রবীন্দ্রনাথের ৮৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে কবির প্রতি সশ্রদ্ধ নিবেদন
রবীন্দ্রনাথের ৮৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে কবির প্রতি সশ্রদ্ধ নিবেদন। সাহিত্যের বহুমাত্রিক আঙিনায় সদর্পে বিচরণ করা কবি গুরুর বিজ্ঞানমনস্কতাও ছিল গভীর চিন্তার সুনির্দিষ্ট প্রত্যয়। বিজ্ঞান ভাবনার আলোকিত জগৎ সেই শৈশব, কৈশোরের এক অবিমিশ্র বাস্তব পর্যায়।
সংগত কারণে মননশীলতায় শিল্পবোধ যেমন কবিকে নতুন সৃষ্টির তাড়নায় উদ্বুদ্ধ করে একইভাবে বস্তুও তাকে সমানভাবে চিন্তার খোরাক জোগায়। সংগত কারণে কবির বিজ্ঞান চেতনা তারই যথার্থ অনুষঙ্গ। সেখানে যেমন গভীর চৈতন্যের ছাপ প্রত্যক্ষ একইভাবে সচেতন দায়বদ্ধতা বিষয়কে অনবদ্য করে তোলে। বিজ্ঞানের প্রতি যে মনোযোগ কবিকে তাড়িত করে সেখানে যুক্তিশীল, ঠা-া মাথার অভিপ্রেত বিজ্ঞান সাধনায় গভীর ছায়া ফেলে।
বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান চেতনার সম্পূরক হিসেবে কবির বাস্তব জ্ঞানও মননশীল দ্যোতনার পরম নির্মাল্য। আর বোধহয় সেই কারণেই অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতের যশস্বী বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কবির হৃদ্যতা, বন্ধুত্ব বরাবরই অটুট ছিল। ভাবুক, আবেগপ্রবণ কবি যখন যৌক্তিক অনুধাবনে বিজ্ঞান ভাবনায় নিমগ্ন হন সেটা যেমন বিস্ময়কর একইভাবে বাস্তব জ্ঞানের প্রতিও সশ্রদ্ধ নিবেদন বলাই যায়। আজীবন বস্তুঘনিষ্ঠ বিষয়ের সঙ্গে অবিচ্ছিন্নও থেকেছেন বরাবরই।
বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সঙ্গে অকৃত্রিম ঘনিষ্ঠতা, বন্ধুত্ব, নিরবচ্ছিন্ন সম্পর্ক স্থাপন বিজ্ঞানপ্রীতিও চিন্তার অনবদ্য যোগসাজশ। বিজ্ঞানের তিন দিকপালের সঙ্গে চিরস্থায়ী বন্ধনের যে গ্রন্থি বিষয়গত সম্ভারেও তা এক অটুট হৃদ্যতা। কবির নোবেল প্রাপ্তির প্রায়ই এক দশক আগে জগদীশ চন্দ্রের বিজ্ঞান সাধনযজ্ঞ বিশ্বকে আলোড়িত করার আধুনিক নব অধ্যায়। যা কবিকেও চমৎকৃত করা ছাড়াও জগদীশের প্রতি অকৃত্রিম দায়বদ্ধতায় আকৃষ্ট হতেও সময় লাগেনি। দুই বন্ধুর বহু পত্রালাপে অন্তরঙ্গ এমন কাহিনী সর্বজনবিদিত।
শুধু কি তাই? চিন্তা, অর্থে, সাহচর্যে পরম দুঃসময়ে বিজ্ঞানের কৃতী পুরুষ জগদীশকে যেভাবে ঘিরে রাখেন তাও বন্ধনের পরম নির্মাল্য। একইভাবে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ও কবির অকৃত্রিম সুহৃদ আর নিকটজন। আর এক সমাদৃত বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুও আজীবন বন্ধুত্বের অটুট সম্পর্কে অবিচ্ছিন্ন ছিলেন। কবির বিজ্ঞানভিত্তিক গ্রন্থ বিশ্ব পরিচয় উৎসর্গ করলেন বিজ্ঞানী সত্যেন বসুকে।
