ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

খাদ্য মূল্যস্ফীতি

-

প্রকাশিত: ২০:৩১, ৬ আগস্ট ২০২৪

খাদ্য মূল্যস্ফীতি

সম্পাদকীয়

দেশে চলমান পরিস্থিতিতে জনগণের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি। বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি বিশ্বের ১৭২টি দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতির সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে বাংলাদেশকে ‘লাল শ্রেণিতে’ তুলে ধরেছে তাদের ফুড সিকিউরিটি শীর্ষক ষাণ¥াসিক প্রতিবেদনে। এতে বাংলাদেশ থেকে মূল্যস্ফীতি কম দেখানো হয়েছে সোমালিয়া ও আফগানিস্তানে।

এদিক থেকে ভালো অবস্থানে আছে ভারত ও পাকিস্তান। বাংলাদেশের মার্কেট প্রাইস সংগ্রহ এবং সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট নানা সংস্থা থেকে তথ্য-উপাত্ত প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রকাশ করা হয় এই ক্যাটাগরি। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে একজন মানুষকে শুধু খাদ্য কিনতেই আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ ব্যয় করতে হয়। স্বভাবতই খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতিতে। এর মধ্যে চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নতুন করে সীমিত পরিসরে কার্ফু জারি এবং একদিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় সার্বিক মূল্যস্ফতিতে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যাতে জনজীবনে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। 
কিছুদিন থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন, বাংলা ব্লকেড, কমপ্লিট শাটডাউন, লংমার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিসহ দেশব্যাপী ব্যাপক সহিংসতায় সারাদেশে সেনা মোতায়েনসহ কার্ফু জারির কারণে পণ্য পরিবহনসহ সরবরাহে দেখা দিয়েছে অনিবার্য সমস্যা-সংকট। পাইকারি ও খুচরা বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, যার ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ।

প্রতিদিনের বাজারে, তা সে খুচরা ও পাইকারি যাই হোক না কেন, যদি নিয়মিত পণ্যের সরবরাহ না থাকে, তাহলে অনিবার্য সংকট দেখা দেবে নিত্যপণ্যের- এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সর্বত্র দেখা দিয়েছে নিয়মিত পণ্য সরবরাহের ঘাটতি। ফলে, প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এসবের মধ্যে রয়েছে চাল, গম, আটা, চিনি, ভোজ্যতেল, গুঁড়া দুধসহ প্রায় সব ভোগ্যপণ্য।

অন্যদিকে মাছ-মাংস-দুধ-ডিমসহ শাক-সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত তো নয়ই, বরং চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মানুষের দৈনন্দিন জীবন-যাপনে। একদিকে চাপ পড়েছে পকেটে, অন্যদিকে চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না নিত্যপণ্য। 
দেশের অভ্যন্তরে নিয়মিত পণ্য সরবরাহের অন্যতম উপায় হলো ট্রাক ও মালবাহী ট্রেন। এ দুটিই প্রায় বন্ধ বর্তমান পরিস্থিতিতে ও কার্ফুর কারণে। অন্যদিকে আমদানি-নির্ভর অনেক নিত্যপণ্য স্থল সীমান্তপথ হিলি-ভোমরাসহ সংশ্লিষ্ট বন্দর থেকে খালাস করা যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম নেমে এসেছে ১০ শতাংশের নিচে।

তদুপরি জাহাজ থেকে আমদানিকৃত পণ্য খালাস করে ট্রাকে অভ্যন্তরীণ রুটে সরবরাহ প্রায় বন্ধ। সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় যথাযথ নিরাপত্তা বিধান করে যথাসময়ে পণ্য খালাস এবং নিত্যপণ্য পরিবহনের উদ্যোগ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও সচল রাখতে যত তাড়াতাড়ি এটা বাস্তবায়ন করা যায়, ততই মঙ্গল। তাহলে নিত্যপণ্যজনিত ভোগান্তি কমে আসতে পারে বহুলাংশে।

দেশে অনেকদিন ধরে মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বহুল আলোচিত। অবশ্য সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিত্যপণ্যের দাম সহনশীল পর্যায়ে রাখার জন্য সবরকম চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।  তবে একশ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী চক্র সবসময় ওতপেতে থাকে বাজার ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে তুলে মুনাফার হার কত বেশি বাড়ানো যায়। সরকার বাজারব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। বর্তমান বিশেষ পরিস্থিতিতে নিয়মিত পণ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখা অত্যন্ত জরুরি।

×