ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

হামাস-ফাতাহ চুক্তি

প্রকাশিত: ২১:৫৮, ২৬ জুলাই ২০২৪

হামাস-ফাতাহ চুক্তি

.

মধ্যপ্রাচ্য সংকট যখন আরও ঘনীভূত হচ্ছে তখন একটি সুসংবাদ স্থান পেয়েছে বৈশ্বিক গণমাধ্যমে। গাজায় যুদ্ধ পরবর্তী ফিলিস্তিনে একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনে ঐতিহাসিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে প্রতিদ্বন্দ্বী দল হামাস ফাতাহ আন্দোলন। অবশ্য এর আগেও বেশ কয়েকবার এই দুটি গোষ্ঠী ফিলিস্তিন ভূখন্ডে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আলাপ-আলোচনা চালিয়েছে। তবে নানা কারণে সেটি সম্পন্ন হতে পারেনি। এবারে চীনের মধ্যস্থতায় বেজিংয়ে হামাস-ফাতাহ আন্দোলনসহ অন্তত ১২টির বেশি দল স্বাক্ষর করেছে চুক্তিটিতে। এর মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য ভিত্তি তৈরি করতে চান সংশ্লিষ্টরা। উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনি রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে ফাতাহ আধিপত্যশীল ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ হামাসের মধ্যে বিরাজমান। যার পুরোপুরি সুযোগ নিয়েছে প্রতিপক্ষ রাষ্ট্র ইসরাইল। চুক্তির ফলে ফিলিস্তিন গাজা ভূখ- একটি জাতীয়তাবাদী সরকার গঠনের পথ সুগম হতে পারে।

সম্প্রতি কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত চুক্তিটি। ফিলিস্তিনিরা নিজেদের মধ্যে নানা মতবাদে বিভক্ত। যে কারণে ফিলিস্তিনিরা জাতিগত আত্মনিয়ন্ত্রণের সুবিধা নিতে পারছে না। সেক্ষেত্রে তারা একত্রিতভাবে  জোটবদ্ধ হতে পারলে তা ইসরাইলের জন্য রীতিমত হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।  সে অবস্থায় সময়সাপেক্ষ হলেও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হতে পারে অদূর ভবিষ্যতে। এটাও সত্য যে, ফিলিস্তিনে হামাসের কোনো ভূমিকা  দেখতে চায় না ইসরাইল। তারা যে কোনো মূল্যে হামাসকে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর। যে কারণে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়ও গাজার খান ইউনিসে নির্বিচারে হামলা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে দেশটি। গত অক্টোবর থেকে ইসরাইলের বর্বর হামলায় ৩৯ হাজার ১৪৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯০ হাজারের বেশি। নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ১৬ হাজারের বেশি শিশু এবং ১১ হাজারের বেশি নারী।

মধ্যপ্রাচ্য সংকট আরও ঘনীভূত জটিল হচ্ছে ক্রমশ। এটি এখন আর শুধু ইসরাইল গাজার মধ্যে সংঘটিত হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। দুপক্ষের মধ্যে গত বছর অক্টোবর থেকে চলমান এই সংঘাত-সংঘর্ষে সর্বশেষ আগুনে ঘি ঢেলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরান, ইরাক সিরিয়ার ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালানোর মাধ্যমে। জডার্নে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলায় সেনা নিহতের প্রতিশোধে এই হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ইরানও পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছে, এসব হামলার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। দিয়েছেও ড্রোন হামলার মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এর ফলে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে বহুমুখী সংঘাত-সংঘর্ষ, এমনকি যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার সমূহ শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাবও পাস হয়েছে সর্বসম্মতিক্রমে। যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের নেতৃত্বে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় নতুন করে শুরু হয়েছে যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ। বন্দি জিম্মিদের মুক্তির জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে দেশটি। হামাসপ্রধান ইতোমধ্যে জিম্মি মুক্তির ব্যাপারে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। হামাস-ফাতাহ ঐতিহাসিক চুক্তি একটি বড় অগ্রগতি। তবে এর জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কেও এগিয়ে আসতে হবে শান্তির বার্তা নিয়ে। ফিলিস্তিন সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, যেটি মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে।

×