সম্পাদকীয়
দেশের সেরা রপ্তানিকারকদের হাতে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রদান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনয়নসহ বিবিধি পণ্য রপ্তানির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। উল্লেখ্য, ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পেয়েছে ৩২ খাতের মোট ৭৭টি প্রতিষ্ঠান। তবে সব খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফি’ আলাদা স্বর্ণপদক পেয়েছে তৈরি পোশাক খাতে রিফাত গার্মেন্টস, যেটি হা-মীম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।
প্রতিবারই দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষস্থানটি দখল করে থাকে তৈরি পোশাক শিল্প। এর পরেই চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের অবস্থান। তবে এ দুটো পণ্যের রপ্তানি আয় পোশাক শিল্পের তুলনায় অনেক কম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৈরি পোশাক শিল্পে রং ও কাপড়ের বৈচিত্র্যসহ নকশা ও ডিজাইনে বৈচিত্র্য আনারও আহ্বান জানান পোশাক শিল্পকারখানার মালিকদের প্রতি। উদাহরণত বলা যায়- মধ্যপ্রচ্যের উপযোগী পোশাক, রাশিয়ার চাহিদানুয়ায়ী পোশাক অথবা আফ্রিকার জন্য বিচিত্র রং ও বাহারি পোশাক তৈরি ইত্যাদি।
এর সারবত্তা হলো রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য, উপসাগরীয় অঞ্চল, আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি বাড়ানো। নতুন নতুন পণ্য রপ্তানিতে বাজারও অন্বেষণ করতে হবে। সম্প্রতি ব্রাজিল বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি রপ্তানিকারকদেরও এগিয়ে আসা বাঞ্ছনীয়। বর্তমান যুগ অর্থনৈতিক কূটনীতির যুগ। সেভাবেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকদেরও বিদেশে পার্টনার খুঁজে নিতে হবে।
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা খুব সীমিত। তৈরি পোশাক, চিংড়ি, পাট-পাটজাত পণ্য, চামড়া-চামড়াজাত পণ্য এক্ষেত্রে প্রধান ভরসা। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিভিন্ন অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানিতে দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রপ্তানি করে প্রায় হাজার কোটি টাকা অর্জিত হয়েছে করোনাকালের আগে। করোনার সময় এ দুটি পণ্যের রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলেও প্রধান আমদানিকারী দেশ চীন ও হংকং নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে।
করোনা ঝুঁকি এড়িয়ে বাংলাদেশ থেকে কাঁকড়া ও কুঁচিয়া নিতে চীন প্রটোকল স্বাক্ষরের তাগিদও দিয়েছে। রপ্তানির ক্ষেত্রে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি ও খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুসরণ করতে হবে।
আমরা আশা করব কাঁকড়া ও কুঁচিয়া রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে চীনা প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে জরুরিভাবে। এটি সম্ভব হলে বিশ্বে এ পণ্য দুটির রপ্তানি অন্তত দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ। এর পাশাপাশি জোর দিয়ে হবে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কীটনাশক ব্যতিরেকে শুঁটকি উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানির ওপর। জোর দিতে হবে কৃষিপণ্য-আম-কাঁঠালসহ অন্যান্য পণ্যেও। তবে রপ্তানি আয়ের যথাযথ হিসাব সংরক্ষণের জন্য একযোগে কাজ করতে হবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংককে। যাতে রপ্তানি আয়ের হিসাবে কোনো গরমিল না থাকে।