ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

প্রতিহিংসা নয় দায়িত্বশীল ভূমিকাই মুখ্য

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

প্রকাশিত: ২১:২৯, ৩ আগস্ট ২০২৪

প্রতিহিংসা নয় দায়িত্বশীল ভূমিকাই মুখ্য

দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিসমূহ

দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিসমূহ বিবেচনায় নিয়ে রায় প্রদান করা হয়েছে। সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির মধ্য দিয়ে দাবিসমূহের আবশ্যকতা প্রতিফলিত হয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, আন্দোলনকারীদের সুসংহত-সুসংগঠিত নেতৃত্বের বিভাজিত স্বরূপ নানাভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের উত্থাপিত সকল দাবি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও উচ্চারিত হয়েছে। এহেন প্রেক্ষাপটে সহিংসতার পরিবর্তে সহিষ্ণুতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দেশ ও জাতির চলমান সংকটের ঐক্যবদ্ধ উত্তরণ ঘটাতে হবে

কিংবদন্তি ফরাসি সাহিত্যিক ও দার্শনিক ভল্টেয়ারের অমিয় বাণী, ‘তোমার মতের সঙ্গে আমি বিন্দুমাত্র একমত নাও হতে পারি, কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনে আমি প্রাণ দেব।’ প্রাসঙ্গিকতায় বলা যায়, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অন্যতম নিয়ামক হচ্ছে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান-দলগত আদর্শ-মতামত-পরমতসহিষ্ণুতা-পারস্পরিক শ্রদ্ধা-সৌহার্দ্য এবং অন্যের মতকে প্রাধান্যের অনবদ্য সমন্বয়। গণতন্ত্রের প্রাথমিক মূল্যবোধ হচ্ছে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। অর্থাৎ ব্যক্তির মৌলিক স্বাধীনতা তথা চিন্তা-বাক-সংগঠনের স্বাধীনতা, ভোটাধিকার প্রয়োগ, দলগঠন এবং অংশগ্রহণ, প্রার্থী হওয়া-নির্বাচনে অংশগ্রহণ-অভিযোগ উপস্থাপনের স্বাধীনতা।

সার্বিকভাবে জীবনধারণ-পরিবার গঠন-নিরাপত্তা বিধান-আইনের আশ্রয়-স্বাধীন মতামত প্রকাশ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা বিরোধিতার অধিকার ইত্যাদি সবটিকেই অন্তর্ভুক্ত করে। যে কোনো সামাজিক প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির স্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব ও সৃজনশীল প্রতিভার উন্মেষ একমাত্র গণতান্ত্রিক পন্থায় সম্ভব। এজন্যই বিশ্বের সকল সভ্য দেশ, বিবেকবান-মানবতাবাদী মানুষ গণতন্ত্রের ভাবধারায় বিশ্বাসী। গণতন্ত্রের যৌক্তিক বিশ্লেষণে নিজের ইচ্ছার সঙ্গে অন্যের ইচ্ছার সমন্বয় ঘটানো বা অধিকাংশের ইচ্ছা বা আগ্রহকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেওয়া গণতন্ত্রের সহজাত রীতিনীতি। 
গণতন্ত্রের বিকাশমানতায় বহু দলের অস্তিত্ব থাকা যেমন জরুরি, তেমনি দলের নেতাকর্মীদের আচার-আচরণে পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাস-যোগাযোগ প্রভৃতির প্রচলন একান্ত বাঞ্ছনীয়। দলগুলোর মধ্যে নানা বিষয়ে ভিন্নমত থাকাটা অস্বাভাবিক না হলেও; এই মতভিন্নতা পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের সমৃদ্ধিতে দূরীভূত করা সম্ভব। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, কালক্রমে গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির অধিকতর নিকৃষ্ট প্রচলন সমাজকে নিদারুণ কাতরতায় নিপতিত করে চলছে।

মূলত রাজনৈতিক সংস্কৃতি, উপ-সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হচ্ছে সর্বত্র জনদুর্ভোগ লাঘব ও জনসাধারণের অধিকার-স্বার্থ-নৈমিত্তিক প্রয়োজনে রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপসমূহের সৃজন-মননশীল বিকাশধারা নিশ্চিত করা। সমাজপ্রগতির সঙ্গে ভারসাম্য ও পরিবর্তনশীলতার আনুষ্ঠানিক উপাদানসমূহের কার্যকর অনুশীলনে রাজনৈতিক সংস্কৃতির সাবলীল সৌকর্য উদ্ভাসিত হয়। জ্বালাও-পোড়াও-ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে  দেশবাসীকে জিম্মি করে কদর্য পন্থায় অধিকার আদায় রাজনৈতিক উপ-সংস্কৃতিকে কখনো পরিশুদ্ধ করে না। বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম-মানববন্ধন-প্রতিবাদী মিছিল-র‌্যালি শোভিত কর্মসূচি কেন্দ্রিক জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণই গঠনমূলক রাজনীতির সুন্দরতম ভাষা। 
মতপার্থক্য-মতবিরোধ-মতদ্বৈধ রাজনীতির স্বাভাবিক পর্যায়ে যেকোনো সমাজ ব্যবস্থায় অনুভূত। নৈরাজ্য-অগ্নিসন্ত্রাস-বলপ্রয়োগ-অধিকমাত্রায় ক্ষমতালিপ্সু আচরণে দেশকে অস্থিতিশীল-অরাজক পরিস্থিতি তৈরিতে  নেতিবাচক ভূমিকা বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে পরিত্যাজ্য-প্রত্যাখ্যাত। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি নয়, বরং লাঘবের মধ্যেই রাজনীতির কর্মকৌশল অধিকমাত্রায় প্রশংসিত। ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা-ভীতিপ্রদর্শন-গুজব সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা জনসমর্থনহীন রাজনৈতিক দলের দুর্বলতাকেই প্রতিষ্ঠিত করে।

রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক ঐতিহ্যকে ধারণ করে সুদূর অতীত থেকে প্রতিভাত অভিজ্ঞতায় রাজনীতিক নেতৃত্ব জনগণের হৃদয় জয়ে ব্যর্থ হলে দেশে শুধু প্রতিবন্ধকতারই দুর্ভেদ্য প্রাচীর নির্মিত হবে। দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিবেশ বিবেচনায় আত্মসমালোচনা-আত্মবিশ্বাস-আত্মশুদ্ধির অপরিসীম অবজ্ঞা দৃশ্যমান হচ্ছে। পারস্পরিক সমঝোতা- সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির বিপরীতে বেপরোয়া সহিংসতা-চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র-অসহিষ্ণু আচরণ রাজনীতির প্রতি পুরো জাতির চরম অনাগ্রহ তৈরি করছে। আত্মসংযম-আত্মসমালোচনা-আত্মশুদ্ধির সকল শুভ উদ্যোগকে প্রচ- ভ্রƒক্ষেপে দেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটছে। 
বিশ্ব পরিম-লে সকল জাতিরাষ্ট্রের রাজনীতি-সমাজ ইতিহাস বিশ্লেষণে এটি সুস্পষ্ট যে, সভ্যতার ক্রমবিকাশের আধুনিক ধারায় যুদ্ধ-বিগ্রহ-সংঘাত-বিরোধ-বিচ্ছেদ এবং  পেশি ও অস্ত্রশক্তির ঘৃণ্য প্রয়োগে অঞ্চল-দেশ-ক্ষমতা-অর্থ-আধিপত্য-প্রভাব প্রতিপত্তি দখলে নেওয়ার অসম প্রতিযোগিতা এখনো পরিলক্ষিত। কখনো ধর্মীয়, কখনো সামাজিক-রাজনৈতিক-নানামুখী দুর্বৃত্তায়নের অসৎ উদ্দেশ্যে প্ররোচিত-পরিচালিত এসব সংঘর্ষ নৃশংসতা-সহিংসতার বহির্প্রকাশ ঘটিয়ে বারবার মানব সমাজকে করেছে কলুষিত।

বিভাজিত চিন্তা-চেতনায় সৃষ্ট মতপার্থক্য নিরসনে আলাপ-আলোচনা-প্রচলিত আইনের যথার্থ অনুশীলনে সমঝোতা-আপোসরফার বিপরীতে এসব ভয়ংকর উদ্যোগ বাংলাদেশেও দেশবাসীর অন্তরে যারপরনাই আতঙ্ক-আশঙ্কার প্রাচীর নির্মাণ করে চলছে। ভীতসন্ত্রস্ত জনগণ প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে বিরূপ ধারণার বশবর্তী হয়ে ক্রমান্বয়ে দেশ ও জাতির স্বাভাবিক গতিশীলতার বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে চরম আক্রান্ত। ধর্মান্ধতা-কূপম-ূকতা-কুসংস্কার-কুশিক্ষা এবং নরপশুতুল্য দানবদের অনুরূপ কার্যকলাপ অনগ্রসর থেকে প্রাগ্রসর হওয়ার সকল সাবলীল পথকে অবরুদ্ধ করার ভয়াবহ অপপ্রয়াস হিসেবে বিবেচ্য।
দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল নাগরিক সম্যক অবগত আছেন, পবিত্র সংবিধানসম্মত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ স্ব-স্ব রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক সরকারের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। দেশের সমগ্র জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা বিধান-নিরাপদ জীবনযাপন-সম্পদ সুরক্ষা-দুর্ভোগ নিরসন-উন্নয়ন কর্মকা-ের ধারাবাহিকতা নিশ্চিতকরণে পর্যাপ্ত উদ্যোগ গ্রহণের সফলতাই জনপ্রিয় সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় উদ্ভূত সকল সমস্যার সমাধানকল্পে দলনিরপেক্ষ বা দল-মত-জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আপামর জনগণের কল্যাণে যথার্থ উপায় অবলম্বন জরুরি।

