ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

আহতদের শয্যাপাশে প্রধানমন্ত্রী

মো. সাখাওয়াত হোসেন

প্রকাশিত: ২১:২১, ৩ আগস্ট ২০২৪

আহতদের শয্যাপাশে প্রধানমন্ত্রী

আহতদের শয্যাপাশে প্রধানমন্ত্রী

কোটা আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতায় অসংখ্য মানুষ হতাহত হয়েছে। আহত হয়ে অনেকেই হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। বিভিন্ন পেশা-শ্রেণির মানুষ নিহত হয়েছেন। পুলিশ সদস্যরাও নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অসংখ্য। এদিকে রাষ্ট্রীয় স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপক আকারে। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর এমন ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের নজির দেখা যায়নি। হামলাকারীরা নৃশংস উপায়ে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। সাধারণ মানুষ ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েনসহ কার্ফু জারি করেছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ রয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এক কথায় একটা প্রতিকূল পরিবেশে আমরা বসবাস করছি। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগে ধ্বংসস্তূপে পতিত স্থাপনা দেখতে যাওয়ায় অনেকেই বলাবলি শুরু করেছে, আহতদের কেন দেখতে যাচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী?

ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে এ কথাটি ব্যাপকভাবে চাউর করেছে একটি গোষ্ঠী। প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসারত আহতদের যখন দেখতে গেলেন, দেখতে গিয়ে যথাযথ সহযোগিতার আশ্বাস দিলেনÑ তখন তাদের মুখে কুলুপ এঁটে গেছে। ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু আহতদের দেখার পর সাংবাদিকদের জানান, সবার জন্য সমান চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। যারা বলেছেন আহতদের কেন প্রধানমন্ত্রী দেখতে যাচ্ছেন না- এসবের পর তারা একেবারেই নিশ্চুপ। সরকারের উচিত হচ্ছে আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে পরিবারকে যথাযথ সহায়তা প্রদান করা। 
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় আহতদের দেখতে রাজধানীর ঢাকা মেডিক্যাল, সোহরাওয়ার্দী, কুর্মিটোলা ও অন্যান্য হাসপাতালে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাদের শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসপাতালগুলোতে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। প্রধানমন্ত্রী আহত ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের ওপর চলা বর্বরতার বর্ণনা শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলেন।

হাসপাতালে ভর্তিদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশও দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে আহতরা মানবিক মনোবল ফিরে পাবে এবং তাদের পরিবারের পাশে সরকার আছে এটি ভেবে আশ্বস্ত হবে। সরকার ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে। এখন যদি কেউ কোনো কারণে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে কথা বলার সুযোগ তৈরি হবে।

অন্যথায় কারণ ব্যতিরেকে দোষারোপ করার কোনো সুযোগ নেই। তদুপরি একটি গোষ্ঠীই রয়েছে যারা দোষারোপ করতেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে সরকারবিরোধী প্রচারণায়। এ বিষয়টিকেও অনুধাবন করে বুঝতে হবে সংশ্লিষ্টদের। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিদের, যারা আগামীতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে।   
প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি অনেক কিছুকে সামনে রেখেই ঠিক করেন নিরাপত্তা কর্মীরা, অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায়। তদুপরি গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যেকটি সফরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং করা হয়। সব বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি নির্ধারিত হয়ে থাকে। আবার কিছু কিছু সময়ে নিরাপত্তার খাতিরে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার প্রতিফলন দেরিতে ঘটতে পারে। যাই হোক, আমরা সবসময় জানি, দুস্থ ও নিপীড়িতদের জন্য  প্রধানমন্ত্রীর দরজা সবসময়ই খোলা।

