সম্পাদকীয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল বা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম চলমান। ত্রিমুখী সহিংস সংঘাত-সংঘর্ষ-গোলাগুলিতে ইতোমধ্যে ঝরে গেছে কয়েকটি তরতাজা প্রাণ। আন্দোলনে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ উঠেছে চরমেÑ রাজপথ-রেলপথ-বাংলা ব্লকেড ইত্যাদি কর্মসূচির কারণে। কোটা বাতিল বা সংস্কারের নামে যে সব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে এসে রাজপথ-রেলপথ অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছেন, তাদের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছেÑ হরতাল-অবরোধের নামে কোনো অবস্থাতেই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি বা জননিরাপত্তা বিঘিœত করা যাবে না।
কোটা বাতিল বা সংস্কারের সপক্ষে যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলন করছেন, তারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কোটা বজায় রাখার কথা বললেও মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কিছু বলছেন না। বরং স্বাধীন বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধসহ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে অনেককে বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে। বিষয়টি বর্তমানে সর্বোচ্চ আদালতে বিবেচনাধীন। সর্বোচ্চ আদালত এক মাসের স্থিতাবস্থার আদেশ সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
কোটা আন্দোলনকারীরা আদালতে গিয়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেন নিজেদের আইনজীবীর মাধ্যমে। তা না করে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ‘আমরা সবাই রাজাকার’ শীর্ষক প্ল্যাকার্ড বহন করে স্লোগান দিয়ে তারা রাস্তায় নেমে এসেছেন, যা প্রকারান্তরে স্বাধীন বাংলাদেশ, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবজ্ঞা বা কটাক্ষ করার বহির্প্রকাশ। বিএনপি-জামায়াত কোটা আন্দোলনকারীদের নিয়মিত ইন্ধন ও উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে।
এমতাবস্থায় আন্দোলনকারীরা নিজেদের স্বঘোষিত রাজাকার বলার মাধ্যমে কী আত্মপ্রসাদ বা পুলক অনুভব করছেন তা তারাই ভালো বলতে পারবেন। এটা কি আদৌ কোনো গৌরব বহন করে? শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাই বা নিজেদের সন্তানদের এমন ঘোষণায় কেমন অনুভব করছেন, সেটিও একটি প্রশ্ন। সন্তানরা না জানলেও তারা তো বিলক্ষণ জানেন মহান সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবগাথা ও আত্মত্যাগ।
সর্বোপরি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও দেশীয় দোসর জামায়াতে ইসলামী আলবদর, আলশামস, রাজাকার বাহিনীর নির্মম নিষ্ঠুর নৃশংস জুলুম হত্যা নির্যাতন খুন ধর্ষণ এসব সম্পর্কে। সেক্ষেত্রে তাদের সন্তানরা ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় রাজাকারের উত্তরাধিকার বহন করবে কেনÑ বিশেষ করে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী!
দেশের প্রগতিশীল নাগরিক সমাজসহ একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী সর্বোপরি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইতোমধ্যেই লিখিত বিবৃতিতে কোটা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এহেন অপকা-ের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে।
তদুপরি যে বা যারা মুক্তিযুদ্ধ ও একাত্তরের বীর শহীদদের সম্পর্কে আপত্তিকর ও অবমাননার বক্তব্য প্রদান এবং নিজেদের রাজাকার বলে পরিচয় ও স্লোগান দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে আইনের আওতায় বিচারের দাবি জানিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকারের ঠাঁই নেই। বিএনপি শাসনামলে মন্ত্রিসভায় রাজাকারদের স্থান দেওয়া হয়েছিল, যা দেশবাসী সমর্থন করেনি। দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণ হবে যাদের অবদানে সেই শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে বিতর্কিত সেøাগান প্রত্যাশিত নয়।