। যা বলব তাই করব।’ সে অবস্থায় যে বা যারা এসব অপকর্মে জড়িত, তারা এখন থেকেই সতর্ক ও সাবধান হবেন বলে প্রত্যাশা। 
দেশটি যেন গত কয়েক বছরে দখলদার ও চাঁদাবাজদের খপ্পরে পড়ে গেছে। প্রায় সর্বত্রই চলেছে দখলদারি ও চাঁদাবাজির উৎসব। নদী দখল, খাল দখল, খাসভূমি  দখল, চর দখল, অবৈধ বালু উত্তোলন, বনভূমি দখল, হাট-বাজার দখল, বৃক্ষনিধন, টেন্ডারবাজি, এমনকি পদ-পদবি দখল পর্যন্ত। এর পাশাপাশি প্রায় সর্বস্তরে ব্যাপক ঘুষ-দুর্নীতি, অবৈধ অর্থ উপার্জন, ঋণখেলাপি, বিদেশে অর্থ পাচার ইত্যাদি তো আছেই।

অনেক ক্ষেত্রেই এসব সম্পন্ন হয়েছে রাজনৈতিক সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে, তা সে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যাই হোক না কেন। এসবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সময় সমাগত। দখলদার, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ যে দলেরই হোক না কেন, হোক না কেন প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী, তাদের সমূলে উৎখাত ও উৎপাটন করতে হবে। তা না হলে ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে রক্ষা করা যাবে না। নিষ্কলুস ও নিষ্কলঙ্ক  তো নয়ই। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার হুঁশিয়ারিতে মূলত সেই বার্তাই উঠে  এসেছে।

×