ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

ছিনতাই প্রতিরোধ করুন

এস এ বিপ্লব

প্রকাশিত: ২১:০০, ২৪ জুলাই ২০২৪

ছিনতাই প্রতিরোধ করুন

ছিনতাই কোথায় হয় সেটা খুঁজে পাওয়া দায় হয়

ছিনতাই কোথায় হয় সেটা খুঁজে পাওয়া দায় হয়। তবে সবচেয়ে বেশি হয় আমাদের বাংলাদেশে। শুধু হয় বললে হবে এটা যেন এখন নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে মানুষের। তাই মানুষকে খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হয়। সারাক্ষণ একটা ভয় কাজ করে ভেতরে, এই বুঝি ছিনতাইকারী ধরল। কেননা ছিনতাইকারীর হাত থেকে গরিব-ধনী, উকিল, ডাক্তার, এমন কি এমপি-মন্ত্রীরাও ছাড় পান না। ওরা ওতপেতে বসে থাকে সুযোগ পেলেই নিয়ে যায়।

সত্যি কথা বলতে কি আমি নিজেই কয়েকবার ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলাম। তাই ছিনতাইকারী সম্পর্কে কিছু বলতে আমার কথা দিয়েই শুরু“করছি। কারণ আমি এ পর্যন্ত দুইবার বার ছিনতাইকারী কবলে পড়েছিলাম। প্রথম দিন কোনো এক সন্ধ্যায় যখন রিকশা করে নিতাইগঞ্জ থেকে উকিলপাড়া আসতেই আমার রিকশা তিনজনে আটকে বলে ভাই আপনি কি ভালোভাবে যেতে চান যেখানে যাচ্ছেন। আমি বললাম হে তাতো অবশ্যই। তখন তারা বলল তাহলে আপনার সঙ্গে যা আছে দিয়ে দেন। কি আর করা ওরা তো তিনজন আমি একা আবার ওদের সঙ্গে ছুরি, অস্ত্র ইত্যাদি।

পকেটে হাত দিয়ে বের করে দেখে যে, ফোন আছে কিন্তু বাটন সেট আর ফোন ফাটা। তাই ফোন নিল না। তবে টাকা যা পেয়েছিল তাই নিয়ে আমাকে ছেড়ে দিল। সেদিন দারুণ শিক্ষা হলো আমার। কাউকে যে চিৎকারে ডাকব সেই পরিস্থিতি ছিল না। অনেক ভয় পেয়েছিলাম সেদিন কারণ এটাই প্রথম ছিনতাইকারীর কবলে পড়া। এরপর থেকে আমি আর রিক্সায় চড়ি না। যেখানে যাই হেঁটে বা অটোতে করে। কিন্তু হেঁটে চলাফেরা করতেও গিয়েও দেখি ছিনতাই কারি এত বেড়েছে যে রিক্সা নয় হেঁটে যাওয়া পথিক ও রেহাই পায় না। আমি আমার দ্বিতীয় ঘটনা বলছি, প্রায় চার মাস পর আবারও ছিনতাইকারী কবলে পড়ে থাকি। 
সেদিন হেঁটেই যাচ্ছিলাম কালি বাজার মোড়ে আসতেই কয়েকজন আমার চারপাশ গিরে ফেলে। একজন আমার পেছন দিক দিয়ে অস্ত্র দিয়ে ঠেকা দেয়। আমি কিছু বলার আগেই আমার পকেট থেকে টাচ ফোনটা বের করে নিয়ে নিল। টাকাও যা ছিল নিয়ে যায়। তবে সেদিন টাকা থেকে বেশি কষ্ট লেগেছে ফোন নিয়ে যাওয়াতে, কারণ এটা ছিল আমার প্রথম টাচ ফোন কেনা। দশ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। শিক্ষা হলো চরম আর বুঝলাম ছিনতাইকারী কবলে পড়লে মানুষ কত অসহায় হয়ে পরে।

তখন আর হিতাহিত কি করবে তা মাথায় আসে না। তখন নিজের জীবন বাঁচানো হলো সবচেয়ে বড় ফরজ। তাই যা আছে দিয়ে দিতে বাধ্য হয়। কেননা ছিনতাইকারীদের বুকপিঠ নেই। ওরা দশ-বিশ টাকার জন্য জীবন শেষ করে দিয়ে থাকে। আরও বুঝলাম যে, ওরা একাকী মানুষ কে ফলো করে, সে হোক রিক্সায় বা হাঁটা চলাতে। ছিনতাইকারীর ঘটনা সব জায়গাতেই ঘটে থাকে। তবে বেশি মনে হয় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরে। ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে কত মানুষ নিঃস্ব হয়েছে তার হিসাব নেই।

মাঝে মাঝে মনে হয় ছিনতাইকারী পেছনে কারও হাত আছে। তা না হলে দিনকে দিন এতো ছিনতাই বাড়ছে। আর একটা বিষয় কি ছিনতাই যারা করে তাদের বেশির ভাগ কিশোর, গরিব, নেশাগ্রস্ত, অশিক্ষিত তো আছেই। অশিক্ষিতটা জোর দিয়ে না বলার কারণ হলো, অনেক শিক্ষিত যুবক চাকরি না পেয়ে ও এই পথ খুঁজে নেয়। আর বর্তমান যেভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বেকার, গরিব, অসহায়রা চুরি, ছিনতাই ছাড়া যেন আর কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছে না। এই ছিনতাইকারীর কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। দূর করতে হবে বেকারত্ব, পথে পথে পুলিশ বক্স বসাতে হবে, সিসি ক্যামেরা চালু করতে হবে প্রত্যেক রাস্তায়।

বিশেষ করে ঈদ বা দুর্গা পূজা বা বিভিন্ন উৎসবের সময় ছিনতাই আরও ব্যপক আকার ধারণ করে থাকে। গ্রাম থেকে শহরে এসে সাধারণ মানুষ ওদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। আর যদি নারী হয় তাহলে তো আর কথাই নেই। তাই ছিনতাইকারীর সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তা না হলে সাধারণ মানুষের জীবন নিরাপত্তার ব্যবস্থাপনা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। যারা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত বা সহযোগিতা করছে তাদের কেউ ছাড় দেওয়া যাবে না। ছাড় যারা পায় তাদের সাহস আর বেড়ে যায়। একবার ছাড় পেয়ে গেলে তখন ওদের এসব বিষয় তুচ্ছ মনে হয়।

ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে আইন-আদালত এবং মানুষকে হতে কঠিন, ত্যাগী। অর্থাৎ বিচার যেন হয়ে থাকে এমন হতে হবে। এক্ষেত্রে কে কার সন্তান, ভাই ইত্যাদি দেখার প্রয়োজন নেই। তাহলে সাধারণ মানুষ একটু নিঃশ্বাস নিতে পারবে। শান্তি চলাফেরা করতে পারবে। তা না ছাড়া যে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?  রাস্তাঘাটে তো আর চলাফেরা করা যাবে না।

নারায়ণগঞ্জ থেকে

×