ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

রাসেলস ভাইপারের প্রতিষেধক

-

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ২৪ জুলাই ২০২৪

রাসেলস ভাইপারের প্রতিষেধক

সম্পাদকীয়

সম্প্রতি বিভিন্ন অঞ্চলে চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার সাপের উৎপাত বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যাও। এতে দেশব্যাপী সাপ নিয়ে আলোচনা ও আতঙ্ক দুটোই ছড়াচ্ছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ায় এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে যে কোনো সাপ দেখলেই মারা হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। নির্বিচারে সাপ নিধন পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাবসহ খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে আরও অনেকের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ব্যাপক হারে সাপ নিধন পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এমনটি কখনো কাম্য নয়। বরং যে কোনো ধরনের সাপে কাটলে আতঙ্কিত না হয়ে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে গিয়ে অ্যান্টিভেনম নেওয়াই উত্তম। মূলত সাপের বিষ থেকেই তৈরি করা হয় অ্যান্টিভেনম। দেশে এখন পর্যন্ত রাসেলস ভাইপারের বিষের শতভাগ কার্যকরী কোনো প্রতিষেধক নেই। এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে বাংলাদেশে রাসেল ভাইপারের অ্যান্টিভেনম তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে প্রতিষ্ঠা করা হয় ভেনম রিসার্চ সেন্টার। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে সম্প্রতি চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে এই অ্যান্টিবডি উন্নয়নের কাজ থমকে গেছে। ইতোমধ্যে এই অ্যান্টিবডি উন্নয়নের কাজে ৫০-৬০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় না করায় গবেষণার কাজে অগ্রগতি হচ্ছে না। অবশ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। 
বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে অ্যান্টিভেনম তৈরি হয় না বিধায় সঠিক সময়ে অনেক সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা প্রদান সম্ভব হয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে, সাপের কামড়ের রোগীর চিকিৎসার জন্য স্থানীয় সাপ থেকে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হলে তা সবচেয়ে কার্যকর হয়। সংস্থাটির তালিকায় অ্যান্টিভেনম একটি এসেনসিয়াল ড্রাগ বা অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ। যে কোনো বিষধর সাপ কাটার পর অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ জরুরি হয়ে পড়ে। অন্যথায় রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বেশি। 
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ২০২২ সালের সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর পাঁচ লাখের বেশি মানুষকে সাপে কামড়ায়। এর ভেতর ছয় হাজারের বেশি মানুষ মারা যান। বর্তমানে সাপে কাটা মানুষের চিকিৎসায় প্রতিবেশী দেশ ভারতের অ্যান্টিভেনম ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের বিষধর সাপের বিষ ভারতীয় সাপের থেকে কিছু আলাদা। অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয় সাপের প্রতিষেধক পুরোপুরি কার্যকর হয় না।

ভৌগোলিক দূরত্ব যত বেশি হয়, তত অ্যান্টিভেনমের সক্ষমতা কমে। তাই নিজ দেশের সাপের বিষ থেকে তৈরি অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করতে পারলেই এর কার্যক্ষমতা হবে শতভাগ। মৃত্যুর হারও কমে আসবে। কাজেই বিষাক্ত সাপে কাটা রোগীদের বাঁচাতে দেশীয় সাপের বিষ থেকেই অ্যান্টিভেনম তৈরি করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অর্থ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসবে বলেই প্রত্যাশা।

×