সাম্প্রতিক সময়ে কোটা বৈষম্য দূরীকরণে যে আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে, তা সর্বৈব যৌক্তিক। কালক্ষেপণ না করে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের দায়িত্ব ছিল দ্রুততম সময়ের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে দাবিসমূহের গ্রহণযোগ্যতা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসা। কথিত বিভিন্ন দল ও সরকারে ঘাপটি মেরে থাকা অশুভ শক্তির অনুসারীরা দায়িত্বজ্ঞানহীন নেতৃত্বের অপকৌশলে পরিচালিত সম্প্রতি যেসব সহিংসতা-ধ্বংসাত্মক কর্মকা- গোচরীভূত হচ্ছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে পুঁজি করে দেশ ও স্বাধীনতাবিরোধী সন্ত্রাসী-জঙ্গি অপশক্তির ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ দেশের জনগণের মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যসূত্রে জানা যায়, ১৮ জুলাই বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত দুর্বৃত্তরা ছাত্রদের আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, মহাখালীর সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, ডাটা সেন্টার, গ্রিন রোডের রপ্তানি ভবন (বেপজা), মিরপুরে বিআরটিএ ভবন, ২টি মেট্রোরেল স্টেশন, গাজীপুরের সড়ক ভবন, বিআরটি স্টেশন, মহাখালীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা, যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা, নরসিংদী জেলা কারাগার ভেঙে ফেলায় জঙ্গিসহ আট শতাধিক বন্দির পলায়ন ও অস্ত্র-গোলাবারুদ লুট, মাদারীপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ অসংখ্য সরকারি স্থাপনায় হামলা-অগ্নিসংযোগে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর পুলিশের গাড়ি ও পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়াও মহাখালীর সেতু ভবনে ৫৫টি গাড়ি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পুরনো ভবনে পার্কিংয়ে রাখা ৩২টি গাড়ি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৬টি বর্জ্য বহনকারী গাড়ি, মাদারীপুরে ৩২টি বিলাসবহুল বাসসহ প্রায় দুই শতাধিক গাড়ি পুড়িয়ে দেয় নাশকতাকারীরা। 
সৃষ্ট সহিংসতা ও কার্ফুর কারণে অর্থনীতির প্রায় সকল খাত কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এতে সংকটে থাকা অর্থনীতি আরও কঠিন সমস্যায় নিপতিত হয়। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসা ফুড ডেলিভারি ও ই-কমার্স থেকে শুরু করে আউটসোর্সিং খাত ক্ষতির মুখে পড়ে। কার্যত বাংলাদেশ বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দেশের অর্থনীতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে এবং বৈদেশিক বাণিজ্যেও তৈরি হয় অচলাবস্থা। দেশজুড়ে বৈদ্যুতিক অফিসে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগে বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) তথ্যানুসারে, কোটা সংস্কারের দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ফলে দেশের অর্থনীতিতে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। 
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আবেগের জায়গাটুকুকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। আন্দোলনের নামে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে তা-ব চালানো হয়েছে, তা কোনো সুস্থ মানুষের কাজ হতে পারে না। সচেতন মহলের মতে, এটি একাত্তরের পাকিস্তানি বর্বর হায়েনাদের নজিরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞকেও হার মানিয়েছে। এসব সন্ত্রাসীর পৃষ্ঠপোষকদের নিগূঢ় তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে তাদের মুখোশ উন্মোচন একান্ত প্রয়োজন। একইসঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মতো অপরাধকর্মে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সত্যনিষ্ঠ-নিরপেক্ষ চৌকস বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সকল হত্যাকা-ের কারণ ও সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের জোরালো দাবি। 
ইতোমধ্যেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিসমূহ বিবেচনায় নিয়ে রায় প্রদান করা হয়েছে। সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির মধ্য দিয়ে দাবিসমূহের আবশ্যকতা প্রতিফলিত হয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, আন্দোলনকারীদের সুসংহত-সুসংগঠিত নেতৃত্বের বিভাজিত স্বরূপ নানাভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের উত্থাপিত সকল দাবি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও উচ্চারিত হয়েছে। এহেন প্রেক্ষাপটে সহিংসতার পরিবর্তে সহিষ্ণুতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দেশ ও জাতির চলমান সংকটের ঐক্যবদ্ধ উত্তরণ ঘটাতে হবে। অনৈতিক অর্থ লেনদেন-প্রচারণা-গুজবসন্ত্রাস সংহারে শিক্ষার পরিবেশসহ অর্থব্যবস্থার সকল ক্ষেত্রসমূহকে সচল করে স্বাভাবিক অবস্থায় দেশকে নিয়ে আসা দেশপ্রেমিক সকল নাগরিকের প্রধানতম কর্তব্য হওয়া উচিত। প্রতিটি দিন-ঘণ্টা-ক্ষণ অনুসারে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতির মানদ- নিরূপণ করে অবিলম্বে সকল ধরনের অরাজকতা-নৈরাজ্য অবিলম্বে বন্ধ করাই আপামর জনগণের গভীরতম প্রত্যাশা। 

    
লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

×