খ্যাতিমান পরিসংখ্যানবিদ প্রশান্ত মহলানবিশ এর সঙ্গেও ছিল হৃদ্যতার পরম সম্মিলন। কৃতী এই বিজ্ঞানী কবির সফরসঙ্গীও হতেন। শুধু কি তাই? প্রশান্ত মহলানবিশ এর কলকাতার পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠানের (আইএসআই) লাইব্রেরিতে ‘রবীন্দ্র কর্নার নামে এক অনন্য পাঠক্রম সন্নিবেশিত করাও কবির প্রতি পরিসংখ্যান বিজ্ঞানীর পরম শ্রদ্ধা নিবেদন। বেহালা বাদক বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সঙ্গে কবির যে মাধুর্যময় যোগসাজশ বিজ্ঞানপ্রিয়তার অনবদ্য চিত্র তো বটেই।
শুধু দেশ-বিদেশের বিজ্ঞান সাধকের সঙ্গে সম্পর্কই নয় বরং প্রতিদিনের জীবনে শিক্ষায় কর্মে ব্যবহারিক কাজে বিজ্ঞানের যে প্রাত্যহিক ভূমিকা সেটাও কবিকে নানামাত্রিকে প্রাণিত করত। আশৈশব বিজ্ঞানপ্রীতির যে ধারা তা যেন ঠাকুরবাড়িরই এক অনবদ্য পর্যায়ক্রম। পরিবারই বিজ্ঞান শিক্ষায় যে বলয় ঠাকুরবাড়ির সন্তানদের অবারিত করে দিত সেটাই ছিল যন্ত্রসভ্যতা অনুভবের পরম শুভ সূচনা। ঠাকুরবাড়িতে নিয়মিত আসা সীতানাথ দত্তই ছিলেন বিজ্ঞানের আদিগুরু আর অকৃত্রিম শিক্ষক।
পিতা মহর্ষীও কবিকে ডালহৌসি পাহাড়ে ডাকবাংলোয় বসিয়ে তারা, গ্রহ-নক্ষত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন। বিজ্ঞানের আলোকে রচিত ‘বিশ্ব পরিচয়’ গ্রন্থের ভূমিকায় তেমন স্মৃতি স্মরণ করে লিখলেন- ‘সন্ধ্যা বেলায়’ গিরিশৃঙ্গের বেড়া দেওয়া নিবিড় নীল আকাশের স্বচ্ছ অন্ধকারে তারাগুলো যেন কাছে নেমে আসত। তিনি আমাকে নক্ষত্র চিনিয়ে দিতেন।
তারা বুঝিয়ে দিতেন। পিতা যা বলতেন তাই স্মরণ করে তখনকার কচি হাতে কবি একটা প্রবন্ধ লিখেছেন। জীবনে প্রথম এই ধারাবাহিক রচনা, সেটা বৈজ্ঞানিক সংবাদ নিয়ে। কবির ‘বিশ্ব পরিচয়’ বইটিও পরমাণুলোক, সৌরজগৎ, ভূলোক, নক্ষত্রলোক সবই যেন বিশ্ব জগতের বৈজ্ঞানিক আবর্তনের ঘেরাটোপ।
বিজ্ঞান শুধু জানা, বোঝা কিংবা দেখার বিষয় নয় বরং নিজের আয়ত্তে এনে প্রতিদিনের কর্মযোগের সঙ্গে যুক্ত করাই সত্যিকারের বিজ্ঞানভাবনা ও চর্চা। আর শিক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানকে প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত করা বাঞ্ছনীয়। তেমন যৌক্তিক বাণী উচ্চারিত করলেন আলোচিত গ্রন্থের শুভ সূচনায়, শিক্ষা যারা আরম্ভ করেছে, গোড়া থেকে বিজ্ঞানের ভা-ারে না হোক বিজ্ঞানের আঙিনায় তাদের প্রবেশ করা অত্যাবশ্যক।
