ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

কোনো ষড়যন্ত্রই টিকতে পারেনি

ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

প্রকাশিত: ২১:০২, ২৫ জুলাই ২০২৪

কোনো ষড়যন্ত্রই টিকতে পারেনি

বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বাঙালি জাতির রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারক বাহক এবং গণমানুষের দল হিসেবে তিল তিল করে গড়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রাম ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী একমাত্র সংগঠন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের শক্তি জনগণ, কোনো পরাশক্তি নয়। কোনো পরাশক্তি মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেনি। আওয়ামী লীগের হাত ধরেই রচিত হয়েছে পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রাম।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অগ্রযাত্রার ইতিহাস আর আওয়ামী লীগের ইতিহাস একই। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই রাজনৈতিক দলটির যাত্রা শুরু হয়। পরে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটাতে এর নাম ‘আওয়ামী লীগ’ করা হয়। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠার পর থেকে টানা ৭৪ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ইতিহাস সংগ্রাম, সৃষ্টি, অর্জন ও উন্নয়নের ইতিহাস। আওয়ামী লীগ এর ইতিহাস মূলত স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস। 
স্বাধীন বাংলাদেশ যেমন বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের হাতে তৈরি, তেমনি আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার অদম্য  নেতৃত্বের কারণেই আমরা পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু যে দলের ভিত্তি গড়ে দিয়ে গেছেন, সেই দলকে এখনো সফল নেতৃত্ব দিয়ে বহন করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। একাধিকবার ঘাতকের বুলেট-বোমার সামনে নিজের জীবনকে বিপন্ন করতে হয়েছে, তবু দলের রক্ষাকবচ হয়ে থেকেছেন তিনি।

এ কারণেই বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি আবেগের নাম। স্বাধীনতার পর থেকে ৫৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সাড়ে ২৫ বছর দেশশাসন করার সুযোগ পেয়েছে।
আওয়ামী লীগের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে বাংলার জনগণকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে স্বাধিকার আদায়ের জন্য ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেন। সেই ৬ দফা আন্দোলনের পথ বেয়েই ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচনে বাঙালির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ ও ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সফল নায়ক ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

দীর্ঘ পথপরিক্রমায় দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন রাজনৈতিক দলটিকে অনেক চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর অনেকটা অস্তিত্ব সংকটেই পড়ে আওয়ামী লীগ। দলের ভেতরেও শুরু হয় ভাঙন। এর মধ্যে আবদুল মালেক উকিলÑ জোহরা তাজউদ্দীনের দৃঢ়তায় সংকট কাটিয়ে উঠতে শুরু করে দলটি। ১৯৮১ সালে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেশে ফিরে এক দশক ধরে সারা দেশ ঘুরে দলকে সংগঠিত করেন তিনি। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বেই ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আবার সরকার গঠন করে দলটি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হয়। এরপর ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও একটা বড় শূন্যতা দিয়ে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ছিল না কোনো সংগঠিত সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী। এমনকি বেসামরিক প্রশাসন চালানোর মতো উপযুক্ত অবকাঠামো ছিল না, ছিল না সুসংগঠিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক, নিজস্ব মুদ্রা ব্যবস্থা। বরং এর বিপরীতে ছিল ক্ষুধার্ত কোটি মানুষ আর দেশজুড়ে ঘরবাড়ি সম্পদহারা সর্বস্বান্ত, দুস্থ, বাস্তুহারা মানুষের হাহাকার। যুক্তরাজ্য, চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত থাকায় বিদেশ থেকে পর্যাপ্ত কোনো সাহায্য আসছিল না।

এরকম একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের হাল ধরেছিলেন বঙ্গবন্ধু শক্ত হাতে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের যে প্রক্রিয়া বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সূচিত হয়েছিল, তার সুফল বাংলাদেশ পেতে শুরু করেছিল মাত্র দু-আড়াই বছরের মধ্যে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ প্রায় সাড়ে তিন বছর সময়কালে বঙ্গবন্ধু চষে বেড়িয়েছেন সমগ্র বাংলাদেশ। বাংলার জনপদে ঘুরে ঘুরে প্রত্যক্ষ করেছেন এ দেশের মানুষের জীবনযাপন।

