ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

স্বাভাবিক জীবনযাত্রার প্রত্যাশা

-

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ২৪ জুলাই ২০২৪

স্বাভাবিক জীবনযাত্রার প্রত্যাশা

সম্পাদকীয়

কার্ফুর চতুর্থ দিনে রাজধানীসহ সারাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি ছিল শান্ত। কোথাও কোনো সহিংসতা কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। গতকাল সরকারি অফিস-আদালত খুলে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে খুলেছে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ বেসরকারি অফিসগুলো, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট। রপ্তানিতে শীর্ষস্থান দখলকারী পোশাক কারখানাগুলোও খুলেছে। কার্ফুও শিথিল করা হয়েছে নাগরিকদের অফিস-আদালত ও শিল্পকারখানায় যাতায়াতের জন্য। খুলেছে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।

অচলাবস্থার পাঁচ দিন পর ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, তবে সীমিত পরিসরে। বাসসহ যানবাহন চলাচল বেড়েছে বহুলাংশে, যদিও তা এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত নয়। তবে প্রাইভেটকার, রিকশা, সিএনজিসহ ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচল করছে প্রায় অবাধে। সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে পণ্যবাহী ট্রাক ও লঞ্চ-স্টিমার চলাচল। বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ব্যাংকগুলোতে লেনদেনও চলেছে সীমিত সময়ের জন্য। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চলাচলের চাপ বেড়েছে। সুবিধামতো দূরপাল্লার বাসগুলোও চলছে। সার্বিক অবস্থা দৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, খুব শীঘ্রই জনজীবনে স্বাভাবিক সচলতা ও কর্মপরিবেশ ফিরে আসবে। 
আপিল আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির পর কোটা আন্দোলনকারীরা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে সরকারের কাছে চার দফা দাবি জানিয়েছে সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য। তারা যে চার দফা দাবি উপস্থাপন করেছে, সরকার সেগুলোর বাস্তবায়ন শুরু করেছে ইতোমধ্যে। যেমনÑ পর্যায়ক্রমে কার্ফু প্রত্যাহার, ইন্টারনেট পুনর্বহাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া, সর্বোপরি কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের নিরাপত্তা বিধান করা।

সরকার বরাবরই বলেছে- যেসব ধ্বংসাত্মক কার্যাবলি দেশব্যাপী ঘটেছে, সেগুলোর সঙ্গে শিক্ষার্থীরা জড়িত নয় কোনোভাবেই। তৃতীয় কোনো অপশক্তি এসব ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়েছে। কোটা আন্দোলনকারীরাও জোর দিয়ে বলেছে, কোনো অপতৎপরতার সঙ্গে তারা জড়িত নয়। এসবের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তারা। অন্যদিকে রায় ঘোষণার শেষে প্রধান বিচারপতিও শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে তার আগে সব বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরাপত্তার স্বার্থে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা জরুরি।

তদুপরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণে সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, কোটা আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সে অবস্থায় সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পথ অবরুদ্ধ হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। এক্ষেত্রে দুপক্ষের মধ্যে কোনো দূরত্ব কিংবা সন্দেহ-অবিশ্বাস পোষণের কোনো কারণ নেই। সর্বাগ্রে চাই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, যা জনজীবন সচল ও স্বাভাবিক রাখার জন্য অপরিহার্য। সে জন্য আপাতত উভয় পক্ষকে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় একযোগে কাজ করতে হবে।
গত কয়েক দিনের কোটা আন্দোলন এবং পরবর্তীতে এটি সহিংস ও সংঘাতপূর্ণ হয়ে ওঠায় সবচেয়ে কষ্ট ও দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। দৈনন্দিন আয়রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা রয়েছেন সমূহ বিপাকে, প্রায় অনাহারে অর্ধাহারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। তবে সরকারের একার পক্ষে সব সম্ভব নয়। এর জন্য সমাজের বিত্তবান শ্রেণিসহ উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসা আবশ্যক। দ্রুত আইনশৃঙ্খলাসহ সর্বত্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। তবেই দেশবাসীর মধ্যে ফিরে আসবে শান্তি ও স্বস্তির সুবাতাস।

×