এই জায়গায় বিজ্ঞানের সেই প্রথম পরিচয় ঘটিয়ে দেবার কাজে সাহিত্যের সহযোগিতা স্বীকার করলে তাতে অগৌরব নেই। সে দায়িত্ব নিয়েই কবির কাজ শুরু বলে অভিমত জানানো হয়। সংগত কারণে জবাবদিহি শুধু সাহিত্যের কাছেই নয় বরং বিজ্ঞানের কাছেও বটে। শান্তি নিকেতনের অধ্যাপক প্রমথনাথ সেনগুপ্তের লেখা পা-ুলিপিটি ভাষায়, বর্ণনায় আমূল পরিবর্তন করে ‘বিশ্ব পরিচয়’ গ্রন্থটি কবি নিজের ভাষা, ভাবনা আর অনুভূতিতে সাজিয়ে প্রকাশ করা হয়। জ্যোতির্বিদ্যার উপরও কবির ছিল গভীর মনোযোগ আর পা-িত্য।
১৯৩৭ সালে প্রকাশ পাওয়া গ্রন্থটি কবির সারা জীবনের বিজ্ঞানভিত্তিক পড়াশোনা, চিন্তা-চেতনার অনবদ্য স্বাক্ষর। কিশোর রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানের প্রতি দরদ, আগ্রহ, প্রতিনিয়ত চর্চাই তাকে বিশ্ব ব্রহ্মা-ের সৌরজগৎ নিয়ে উৎসাহ, উদ্দীপনার যেন শেষ পরিশেষ ছিলই না। শুধু তাই নয় বিজ্ঞানসমৃদ্ধ মৌলিক বিষয় সম্ভার নিয়ে লিখতেও উদ্বুদ্ধ, প্রাণিত করে।
কবি নিজে যা অনুভব করেন সেটা উল্লেখ করারই মতো। তাঁর মতে ‘আজ বয়সের শেষ পর্বে মন অভিভূত নব্য প্রাকৃতত্ত্বে বৈজ্ঞানিক মায়াবাদে। তখন যা পড়েছিলুম তার সব বুঝিনি। কিন্তু পড়ে চলেছিলুম। আজও যা পড়ি তার সবটা বোঝা আমার পক্ষে অসম্ভব, অনেক বিশেষজ্ঞ প-িতের পক্ষেও তাই। বিজ্ঞান থেকে যারা চিত্তের রসদ সংগ্রহ করেন তাদের কথা আলাদা- আমি রস পাই মাত্র। সেটা গর্ব করার কিছু নেই, কিন্তু মন খুশি হয় বলে যথালাভ। এই বইখানা সেই যথালাভের ঝুড়ি। মাধুকরী বৃত্তি নিয়ে পাঁচ দরজা থেকে এর সংগ্রহ।
মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার গুরুত্বারোপ করেন যখন নিজ উদ্যোগে গ্রামে-গঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে নানাবিধ উন্নয়ন কর্মযোগ শুরু হয়। অনুষঙ্গ হয়ে থাকে তার বিভিন্ন শিল্পোন্নত দেশ ভ্রমণের বাস্তব অভিজ্ঞতা। ১৬-১৭ বছরের কিশোর রবি যখন বিলেত যান সেখানকার নতুন সভ্যতার অনেক কিছু তাকে মুগ্ধও করে। কিন্তু সেখানে যন্ত্রশিল্পের বৈজ্ঞানিক শক্তি তার মনে সাড়া জাগায়নি তেমন। কবির ‘ইউরোপ প্রবাসী পত্র’ থেকে তেমন কোনো সমৃদ্ধ আলোচনা চোখে পড়ার মতো নয়। বরং আশি বছর বয়সে কবি যখন ‘সভ্যতার সংকট’ লিখছেন তেমন অনুভবও উল্লেখ্য।
