সম্পাদকীয়
বিজয়ের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি একটি জাতিকে চিরউদ্যমে স্বাধীনতা উপভোগের পথ দেখায়। এক্ষেত্রে অন্যতম উৎসাহব্যঞ্জক উৎস তরুণ সমাজ। বর্তমান প্রজন্মের চিন্তা, উদ্যম ও সাফল্যের মূল ভিত্তি দেশপ্রেম। সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও ছাত্র-জনতার বিজয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। সরকার পতনের পর গ্রাফিতি কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন সড়কসহ দেওয়ালে দেওয়ালে বিজয়ের গল্পগাথা অঙ্কন করছেন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তথা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্মীরা।
আন্দোলন চলাকালেও তাদের অনেকেই এসব জায়গায় প্রতিবাদী স্লোগান, দাবি ও প্রতিরোধের বাণী লিখেছিলেন। আন্দোলনে বিজয়ের নানা দিক ফুটে উঠেছে দেওয়ালচিত্রে। বর্ণিল রংতুলির মাধ্যমে আন্দোলনের সময় আলোচিত নানা সেøাগান, দৃশ্য ও গুলিবিদ্ধ ছাত্রদের মর্মস্পর্শী চিত্র ও স্মৃতি তুলে ধরা হচ্ছে গ্রাফিতিতে। এ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অভিমত, তারা এমন একটা বাংলাদেশ চান, যেখানে অধিকার নিয়ে মানুষ যেমন বাঁচবে, তেমনই তাদের শহরটাও সুন্দর দেখাবে।
বিশ্বকে তারা এমন কিছু দেখাতে চান না, যে কারণে বিশ্ববাসীর সামনে দেশের মানুষের সম্মান কমে যেতে পারে। সে কারণেই তাদের এই উদ্যোগ এবং সেটা নিজেদের জন্যই। সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব শিল্পকর্মের তারুণ্যের জেগে ওঠা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সাহস আর প্রেরণা হিসেবে থাকবে। বিপ্লবের উত্তাল দিনগুলোতে কংক্রিটের দেওয়ালের গায়ে তুলির আঁচড় বাংলাদেশের শিল্পের ইতিহাসেও গুরুত্ব বহন করবে একদিন।
সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক পর্যায়ে সাবেক সরকারপ্রধান পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর পুরো দেশ হয়ে পড়ে সরকারবিহীন। তারপর থেকে কর্মবিরতিতে চলে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তাদের অনুপস্থিতিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সড়ক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের অবনতি ঘটতে থাকে। এমতাবস্থায় যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গত ৭ আগস্ট থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা স্বেচ্ছায় সড়কে ট্র্যাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন।
পাশাপাশি তাদের একাংশ দেওয়ালে ছবি আঁকা, দেওয়াললিখন বা গ্রাফিতির কাজ শুরু করেন। গ্রাফিতি কর্মসূচির বিষয়ে জানার পর আন্দোলনের কর্মীরা নিজ উদ্যোগে যে যার মতো এ কাজে অংশ নিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের ছড়িয়ে পড়া নানা ভিডিও ও ছবি দেখে তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে বিভিন্ন দেওয়ালে সেসবের ছবি ও গ্রাফিতি আঁকছেন তারা।
এসব গ্রাফিতির কারণে বেড়েছে বিভিন্ন শহর নগরের সৌন্দর্য। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় মানুষের চোখ আটকে যাচ্ছে দেওয়ালে। তারা বিজয়ের দৃশ্যগুলো দেখছেন। কেউ কেউ সেগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। অথচ কয়েকদিন আগেও বিভিন্ন নগরের দেওয়াল ছিল রাজনৈতিক সেøাগান ব্যানার, পোস্টারে ঢাকা। সেগুলোর দিকে তাকালে জনমনে এক ধরনের অস্বস্তি দেখা দিত।
কিন্ত এখন অনেক দেওয়াল পরিষ্কার করে রং করছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে, দেওয়ালগুলোতে যেন চলছে রঙের মেলা। রংতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে বিজয়ের গল্পগাথা। বিভিন্ন নগরীর জীর্নশীর্ণ অনেক দেওয়ালের সৌন্দর্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনমনেও ফিরছে স্বস্তি। যুগে যুগে নানা বিপ্লব ও আন্দোলনে দেওয়ালচিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
দেওয়াল, স্থাপনা ও সড়কগুলোয় আঁকা নানা চিত্র যেন আন্দোলন চলাকালীন বিভিন্ন দাবি, অর্জন কিংবা হারানো যা কিছু, সে সবের সাক্ষ্য দেয়। সম্প্রতি দেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোর বিভিন্ন দেওয়ালচিত্রও যেন সেই সাক্ষ্য দিচ্ছে।