ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

পাটপণ্য রপ্তানি

-

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ৭ আগস্ট ২০২৪

পাটপণ্য রপ্তানি

সম্পাদকীয়

পাট ও পাটজাতপণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ অতীতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে। জাতীয় অর্থনীতিতে পাটের এ অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে পাটকে সোনালি আঁশের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। মাঝে অনেক বছর ক্রান্তিকাল পেরিয়ে বিগত দশক থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পাট খাত। সেই ধারাবাহিকতায় রপ্তানি বাণিজ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে খাতটি।

পাট অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাট ও পাট শিল্পের সঙ্গে জড়িত। বিশ্ববাজারের চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ কাঁচা পাট এবং ৪০-৫০ শতাংশ পাটজাতপণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পাট রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিতি পেয়েছে।

পাট খাতের বৈশ্বিক রপ্তানি আয়ের ৭২ শতাংশ বর্তমানে বাংলাদেশের দখলে। একক কৃষিপণ্য হিসেবে বর্তমানে জাতীয় রপ্তানি আয়ে পাট খাতের অবস্থান দ্বিতীয়। পাট অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জিডিপিতে এ খাতের অবদান ২ দশমিক ৮ শতাংশ। 
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের প্রায় ১৩৫টি দেশে ২৮২টি পাট ও পাটজাতপণ্য রপ্তানি হয়। বিগত ১২ বছরে বার্ষিক পাট ও পাটজাতপণ্য রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। পাট ও পাটজাতপণ্যের ব্যবসা করে ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন দেশের অনেক নারী।

এই খাতের নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বাড়িয়ে দেশী ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাটপণ্যের বিপণন বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ৩১ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে পাটজাতপণ্য বহুমুখীকরণে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ’। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর। প্রস্তাবিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর। 
পাটের তৈরি জিন্সও (ডেনিম) সারাবিশ্বের ফ্যাশনসচেতন মানুষের নজর কেড়েছে। পাট ও তুলার মিশ্রণে তৈরি হচ্ছে সুতা (ভেসিকল)। পাট কাটিংস ও নি¤œমানের পাটের সঙ্গে নির্দিষ্ট অনুপাতে নারিকেলের ছোবড়া মিশিয়ে জুট জিওটেক্সটাইল উৎপন্ন হয়। তাছাড়া পাটখড়ি থেকে উৎপাদিত ছাপাখানার বিশেষ কালি (চারকোল) এবং পাট পাতা থেকে উৎপাদিত ভেষজ পানীয় রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিশ্ববাসীর জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

পাট দিয়ে তৈরি হচ্ছে শাড়ি, লুঙ্গি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, বাহারি ব্যাগ, খেলনা, শোপিস, ওয়ালমেট, আল্পনা, দৃশ্যাবলি, নকশিকাঁথা, পাপোশ, জুতা, স্যান্ডেল, শিকা, দড়ি, সুতলি, দরজা-জানালার পর্দার কাপড়, গহনা ও গহনার বাক্সসহ নানাবিধ পণ্য। এ ধরনের ২৩৫ রকমের আকর্ষণীয় ও মূল্যবান পণ্য জাহাজে চড়ে বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের পাট এখন পশ্চিমা বিশ্বের গাড়ি নির্মাণ, পেপার অ্যান্ড পাল্প, ইনসুলেশন শিল্প, জিওটেক্সটাইল হেলথ কেয়ার, ফুটওয়্যার, উড়োজাহাজ, কম্পিউটারের বডি তৈরি, ইলেকট্রনিকস, মেরিন ও স্পোর্টস শিল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাটের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে উন্নত মানের পাটবীজ সরবরাহ, চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ অন্যান্য বিষয়ে সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এতে কৃষক, পাটকল মালিক, পাটপণ্য ক্রেতা, পাট ব্যবসায়ী সবাই উপকৃত হবেন।

পাটের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে উন্নত মানের পাটবীজ সরবরাহ, চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ অন্যান্য বিষয়ে সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এতে কৃষক, পাটকল মালিক, পাটপণ্য ক্রেতা, পাট ব্যবসায়ী সবাই উপকৃত হবেন। পাটজাত পণ্যসামগ্রী রপ্তানি প্রতিযোগিতায় আমরা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতে পারব বহির্বিশ্বে।

×