‘আমি যখন অল্প বয়সে ইংল্যান্ড গিয়েছিলুম সে সময় জন ব্রাইটের মুখ থেকে পার্লামেন্ট এবং তার বাইরে কোনো কোনো সভায় যে বক্তৃতা শুনেছিলুম তাতে শুনেছি ইংরেজদের বাণী। সেই বক্তৃতা হৃদয়ের ব্যাপ্তি জাগতিক সকল সঙ্কীর্ণ সীমাকে অতিক্রম করে যে প্রভাব বিস্তার করেছিল সে আমার আজ পর্যন্ত মনে আছে। এবং আজকের এই দিনেও পূর্ব স্মৃতিকে রক্ষা করে চলছে।
১৮৯৩ সালে লেখা ‘পঞ্চভূত’ প্রবন্ধে ইউরোপীয় সভ্যতা নিয়ে কবির আক্ষেপÑ ‘ইউরোপ সম্প্রতি যে এক যন্ত্র সভ্যতার যুগ আবির্ভূত হইয়াছে এ যুগে ক্রমাগতই নব নব জ্ঞানবিজ্ঞান মতামত স্তূপাকার হইয়া উঠিয়াছে; যন্ত্রতন্ত্র উপকরণ সামগ্রীতেও একেবারে স্থানাভাব হইয়া দাঁড়াইয়াছে। অবিশ্রাম চাঞ্চল্যে কিছুই পুরাতন হইতে পারিতেছে না।’
আবার ৫৫ বছর বয়সে ১৯১৬ সালে যখন জাপান ভ্রমণে যান তখন শিল্পের অগ্রগামী দেশ হিসেবে জাপান কবিকে মুগ্ধ করে, বিস্ময়াভিভূত হন সঙ্গে বাস্তব অভিজ্ঞতাও অর্জন করেন। ‘জাপান যাত্রী’ প্রবন্ধে কবির অভিমত- কাজের শক্তি, কাজের নৈপুণ্য এবং কাজের আনন্দকে এমন পুঞ্জীভূতভাবে একত্রে দেখতে পেয়ে আমি মনে মনে বুঝতে পারলুম, এই বৃহৎ জাতির মধ্যে কতখানি ক্ষমতা আছে। এই এত বড় একটা শক্তি যখন আপনার আধুনিককালের বাহনকে পাবে অর্থাৎ বিজ্ঞান যখন তার আয়ত্ত হবে, তখন পৃথিবীতে তাকে বাধা দিতে পারে এমন কোনো শক্তি আছে? তখন তার কর্মের প্রতিভাব সঙ্গে তার উপকরণের যোগসাজশ উজ্জ্বলভাবে দীপ্তিময় হয়ে উঠবে।
অর্থাৎ নিরন্তর কর্মচাঞ্চল্যের সঙ্গে অব্যাহত যন্ত্রশক্তির অনবচ্ছেদ মিলন একটি অগ্রসরমান জাতি কাক্সিক্ষত স্বপ্নে আর কোনো বাধা প্রতিবন্ধকতাই দেখবে না। সেখানে সবচেয়ে বড় শক্তি মাতৃভাষা। আর জাপানিরা মাতৃভাষাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়ে জ্ঞানবিজ্ঞানের শক্তির সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন করতে সব ধরনের উপায়, উপকরণ ব্যবহারে পিছপা হয়ইনি। এমন সব ইতিবাচক উন্নয়ন কর্মপ্রবাহে সর্বজনতার মিলনগ্রন্থি কবিকে উদ্দীপ্ত, আনন্দিত ও বিমুগ্ধতার পর্যায়ে নিয়ে যায়।
প্রত্যাশিত ফলশ্রুতিও নজরকাড়া, দৃষ্টিনন্দন। নিজের অনুভূতিও প্রকাশ করলেন পরম আবেগে আপ্লুত হয়ে নিজের ভাষা, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে ধারণ করে আধুনিক বিজ্ঞান ও জ্ঞানের মহাসম্মিলন ঘটানো জরুরি, অতি আবশ্যক। আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্য যা প্রত্যেকের অস্তিত্ব আর চেতনায় অবিচ্ছিন্ন হয়ে আছে তার সঙ্গে সংযোগ করতে হবে বিশ্বের যা কিছু কল্যাণকর ও মঙ্গল। যা আবহমান বাংলা ও অত্যাধুনিক বাংলার দ্বৈত মিলনে সফল আর নতুন সময়ের অনুষঙ্গ হবে।
নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার আর জনগোষ্ঠীর প্রতিদিনের কর্মযোগ সফল মিলনগ্রন্থিতে রূপ দিতে প্রয়োজনীয় সব কিছু করা দেশ ও মানুষের স্বার্থে নিতান্ত দায়বদ্ধতা। আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার ও প্রয়োগ সম্পর্কে যখন তার ধারণা বদ্ধমূল তখন তিনি সফর করেন বিপ্লবোত্তর রাশিয়া, সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া কবিকে মুগ্ধ ও বিস্মিত করে। রাশিয়া শুধু যন্ত্র সভ্যতার আধুনিকায়নই নয় বরং মালিকানা ও সম্পদের সুষম বণ্টন কবিকে আগ্রহান্বিত, উৎসাহী করে তোলে।
বারবার উপলব্ধিতে আসে শিক্ষাই মূল শক্তি এবং অবশ্যই তা সকলের জন্য। কবি অনুভব করলেন- আমাদের সকল সমস্যার সবচেয়ে বড় রাস্তা হচ্ছে শিক্ষা, এতকাল সমাজের অধিকাংশ লোক শিক্ষার পূর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত-ভারতবর্ষ তো প্রায়ই সম্পূর্ণ বঞ্চিত। রাশিয়ায় তেমন শিক্ষা যে কি বিস্ময়করভাবে সমাজের সর্বত্রব্যাপ্ত হচ্ছে তা দেখে কবি সত্যিই বিস্মিত, হতবাক। শিক্ষার মান শুধু সংখ্যায় নয় তার সম্পূর্ণতায়, তার প্রবলতায়।
কোনো নাগরিকই যাতে নিঃসহায়, নিষ্কর্মা না থাকে তার জন্য কি প্রচুর আয়োজন, কি বিপুল উদ্যম। শুধু শ্বেত রাশিয়ার জন্য নয় মধ্য এশিয়ার অর্ধসভ্য জাতির জন্যও এরা বন্যার মতো শিক্ষা বিস্তার করে চলেছে। বিজ্ঞানের শেষ আবিষ্কারও যাতে হাতের কাছে পায় সেজন্য প্রয়াসের অন্ত নেই। সঙ্গে হৃদয়ে নাড়া দিতে থাকে গ্রামবাংলার অসহায় মানুষদের পশ্চাৎগামিতা।
কৃষিনির্ভর গ্রামবাংলায় সিংহভাগ অর্থনীতি চাষাবাদকে কেন্দ্র করে। মৌলিক সব চাহিদা গ্রামবাংলার কৃষি অর্থনীতি থেকে আসে। সুতরাং আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার প্রয়োগে কৃষিতে বিপ্লব ঘটানোই হবে সার্বিক জনগণের মুক্তির অনন্য ধাপ। গ্রামবাংলায় পৈতৃক জমিদারি দেখাশোনা করতে গিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতায় কবি, ভাবুক রবীন্দ্রনাথ সমাজ সংস্কারের বৈজ্ঞানিক চিন্তায়ও ছিলেন আধুনিক পুরুষ, বিজ্ঞানমনস্ক এক অনন্য সমাজবোদ্ধা। যিনি দেশের মূল উন্নতির সোপান যে কৃষি অর্থনীতি তা চিহ্নিত করতে পুরোপুরি সক্ষমতার পরিচয় দেন।
লেখক : সাংবাদিক