অনুভব-উপলব্ধি করতে চেয়েছেন তাদের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার অনুভূতি। কীভাবে দেশটিকে ক্রমেই এগিয়ে নেওয়া যায় সমৃদ্ধির দিকে তার পরিকল্পনা করেছেন এবং খুব দ্রুতই সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। সারাদেশের সুষম উন্নয়নের দিকে তার ছিল বিশেষ নজর। কোনো অঞ্চলকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদ ও এলাকার উন্নয়নে কী করা প্রয়োজন তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং নতুন নতুন চিন্তাভাবনা, ধারণার উন্মেষ হয়েছে এভাবে। ¯্রফে জনসভায় বক্তৃতা দিয়ে নয়, উন্নয়নের নতুন জোয়ার সৃষ্টির পেছনেই বঙ্গবন্ধুর সময় কেটেছে তখন।

দৃঢ়তার সঙ্গে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পথ অতিক্রম করে দেশের বুভুক্ষু মানুষের জন্য আহারের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। ভেঙে পড়া প্রশাসনিক কাঠামোকে পুনর্গঠন করে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছিলেন। বিধ্বস্ত রাস্তঘাট, পুল, কালভার্ট তৈরির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়ে প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতার ব্যবস্থা করেছিলেন।

৪০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে সব প্রাথমিক শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু ওই কয়েক বছর সময়ে। হুমড়ি খেয়ে পড়া বিদ্ধস্ত ব্যবসাবাণিজ্য চাঙা করে তুলেছিলেন তিনি অসাধারণ কৌশল প্রয়োগে। জাতির জনকের নৃশংস হত্যার মধ্য দিয়ে দেশটি আবারও গহিন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। 
আজকের বাংলাদেশের যে সমৃদ্ধি, উন্নয়নের মহাসোপানে যে অভিযাত্রা তার সূচনা করেছিলেন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরে এগিয়ে চলেছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা। তাঁর অসাধারণ বিচক্ষণতা দেশকে ক্রমেই আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়, দৃপ্ত সাহসী পদক্ষেপ; সর্বোপরি দেশের মানুষের প্রতি অপরিসীম মায়া ও ভালোবাসা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।

বলতে দ্বিধা নেই, জাতির পিতার দেখানো পথ ধরে এগিয়ে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বাংলাদেশ। পঞ্চাশ বছর আগেই বঙ্গবন্ধু উন্নয়নের যে নতুন চিন্তাধারার সূচনা করেছিলেন তা এখনো অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তার অসাধারণ প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি এবং দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আকুলতা প্রতিটি পদক্ষেপ ও কর্মকা-ে বারবার ফুটে উঠেছে।

বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরাও বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন ভাবনার অসাধারণত্ব অকপটে স্বীকার করেছেন। উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই স্বপ্ন পূরণের পথ ধরে তিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন। নির্মম ঘাতকের বুলেট সেই পথ চলাকে রুদ্ধ করে দিলেও বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথ দেখিয়ে দিয়ে গেছেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবার সেই পথ ধরেই এগোচ্ছে। সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে বাংলাদেশ এখন এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে।

১৪ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ। বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ আজ সব সূচকে অগ্রগতি, সাফল্য আর উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়েই দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর যারা বলেছিল- বাংলাদেশ হবে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’, আজ তারাসহ গোটা বিশ্বই বলছে- মাত্র এক দশকেই বাংলাদেশ উন্নয়নের বিস্ময়। গোটা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল আজ বাংলাদেশ।

সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, জঙ্গিবাদী দেশের কলঙ্ক ঘুচিয়ে বাংলাদেশ আজ পরিচয় পেয়েছে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক-শান্তির সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পতাকা উড়ছে আজ বাংলার ঘরে ঘরে। আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা এক যুগের বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার ক্লান্তিহীন পরিশ্রম, দেশপ্রেম, সততা-নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সঙ্গে দেশ পরিচালনার কারণেই বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান সম্ভব হয়েছে।

পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরেই তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের মহাসোপানে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগ এক ও অভিন্ন সত্তা। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের কাছে কোনো ষড়যন্ত্রই টিকতে পারেনি পারবে না।

লেখক : অধ্যাপক, উপাচার্য
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

×