মানুষের কল্যাণে বিশেষ করে যারা অনগ্রসর, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী কিংবা যারা সমাজে ঝুঁকির মধ্যে অবস্থান করছে, বয়স্ক ও বয়োবৃদ্ধ, বিধবা ও প্রান্তিক কৃষক, প্রত্যেকের জন্য বিভিন্ন স্তরে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে, আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রশংসিত হয়েছেন। যেমনÑ আশ্রয়ণ প্রকল্প, কমিউনিটি ক্লিনিক ইত্যাদি। এসব তৃণমূল পর্যায়ে বাস্তবায়ন করে সরকার সফলতা দেখিয়েছে। 
একদল লোকের মনে বদ্ধমূল ধারণা, নিজেরা যে বিষয় সম্পর্কে জানে সেটিই সঠিক এবং এর বাইরে যে কিছু থাকতে পারে, নতুন চিন্তার প্রতিফলন দেখার সুযোগ থাকতে পারে কিংবা বিকল্প কৌশল তথা পরিকল্পনার বিস্তর অভিমত থাকতে পারে, সে বিষয়ে তাদের চিন্তাচেতনার জায়গা একেবারেই ক্ষীণ। অবশ্য সবসময়ই একঘেয়েমি চিন্তা কখনোই ভালো নয়। শুভময় বুদ্ধি ও চিন্তার দক্ষতা থাকা উচিত প্রতিটি মানুষের মধ্যে। যারা জেনে বুঝে কাউকে বিপদে ফেলার কিংবা কাউকে নিয়ে তিরস্কার করার অভিপ্রায়ে মত্ত থাকে, তাদের বিয়য় একেবারে আলাদা। এ শ্রেণির মানুষের অভাব নেই বাংলাদেশে। এ বিষয়টি তরুণ প্রজন্মকে জানতে হবে। 
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে যে ক্রান্তিকাল বাংলাদেশ অতিক্রম করছে, এ সময়ে পরিস্থিতি বুঝে মতামত প্রদান করা উচিত। এছাড়া যাদের অন্যদের প্রলুব্ধ করার ক্ষমতা রয়েছে, তাদের উচিত প্রকৃত সত্য মানুষের কাছে উন্মোচিত করা। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশব্যাপী সৃষ্ট সহিংসতাকে রোধ করতে সবারই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা উচিত। মনে রাখা উচিত, এ দেশের সম্পদ জনগণের। রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করতে পাড়া-মহল্লাব্যাপী কমিটি গঠনের মাধ্যমে সরকারি সম্পত্তি বিনষ্টের প্রতিবাদে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। 
সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী যে অচলাবস্থা বিরাজ করছে, তা নিরসনে প্রতিরোধ ও সহনশীলতার বিকল্প নেই। উল্টো গুজব সৃষ্টি করে পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে একটি বিশেষ গোষ্ঠী সুবিধা গ্রহণের পাঁয়তারায় মত্ত। সহনশীলতার মানে হচ্ছে পারস্পরিক ক্ষোভ ও বিচ্ছেদ ভুলে শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গঠনের স্বার্থে কাজ করে যেতে হবে। দলাদলি ও গ্রুপিং ভুলে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে রাজনৈতিক মাঠে।

যেহেতু একটি ক্রান্তিকাল চলছে, সেহেতু রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা জরুরি হয়ে পড়ছে। রাষ্ট্রের স্থিতির সঙ্গে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক গতির একটি সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক কাঠামোর সকল ক্ষেত্র স্থবির হয়ে পড়েছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে। এর ফলে, বিদেশী বিনিয়োগের প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। বিশ্ব শ্রমবাজারে অর্থনৈতিক ক্রান্তিকালের ওপর প্রভাব পড়বে দীর্ঘকাল। 
প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রের সকল দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বহুমুখী চাপকে মোকাবিলা করতে হয়। দেশিবিদেশী ষড়যন্ত্রকে সামলে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব দিতে হয়। তাছাড়া গুজবের ভয়াবহতায় দেশবিরোধী অপশক্তি রাষ্ট্রকে অকার্যকর করতে তৎপর। একাত্তরের পরাজিত শক্তি শকুনের ন্যায় জাতীয় পতাকা খামচে ধরতে চেয়েছে। দেশবিরোধী কাজে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করতে তৎপরতা দেখিয়ে চলছে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শত্রুরা।

কেবল তাই নয়, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার উদ্যোগকে সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন জানানো কর্তব্য। রাষ্ট্রীয় সম্পদ দেশের সম্পদ। দেশের সম্পদ নষ্টকারীরা দেশদ্রোহী। দেশদ্রোহীদের রক্তচক্ষুকে পদদলিত করতে হবে। আঁধারের পর আলো আসবেই। আলোর সন্ধানে ছুটতে হবে সবাইকে সামনের দিকে। 


লেখক : সহকারী অধ্যাপক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

×