ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

সমুদ্রসম্পদে বিনিয়োগ

-

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ২৫ জুলাই ২০২৪

সমুদ্রসম্পদে বিনিয়োগ

সম্পাদকীয়

ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গত ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছে তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকুয়াকালচার অ্যান্ড সি ফুড শো। এই আয়োজনে ১২টি দেশের ৫৪টি স্টল স্থান পেয়েছে। দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত অংশগ্রহণে বাংলাদেশের মৎস্য খাতের সমূহ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয় তিন দিনের সম্মেলনে।

উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ব্লু-ইকোনমি আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করার জন্য সুবিস্তৃত বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিভিন্ন সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে বিনিয়োগের জন্য স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মাছের রপ্তানি বাড়াতে মাছের সংগ্রহ, বিতরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে যথাযথ মান বজায় রাখতে হবে বৈশ্বিক রীতিনীতি ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের মাধ্যমে।

এ কথা বলার অবকাশ রাখে না যে, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন সমুদ্র সম্পদ- তেল-গ্যাস-খনিজ পদার্থ থেকে শুরু করে মৎস্য সম্পদ, সি উইড, শামুক, ঝিনুক, মুক্তা ইত্যাদি আহরণ ও রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। যার মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। এর পাশাপাশি সমুদ্রের পানি থেকে বিদ্যুৎÑহাইড্রো ইলেকট্রিসিটি উৎপাদনেও চলছে গবেষণাÑ যা আগামীতে মেটাতে পারে জ্বালানির অফুরন্ত চাহিদা। 
সুবিশাল বঙ্গোপোসাগরের বিপুল মৎস্য সম্পদ আহরণে টেকসই মৎস্য মজুদ, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা পরিচালনা এবং উপকূলীয় প্রান্তিক জেলেদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাস্তবায়ন করছে ১৮৯২ কোটি টাকার ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিরারিজ প্রজেক্ট’Ñযা বাস্তবায়ন হবে চার ধাপে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ হলে তা হবে বাংলাদেশের ব্লু-ইকোনমি বা নীল অর্থনীতির একটি বড় অগ্রগতি।
বাংলাদেশের সমুদ্র গর্ভের সম্পদ এখন পর্যন্ত প্রায় অনাবিষ্কৃত ও অব্যবহৃত। সীমিত পর্যায়ে কিছু পরিমাণ তেল-গ্যাস এবং মৎস্য সম্পদ আহরণ করা হলেও, এর পরিমাণ বঙ্গোপসাগরের অফুরন্ত সম্পদের তুলনায় খুব নগণ্য। এমনকি সমুদ্র সম্পদ সম্পর্কে জরিপ চালানোর উপযোগী আধুনিক জাহাজ পর্যন্ত নেই। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে ভারত এবং ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র এলাকায় (টেরিটোরিয়াল সি) অধিকার লাভে সফল হয়।

২০০ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ ও অন্যান্য সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার লাভ করে বাংলাদেশ। অথচ এই বিশাল অঞ্চলে কি পরিমাণ মৎস্য ও খনিজ সম্পদ রয়েছে সে সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। ব্লু-ইকোনমি বা সমুদ্রের নীল অর্থনীতি হিসেবে খ্যাত এই অঞ্চলের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৯টি মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ব্লু-ইকোনমি সেল। গভীর সমুদ্র এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও মৎস্য সম্পদ আহরণের জন্য ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বহুমুখী প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় ৯৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হবে অত্যাধুনিক মাল্টিডিসিপ্লিনারি জাহাজ। বাকি ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে অবকাঠামো উন্নয়নসহ গবেষণার কাজে। এসব মূল্যবান খনিজ উত্তোলন ও আহরণ সম্ভব হলে আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে সুনিশ্চিত।

×